রথ দেখা কলা বেচা, প্রবাদের উৎপত্তি মাহেশ থেকেই। এখানকার জগন্নাথ কলায় তুষ্ট। রথে উঠে কলা, জিলিপি খেতে খেতে মাসির বাড়িও যান। এমনটাই বিশ্বাস করেন সাধারণ মানুষ। এদিন, রবিবার মাহেশের রথযাত্রা উপলক্ষে ভিড় হয়েছে বেশ। হাজার হাজার পুণ্যার্থীরা এসে কলা খাইয়ে গিয়েছেন ভগবানকে। চিনি কাঁঠালি কলা বিক্রি করতে এসেছিলেন অনেকেই। কিন্তু কলা কেন?
১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ধূমধাম করে, মাহেশের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ওড়িশার পুরীর প্রতি বছর ভগবান জগন্নাথ রথযাত্রার আয়োজন করা হয় এখানেও। বাংলার প্রাচীনতম রথযাত্রা এটি। এই রথযাত্রার উৎপত্তি, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুর থেকে। এখানে রথযাত্রার দিন, রথের দিকে কলা ছোঁড়েন সাধারণ মানুষ। আসলে তাঁদের বিশ্বাস যে ভগবান রথে বসে বসে তাঁদের পুজো গ্রহণ করবেন।
কেন জগন্নাথ দেবকে কলা দেওয়া হয়
এর পিছনেও রয়েছে, অনন্য একটি কারণ। এটাই নাকি প্রাচীন প্রথা। বলা হয়, জগন্নাথ সাধারণ মানুষের মতই সরল। সাধারণ মানুষ যেমন ঘুরতে যাওয়ার সময় সঙ্গে পছন্দের খাবার সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ঠিক সেই রকমই রথে চড়ে জগন্নাথ মাসির বাড়ি যাওয়ার সময়, যাত্রাপথের খিদে পেলে কলা খেতেন। সেই থেকেই এই বিশেষ রীতি তৈরি হয়েছে।
৫২ বছর বয়সী কলা বিক্রেতা জ্যোতি চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ১৮ বছর বয়স থেকে তিনি মাহেশে কলা বিক্রি করছেন। ১০ টাকায় তিনটি করে কলা বিক্রি করেন, সেই টাকায় যা উপার্জন হয়, তাই দিয়ে রথের মেলাও দেখা হয়, লাভের টাকাও থাকে।
আরও পড়ুন: (Chappan Bhog For Jagannath: আজ ৫৬ ভোগে কী কী খাচ্ছেন প্রভু জগন্নাথ? কোন তিনটি পদের রেসিপি সবচেয়ে সেরা)
এই মন্দিরের পৌরাণিক কাহিনিও বেশ মজার
মহেশ জগন্নাথ মন্দির থেকে মহেশ রথযাত্রার উৎপত্তি। এই মন্দিরের পৌরাণিক কাহিনি বেশ মজার। কিংবদন্তি অনুসারে, মহেশ নামে এক বাঙালি সন্ন্যাসী ছিলেন, লোকে তাঁকে দ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামেও চিনত। একবার তিনি ভগবান জগন্নাথকে 'ভোগ' নিবেদন করেছিলেন, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। তখন তিনি নিরাশ হয়ে মৃত্যু অবধি উপবাসের সংকল্প করে বনের দিকে চলে গিয়েছিলেন। এই ঘটনার তৃতীয় দিনে, ভগবান জগন্নাথ ওই বাঙালি সাধুর স্বপ্নে এসেছিলেন এবং তাঁকে বলরাম, জগন্নাথ এবং সুভদ্রার মূর্তির সামনে, নিজের হাতে দারু-ব্রহ্মা (নিম তঞ্জা) নিবেদন করতে বলেছিলেন। তখন বাঙালি সাধু ভগবানের মূর্তিকে দারু-ব্রহ্মা নিবেদন করে পুণ্য অর্জন করেছিলেন। এই অলৌকিক ঘটনার পর এখানকার মন্দিরের নামও 'মহেশ জগন্নাথ মন্দির' নামে বিখ্যাত হয়ে যায়।