বাংলা নিউজ > টুকিটাকি > Lalon Song: চট্টগ্রামের ট্রেনে পড়ুুয়াদের গলায় লালনের গান! জীবনপথের ধুলো মাখামাখি দুই বাংলা

Lalon Song: চট্টগ্রামের ট্রেনে পড়ুুয়াদের গলায় লালনের গান! জীবনপথের ধুলো মাখামাখি দুই বাংলা

ট্রেনে কলেজ পড়ুয়াদের গান ব্যাপক ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। 

অনার্স পরীক্ষার শেষ দিন কলেজ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহরের ক্যাম্পাসের দিকে যাওয়ার ট্রেনে লালন সাঁইয়ের গান ধরলেন পড়ুয়ারা। দেখে নিন ভিডিয়ো। 

বহু শিল্পীর গানই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিরন্তর ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু এ গানের মাহাত্ম্যই যেন আলাদা। এর সঙ্গে মিশে রয়েছে গোটা বাংলার সুর, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গোটা বাংলার জীবনদর্শন, এর গায়ে মেখে রয়েছে গোটা বাংলার ধুলো। এমনই এক গান ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। গানটি গেয়েছেন বাংলাদেশের কলেজের পড়ুয়ারা।

সম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েক জন পড়ুয়া অনার্সের শেষ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ট্র্নে করে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহরের ক্যাম্পাসে। আর সেই যাত্রাপথেই তাঁরা ধরেছিলেন গান। তাঁদেরই একজন অর্ণব ভট্টাচার্য। তিনি গানের ভিডিয়ো রেকর্ডিংটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। তার পরেই এটি নিয়ে ব্যাপক উন্মাদনা তৈরি হয়েছে দুই বাংলা জুড়েই।

কী লিখেছেন অর্ণব? লিখেছেন, ‘আজ পরীক্ষা শেষ। অনার্সের শেষ ভাইবা পরীক্ষা আজই ছিল। পরীক্ষার সুবাদে সব শিল্পীরা প্রতি দিনের মতোই আজও এক সঙ্গে। তবে ক্যাম্পাস থেকে যেতে হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহরের ক্যাম্পাসে।’

সঙ্গে তাঁদের শিক্ষক অনাবিল ইহসানও ছিলেন বলে লিখেছেন তিনি। অনাবিল ইহসানের শেখানো লালন লাঁইয়ের গান গাইতে গাইতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন পড়ুয়ারা। অর্ণব লিখেছেন, ‘গাইতে গাইতে আমরা অগ্রসর হচ্ছিলাম আমাদের জীবনের অন্যতম এই যুদ্ধের সমাপ্তির পথে। হয়তো এভাবে আর হইচই হবে না কোনও দিন। জীবন কাকে কই নিয়ে ঠেকায় তাই এখন দেখার অপেক্ষা। কিন্তু বলতে হয়, এতগুলি বছর আমরা বেশ ভালোই যাপন করেছি। কিছু ঘটনা খুব পুলকিত করেছে, কিছু ঘটনা ব্যাথিত করেছে।আবার কিছু এমন ঘটনাও আছে যা সারা জীবনই হয়তো নাড়া দিয়ে যাবে। এত কিছুর পরেও আজ আমাদের একটা দুয়ার খুলতে যাচ্ছে। এই বা কম কী!’

এ পরেই গানের কয়েক লাইন লিখে দিয়েছেন এই পড়ুয়া। ‘বাহার তো গেছে চলে/ পথে যাও ঠ্যালা পেড়ে/ কোনও দিনে পাতাল ধাবা,/ তবু দেখি গেল না তোর/ ত্যাড়া চলন বদলোভা/ মন সহজে কি সই হবা’

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এর পরে অর্ণবের লেখায় উঠে এসেছে বাংলার জীবনদর্শও। তিনি লিখেছেন, ‘রূপের বাহার, যোগ্যতার অহমিকা, টাকা, কড়ি, বাড়ি গাড়ি সবই চিরতরে একদিন চলে যাবে নাগালের বাইরে। ইন্দ্রিয় পরিচালিত এই দেহ হবে অনুভূতিহীন। অসার পুতুলের মতো পরে থাকা এই দেহ মিশেও যাবে পৃথিবীর ধূলায়। এই চরম সত্যিটা তো আমরা জানি। তার পরেও জীবের কর্মের কারণে এই পৃথিবী ছিন্ন করতে পারে না সম্পর্ক। কোথাও একটু থেকে যায় স্মৃতির ছিটেফোঁটা।’

তাঁর কথায়, ‘দেহ যতদিন সচল আছে, অনুভূতি যতদিন সঙ্গ দেয়, ততদিন যেন মনে থাকে জীবনে জরিয়ে থাকা সবকিছুকে। জীবনে এগুলো ছাড়া আর আছেই বা কী! সবাই ভালো থাকুক, সবার সুমতি বজায় থাকুক। ভালোবাসা বেঁচে থাকুক। পৃথিবীর স্বার্থে সকল জীবন হয়ে উঠুক সৃষ্টিশীল। সৃষ্টির আনন্দে ভেসে যাক সব জরা যন্ত্রণা।’

এসব লেখের পরে আবেগ সামলে নিয়ে লেখা শেষ করেছেন। লিখেছেন, ‘উপরোক্ত ভাষণের মূল কারণ আজকের এই দিনের আবেগ। কথাগুলি স্বভাবতই সবার জানা, কিন্তু তারপরেও বলতে চাই, ‘হিসাব মিলল না’।’

অর্ণবের এই কথা মনে ধরেছে বহু বাঙালিরই। কিন্তু তার চেয়েও বেশি করে মনে ধরেছে তাঁদের গান। রইল সেই ভিডিয়ো।

চট্টগ্রামের ট্রেনে পড়ুয়াদের এই গান এখন দুই বাংলার সীমানা মুছে দিয়ে তুলে ধরেছে এক অভিন্ন জীবনবোধ। তার দিকে হাত বাড়ালেই কানের কাছে ফিসফিসিয়ে ওঠেন লালন। বলেন, কোনও দিনে পাতাল ধাবা, তবু দেখি গেল না তোর ত্যাড়া চলন বদলোভা, মন সহজে কি সই হবা?

বন্ধ করুন