পৌষ আগলানো বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মনে করা হয় পৌষমাস শস্যের মাস। আর এমন মাসই যেন সারা বছর থাকে, তাই তাকে আগলে রাখা হয়। বহু বর্ষীয়ান মহিলার মতে সরা পিঠেই এই পৌষে বানানো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের। সরায় ধানের তুষ রেখে পাট কাঠির আগুনে তা পুড়িয়ে সরা তৈরি করতে হয়।
1/6মকর সংক্রান্তি এই ২০২৩ পড়ছে ১৪ জানুয়ারি, তবে শাস্ত্র মতে সেই সমকাল রাতে হওয়ায় সেদিন স্নান ও দান করা যাবে না। তাই ১৫ জানুয়ারি পালিত হচ্ছে মর সংক্রান্তি। আর এই সংক্রান্তিই বাঙালির ঘরে পৌষ পার্বন হিসাবে পরিচিত। ১৪ জানুয়ারি রাত ৮.৫৭ মিনিটে পড়ছে মকর সংক্রান্তির তিথি। এর পূণ্যকাল ১৫ জানুয়ারি সকাল ৭.১৫ মিনিটে শুরু হবে বিকেল ৫.৪৬ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। (PTI Photo)
2/6গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে প্রচলিত কথা ‘পৌষ মাস লক্ষ্মীমাস’ কে সামনে রেখেই আয়োজিত হয় পৌষপার্বন। নতুন ধান উঠে এই সময় তা কৃষকদের আঙিনা সাজিয়ে দেয়। মাটি নিকিয়ে দেওয়া গ্রাম বাংলার বহু ঘরের উঠোনে এই সময় ঢেঁকি সিঁদুরে রাঙানো হয়। তুলসী মন্দিরে আঁকা থাকে ‘নেড়া নেড়ি’র ছবি। বাড়িতে সাড়ম্বরে তৈরি হয় পিঠেপুলি। চালের গুঁড়ি দিয়ে আঁকা হয় আল্পনা। আর চলে ‘আউনি বাউনি’র ছড়া। একনজরে দেখা যাক, পৌষপার্বন ঘিরে বাঙালি সংস্কৃতিতে আষ্টেপিষ্টে কী কী জড়িয়ে রয়েছে।
3/6আউনি বাউনি- পৌষ সংক্রান্তি উৎসব মূলত বাঙালির ঘরে শস্যকে উদযাপন করার সমারোহ। পাকা ধান ঘরে তোলা উপলক্ষ্য়ে এই সময় একটি বিশেষ রীতি পালিত হয়। পৌষ সংক্রান্তির দিন বা তার আগের রাতে ২ থেকে ৩ টি ধানের শিষ নিয়ে তার বিনুনি বাঁধা হয়। শহরের বুকে কেউ কেউ খড় দিয়েও বাঁধেন বিনুনি। এরপর তা ঘরের আসবাব বাকি অংশে বেঁধে দেওয়ার রীতি দেখা যায়। বাঁধার সময় বাজে শাঁখ, আর ছড়া কাটা হয় ‘আউনি-বাউনি কোথাও না যেও, তিন দিন ঘরে বসে পিঠেপুলি খেও!’
4/6পিঠে- পৌষপার্বন হবে, আর বাঙালির ঘরে পিঠে হবে না তা কখনও হয়? বাঙালির ঘরে পিঠের বহু নাম। যেমন - আস্কে পিঠে, গোকুল পিঠে, ভাজা পিঠে। সঙ্গে চন্দ্রপুলি, ক্ষীরপুলি, দুধপুলী, আঁদোশা। তবে বহু বর্ষীয়ান মহিলার মতে সরা পিঠেই এই পৌষে বানানো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের। সরায় ধানের তুষ রেখে পাট কাঠির আগুনে তা পুড়িয়ে সরা তৈরি করতে হয়। নতুন চালের গুঁড়োতে তৈরি হয় সরা পিঠে। প্রথম পিঠে দেওয়া হয় গরুকে। তারপর অন্যদের।(ছবি: ইনস্টাগ্রাম, Sparshi Banerjee-র সৌজন্যে)
5/6পৌষ আগলানো- বর্তমানে কর্পোরেট জগত বা নিত্য ব্যস্ততার শহুরে জীবনে বাঙালির পৌষ আগলানোর কথা সেভাবে শোনা যায় না। বলা ভালো এই ‘টার্ম’টাই শোনা যায় না। তবে এই পৌষ আগলানো বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। গোবরের গোলাকার পিণ্ডের ওপর ধান দুর্বাফুল, যবের শিস, সিঁদুর দিয়ে পুজো করে বলা হয় ‘এসো পৌষ যেও না, জন্ম জন্ম ছেড়ো না’। মনে করা হয় পৌষমাস শস্যের মাস। আর এমন মাসই যেন সারা বছর থাকে, তাই তাকে আগলে রাখা হয়। (ছবিটি প্রতীকী, সৌজন্যে পিটিআই)
6/6পৌষ আগলানোর রীতি- পৌষ বুড়িকে নানান ফুল দিয়ে বিশেষত সরষে ও গাঁদা ফুল দিয়ে সাজিয়ে তৈরি করা হয়। সারা দিন ধরে পুজোর সামগরী জোগাড় করে চলে পুজো। তারপর শুদ্ধ বস্ত্র পরে ঘরের মহিলারা সন্ধ্যের পর থেকে পৌষ আগালাতে মেতে ওঠেন। ছড়া কাটা হয়'পৌষমাস লক্ষ্মীমাস যাইও না ছাড়িয়ে, ছেলেপিলেকে ভাত দেব থালা ভরিয়ে।' ঠাকুর ঘর থেকে সদর দরজা পর্যন্ত উলুধ্বনি দিয়ে , জল ছিটিয়ে এই পৌষ আগলানোর পালা শেষ হয়।