ভালোবাসতে নারাজ তরুণ সমাজ। কলেজে গিয়ে প্রেম করতে চান না তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে, তরুণ প্রজন্মকে প্রেমে উৎসাহ যোগাতে বড়সড় পদক্ষেপ করবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারের নির্দেশে পড়ানো হবে 'লাভ এডুকেশন'।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার রেকর্ড গড়েছিল চিন। যদিও এখন ভারত ছাপিয়ে গিয়েছে ড্রাগনের দেশকে। এই মুহূর্তে, চিনের জনসংখ্যা প্রায় ১.৪১ বিলিয়ন। এত বিশাল জনসংখ্যা থাকলে, উদ্বেগ পিছু ছাড়ছে না। ডেটা বলছে, চিনের জনসংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধ হচ্ছে। পরবর্তীতে এটি দেশের অর্থনীতিতে অনেক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতে পারে সরকারকে।
কলেজ ছাত্র, যারা অর্থনীতির ভবিষ্যত হিসাবে দেখা হয় কলেজ পড়ুয়াদের। এই তরুণ প্রজন্মের প্রতিটি পদক্ষেপ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এই প্রজন্মেরই প্রেম এবং বিয়ে নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বদলে গিয়েছে। চায়না পপুলেশন নিউজের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে ৫৭ শতাংশ কলেজ ছাত্র প্রেমে পড়তে নারাজ, যা উদ্বেগজনক। এমন পরিস্থিতিতে, সরকার একটি অদ্ভুত উপায়ে সমস্যাটির সমাধান করার চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বিবাহ, প্রেম এবং সন্তান ধারণের বিষয়ে পড়াশোনা করাতে বলা হচ্ছে। যাতে এই সাংসারিক বিষয়ে তরুণদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আসে। এই কারণেই চিনের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হবে 'লাভ এডুকেশন'।
আরও পড়ুন: (CAT Answer Key 2024: IIM Calcutta প্রকাশ করল ক্যাট ২০২৪ এর অ্যানসার কি, রেজাল্ট কবে?)
বিয়ে করতে চাইছে না তরুণরা
সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এভারগ্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে বিয়ে করার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। তরুণ-তরুণীরা আর বিয়ে করতে চাইছেন না। ২০১৩ সালে, ১৩.৪৭ মিলিয়ন বিবাহ রেজিস্টার করা হয়েছিল, কিন্তু ২০২০ সাল নাগাদ এই সংখ্যাটি ৮.১৩ মিলিয়নে নেমে এসেছে। গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে যে ধনী শহরগুলিতে বিবাহের হার আরও কম থাকে।
চিনের বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রকের সাম্প্রতিক তথ্য দেখায় যে ২০২৪ সালের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে, শুধুমাত্র ৪.৭৪ মিলিয়ন বিবাহ রেজিস্টার করা হয়েছিল, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ১৬.৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আসলে, ২০১৩ সাল থেকে এক্ষেত্রে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। আর খুব কম বিবাহের হারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে কম জন্মহারও। কারণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে অবিবাহিত দম্পতিদের ক্ষেত্রে সন্তান ধারণ করাও কঠিন।
জন্মহার ব্যাপক কম
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জানুয়ারীতে, একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বছর হল চিনে জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ২০২৩ সালে, জনসংখ্যা ২.০৮ মিলিয়ন কমেছে এবং শুধুমাত্র ৯.০২ মিলিয়ন শিশুর জন্ম হয়েছে, ২০২২ এর তুলনায় যা ৫.৭ শতাংশ কম। ফলস্বরূপ, চিনে অনেক কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ৫ শতাংশ এরও বেশি কমেছে এবং সেগুলিতে ভর্তি হওয়া শিশুদের সংখ্যাও টানা তৃতীয় বছর ধরে কমেই চলেছে।
আরও পড়ুন: (Spoken English: ইংরেজি শেখাবে রাজ্য পুলিশ, এক পয়সাও লাগবে না, কীভাবে নাম লেখাবেন?)
