কলকাতার পুজো আর জেলার মূলত বনেদি বাড়ির পুজোগুলোর মূল পার্থক্য কী বলুন তো? থিমের ঠেলা? না। সাপের মতো বিস্তৃত লাইন? একদমই না। মাইক বাজানো? খানিকটা ঠিক। তবে আসল হল, জাঁকজমক, আড়ম্বরহীন, ঝাঁ চকচকে চেহারার বদলে সাধারণ, ঐতিহ্য, অতীতের নিয়ম নীতি মেনে পুজো করা। আর এই সমস্ত জিনিস আজও মেনে চলা হয় সুরুল জমিদারবাড়িতে। সেখানে শহুরে কোলাহল, ডিজে, মাইকের শব্দ কিছুই নেই। আছে নিরিবিলি, শান্ত পরিবেশ যেখানে পূজিত হন উমা। আশপাশের বহু মানুষ এই জমিদারবাড়ির পুজো দেখতে আসেন।
এখানে গেলেই চোখে পড়বে ঠাকুর দালান, যেখানে রয়েছে পাঁচটি খিলান। Songe ache থামযুক্ত নাট মন্দির। সঙ্গে নানান রঙের কাচের ফানুস এবং বেলজিয়াম কাচের ঝাড়বাতি। আর এই জিনিসগুলো দেখেই আপনার মনে পড়ে যাবে এই বাড়ির সাবেকি ঐতিহ্যের কথা। একই সঙ্গে বুঝবেন অতীতের রাজকীয় জৌলুসের চেহারা। বীরভূমের সুরুল জমিদারবাড়ির পুজো এবার ২৮৮ বছরে পড়বে। এত বছর ধরে একই ভাবে পুজো করে আসা হচ্ছে দেবীকে। এখানে আজও মিশে রয়েছে মাটির টান। সাবেকি প্রতিমাকে সাজানো হয় ডাকের সাজে। সঙ্গে থাকে সোনা এবং রুপোর গয়না। সোনালী রঙের দেবী মূর্তি দেখা যায় এখানে। আর চলচিত্রে থেকে হর, গৌরীর বিয়ের দৃশ্য। এই রূপেই বহু বছর ধরে প্রতিমা পূজিত হয়ে আসছেন।
বর্ধমানের নীলপুরের ঘোষবাড়ির ছেলে ভরতচন্দ্র তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি চলে আসেন সুরুলে। এখানে এসে ওঠেন তাঁর গুরু বাসুদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে। তাঁর গুরুদেব বলতে বৈষ্ণব ধর্মগুরু। ভরতচন্দ্র আর এই জায়গা ছেড়ে ফেরত যাননি। এরপর ধীরে ধীরে তাঁর পুত্র এবং পৌত্ররা মিলে ফরাসি এবং ইংরেজদের সঙ্গে ব্যবসা করে পরিবারের আয় বাড়ায় এবং শ্রীবৃদ্ধি করে। এই সুরুল জমিদারবাড়ির সঙ্গে ঠাকুর রাজবাড়ির সম্পর্ক ভীষণই ভালো ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং এই বাড়িতে এসে থেকেছেন। সুরুল জমিদারবাড়ির ঠাটবাট আজও একই রকমের আছে। এই বাড়ির কোনও সমস্যা কখনই পুজোর ক্ষেত্রে কোনও বাঁধা তৈরি করেনি। আজও একই ভাবে এই বাড়ির পুজো হয়ে থাকে।
সপ্তমীর সকালে পালকি চড়ে নবপত্রিকা স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। বসে নহবত। ফিরে এসে দেওয়া হয় নাড়ুর হরিলুঠ। স্থানীয়রা আজও একই ভাবে দারুন আনন্দের সঙ্গে এই পুজোয় সামিল হন।