Kolkata Book Fair: সাল ১৯৯৭। সেবার কলকাতা বইমেলার থিম কান্ট্রি ফ্রান্স। ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়ামের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মণ্ডপ। বইমেলার উদ্বোধন করেন বিখ্যাত দার্শনিক জাঁক দেরিদা। শুরু থেকে সব স্বাভাবিক থাকলেই দুর্ঘটনা ঘটল পঞ্চম বা ষষ্ঠ দিন। বইমেলার ভিতর একটি খাবারের স্টল থেকে অসাবধানতাবশত আগুন ধরে যায়। দ্রুত ছড়িয়ে যেতে থাকে আশেপাশের স্টলে। মেলার মাঠে দমকলের গাড়ি ছিল। কিন্তু আগুন নেভাতে ব্য়র্থ হয়। ইতিমধ্য়েই বিশাল এলাকা জুড়ে আগুন ছড়িয়ে গেল। দমকল অফিস থেকে গাড়ি এল। আগুন নেভানো হল। কিন্তু ততক্ষণে পুড়ে ছাই দুই-তৃতীয়াংশ স্টল। প্রকাশক থেকে মেলার আয়োজক প্রত্যেকের মন ভারাক্রান্ত। কিন্তু তখনও বাকি ছিল মেলার ফিনিক্সের মতো জেগে ওঠা।
ছুটে আসেন ‘বইপাগল’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
মিত্র ও ঘোষ প্রকাশনার প্রাক্তন কর্ণধার সবিতেন্দ্রনাথ রায় তাঁর বইতে লিখছেন, মেলায় আগুন লাগার খবর সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসেছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তৎকালীন মন্ত্রী তথা ‘বইপাগল’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তখন পাবলিশার গিল্ডের সভাপতি সবিতেন্দ্রনাথ রায়। কলেজ স্ট্রিট অবশ্য় তাঁকে চেনে ভানুবাবু নামেই। সরাসরি তাঁর কাছে গিয়ে বুদ্ধবাবুর প্রশ্ন, ‘এখন কী করবেন ভানুবাবু?’ ভানুবাবু তখন বললেন, ‘দিন তিনেকের মধ্যে যদি সব স্টল সাজিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে আবার মেলা চালু করা যেতে পারে।’ কিন্তু বই আসবে কোথা থেকে? ভানুবাবুর উত্তর, দপ্তরী বাড়িতেই বেশি বই থাকে। এই তিন দিন সময় পেলে প্রকাশকরা বই বাঁধিয়ে ফের মেলায় নিয়ে আসতে পারবেন। কিছুটা ক্ষতিও সামাল দেওয়া যাবে।
আরও পড়ুন - কলকাতা বইমেলার এই স্টলে নিখরচায় তাবড় সাহিত্যিকদের বই! পাওয়া যাবে বাড়ি বসেই
পোড়া গন্ধ ঢাকল ফুলের টব
সবিতেন্দ্রনাথের লেখা থেকে জানা যায়, সেই সময় উপস্থিত ছিলেন আনন্দ পাবলিশার্সের বিখ্যাত প্রয়াত প্রকাশক বাদল বসু। তিনি সায় দিতেই বুদ্ধবাবুর তত্ত্বাবধানে শুরু হয়ে গেল ফের নির্মাণযজ্ঞ। ডেকোরেটার্সের লোক এসে ফের স্টল বাঁধতে শুরু করে দিল। বাঁধাইখানায় বই বাঁধাইও পুরো উদ্যমে শুরু। প্রতিদিনই মেলায় এসে স্টল নির্মাণের তদারকি করেছিলেন বুদ্ধদেব। বড়সড় অগ্নিকাণ্ড হওয়ায় পোড়া পোড়া গন্ধ থেকে গিয়েছিল। রাশি রাশি ফুলের টবের ব্যবস্থা করলেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী বুদ্ধবাবু। তিনদিনের মধ্যেই ব্য়বস্থাপনা শেষে ফিনিক্সের মতো প্রাণ ফিরে পেয়েছিল কলকাতা বইমেলা।
আরও পড়ুন - মেলা বই, মেলা পাঠক! বইমেলার হিসেব কি শেষমেশ মেলে বই পড়ার সঙ্গে
পুড়ে যাওয়া বইয়ের নিলাম
পুড়ে যাওয়া বইগুলো বাতিল করা হয়নি একেবারে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু পালিতের মতো তাবড় সাহিত্যিকেরা সেই বইগুলিও নিলামে তুললেন। বইমেলার দুর্ঘটনার স্মারক হিসেবে। তাদের এই মহতী কাজের সঙ্গী স্বয়ং বুদ্ধদেব। বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছিল ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকদের হাতে। পাশাপাশি সরকারের ঘর থেকে এসেছিল আর্থিক সাহায্য - ক্ষতির অনুপাতে। আগুন অধিকাংশ মেলাকে পুড়িয়ে ছাই করলেও শেষমেশ হাসি কেড়ে নিতে পারেনি। প্রশাসন, পাঠক, প্রকাশকদের সম্মিলিত উদ্যোগ ফিরিয়ে দিয়েছিল কলকাতা বইমেলার প্রাণ।