কেন চিনের কলেজ পড়ুয়ারা প্রেম এবং বিয়েতে আগ্রহী নয়
পড়ুয়াদের জন্য, সম্পর্কের সঙ্গে পড়াশোনার ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। চিনের শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এবং চাহিদাপূর্ণ, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অন্য কিছুতে ফোকাস করা কঠিন করে তোলে।
শিক্ষার খাত অত্যন্ত কঠিন
প্রথমত, চিনের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া খুবই কঠিন। কারণ, এর জন্য বিশ্বের অন্যতম কঠিন এবং চিনের জাতীয় পরীক্ষা গাওকাও পাস করতে হবে। এর জন্য শিক্ষার্থীরা কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নেন এবং শুধুমাত্র অল্প সংখ্যকই সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেন। গাওকাও চিনা গণিত, ইংরেজি এবং বিজ্ঞানের মতো বিষয়ে পরীক্ষা করে। দুই দিনের পরীক্ষার পর, শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্কোর, ভর্তির সম্ভাবনার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেয়।
গাওকাও পাস করার পরও শিক্ষার্থীরা অনেক চাপের মুখে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সগুলো খুবই চ্যালেঞ্জিং, এবং পাস হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই ভালো পারফর্ম করতে হয়। এই চাপ অনেক শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র তাঁদের পড়াশোনাতেই মনোনিবেশ করতে প্ররোচিত করে, যে কারণে তাঁদের মধ্যে ৫৭ শতাংশই প্রেমে পড়তে চান না।
বেকারত্ব: আরও একটি বড় সমস্যা
কম বিবাহের হার ছাড়াও, অন্যান্য কারণগুলিও তরুণদের সন্তান ধারণে উৎসাহ কমিয়ে দিয়েছে। এমনই একটি প্রধান সমস্যা হল বেকারত্বের হার। ২০২৩ সালে, চিনের তরুণ সমাজে বেকারত্ব ১২.১ শতাংশে পৌঁছেছে, এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এটি তরুণদের স্নাতক হওয়ার পরে চাকরি খুঁজে পাওয়া কঠিন করে তুলছে। অর্থনীতি মন্থর হচ্ছে, এবং কাজের কম সুযোগ থাকছে।
উচ্চ বেকারত্বের পাশাপাশি, ব্যয়বহুল আবাসন এবং সন্তান লালন-পালনের ক্রমবর্ধমান ব্যয় অনেককেই বিয়ে করতে বা পরিবার শুরু করতে দ্বিধাগ্রস্ত করে তুলছে। বিশেষ করে বড় শহরগুলিতে, চিনে বিবাহ এবং জন্মহার এত কম হওয়ার প্রধান কারণ হল এই আর্থিক চাপগুলিই।
আরও পড়ুন: (Result 2024: SSC CGL টায়ার ১এর ফলাফল ঘোষণা হল, লিঙ্ক থাকল এখানে, কেন্দ্রের প্রচুর চাকরি)
লাভ এডুকেশন বা প্রেম শিক্ষা কি কার্যকরী হবে
চিনের জনসংখ্যা সমস্যা মোকাবেলায়, অল্প বয়স্ক শিক্ষার্থীদের জন্য, এই এডুকেশন সম্পর্ক এবং যোগাযোগের মতো বিষয়গুলিতে ফোকাস করবে। সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে আলোচনা এবং কেস স্টাডিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তবে, এই কর্মসূচি কার্যকর হবে কিনা তা এখনপ অনিশ্চিত। শিক্ষার্থীরা যে কঠিন অর্থনৈতিক এবং একাডেমিক চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়, তা দেখে এটা স্পষ্ট নয় যে 'প্রেম শিক্ষা' আদতে তাঁদের মনোভাব পরিবর্তন করতে পারবে কি না। নভেম্বরে, চিনের সরকার স্থানীয় অধিকর্তাদের, দেশের জনসংখ্যা হ্রাস কমিয়ে আনা এবং সঠিক বয়সে বিয়ে ও সন্তান ধারণের প্রচারে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। যাইহোক, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই প্রচেষ্টাগুলি তরুণদের ক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে।