নতুন সম্পর্কে এসে প্রথম যখন ঝগড়া হয় তা কিন্তু একটি টিপিকাল রোমান্টিক কমেডি সিনেমার থেকে কম কিছু নয়। এই যেরকম সিনেমাতে দেখা যায়, কণ্ঠস্বর সপ্তম সুরে উঠে যায়, অঙ্গুলিহেলনও চলে, আর চলে সঙ্গে দুজন দুজনকে দোষারোপ। এই সময় কেউ যদি দায়িত্ব নিয়ে অপরজনকে একটি চুমু দিয়ে বসেন; তাহলেই কেল্লাফতে! সেই চুমু থেকে বেডরুমের বিছানা হয়ে ওঠে গন্তব্য। ঝগড়া হয়ে যায় একেবারে ছু-মন্তর! এ তো গেল এক কথায় রঙিন সিনেমার মতো ভালোলাগার দিক। এই ঝগড়ার পর গন্তব্য বেডরুম, আদতে সম্পর্কটাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করছে, নাকি ধীরে ধীরে ঘুমপোকার মত কুরে কুরে খেয়ে নিচ্ছে আপনার যত্নে গড়া সম্পর্ককে তা নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন।
ব্র্যাড পিট, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি অভিনীত ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ’ সিনেমার কথা মনে আছে? স্বামী-স্ত্রীর তীব্র ঝগড়া শেষ পর্যন্ত পর্যবসিত হয় ভালবাসা এবং শারীরিক সম্পর্কে। এমন ঘটনা হলিউড ছবিতে নিত্যই দেখা যায়। কিন্তু বিষয়টি কি আদৌ বাস্তবসম্মত, নাকি পুরোটাই সিনেমার প্রয়োজনে বানানো?
- মেকআপ সেক্স কি?
সহজ ভাষায়, মেকআপ সেক্স হল একটি আনুষ্ঠানিক শব্দ, যা যৌনতায় ঘনিষ্ঠতা বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। যা একটি দম্পতির মধ্যে দ্বন্দ্বের পরে ঘটে। কখনও কখনও, দম্পতিদের মতের অনেক পার্থক্য থাকে। যা উত্তপ্ত তর্কের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর এখানেই সূত্রপাত হয় শারীরিক ঘনিষ্ঠতার। এটি একটি দম্পতির জন্য একটি তিক্ত লড়াইয়ের পরে শান্ত হওয়ার অনবদ্য উপায়।
- মেকআপ সেক্সের মতো ব্রেকআপ সেক্সও হয়। দুটোর অর্থ কী একই?
না, মেকআপ সেক্স আর ব্রেক-আপ সেক্স পরস্পরে ভিন্ন। কারণ ব্রেক-আপ সেক্স ঘটে যখন একটি দম্পতি তাদের সম্পর্ক শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া ব্রেক-আপ যৌনতা বিভিন্ন আবেগ দ্বারা চালিত হতে পারে, যার মধ্যে বিচ্ছেদের আগে ঘনিষ্ঠতার চূড়ান্ত অভিব্যক্তি বা ব্রেকআপের মানসিক চ্যালেঞ্জ অন্যতম।
মনোবিদ্যার কিছু গবেষণা বলছে, প্রেমের সম্পর্কে ঝগড়ার পরিণতি হিসেবে আসতে পারে শারীরিক নৈকট্য। তার পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ।
- হরমোনের অবদান: আমেরিকার মনোবিদ অ্যান্ড্রু আরনের মতে, ঝগড়ার সময় শরীরে টেস্টোস্টেরন, অ্যাড্রিনালিন, কোর্টিসলের মতো হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। এগুলির সব ক’টিই উত্তেজনা এবং মানসিক চাপ বাড়ায়। আর যৌনসম্পর্কের সময় বাড়ে সেরোটোনিন, ডোপামিনের মতো মন ভাল রাখার হরমোনের ক্ষরণ। আগের হরমোনগুলি চেষ্টা করে পরেরগুলির দিকে শরীরকে নিয়ে যেতে। ফলে ঝগড়ার পিছন পিছন শারীরিক সম্পর্কের ইচ্ছে বাড়ে অনেকের ক্ষেত্রেই।
- ভয় কাটানো: যে কোনও ঝগড়াই মনের ভিতরে এক ধরনের ভয়ের জন্ম দেয়। শারীরিক সম্পর্ক সেই ভয় কাটিয়ে দিতে সাহায্য করে। ভয়ের বদলে সেখানে জায়গা করে নেয় এক ধরনের উত্তেজনা এবং আনন্দ। ঝগড়ার পর শারীরিক সম্পর্কের পিছনে এটাও একটা কারণ বলে মত আরনের।
- শক্তি বেড়ে যাওয়া: অন্য এক মনোবিদ এলেসা জেনডরফার দাবি করেছেন, ঝগড়ার সময় হরমোনের কারণেই শরীরে ‘এনার্জি’ বা শক্তি কিছুটা বেড়ে যায়। সেই শক্তিই শারীরিক সম্পর্কের দিকে অনেককেই ঠেলতে থাকে। দু’জনের ‘এনার্জি’র মাত্রাই যদি ঝগড়া থেকে বেড়ে যায়, তা হলে তা সুস্থ যৌনসম্পর্কের দিকে নিয়ে যেতে পারে বিষয়টিকে।
- দুঃখপ্রকাশ বা ক্ষমা চাওয়া: মনোবিদ এবং চিকিৎসক গেইল সলৎজের বক্তব্য, ঝগড়ার পরে পরস্পরের কাছে দুঃখপ্রকাশের একটা তাগিদ তৈরি হয় অনেক ক্ষেত্রেই। কিন্তু সেই দুঃখপ্রকাশ বা ক্ষমা চাওয়াটা অনেকেই মুখের ভাষায় ব্যক্ত করতে পারেন না। আর সেখানেই এগিয়ে আসে শরীরের ভাষা। শুধু তাই নয়, সলৎজের মতে, প্রতিটা ঝগড়ার সূত্রেই চলে আসতে পারে ছোটবেলার নানা খারাপ স্মৃতি। সেই স্মৃতিগুলি কাটিয়ে দিতেও সাহায্য করে শারীরিক সম্পর্ক।