অনেকেই সন্তান চান, কিন্তু সন্তান পান না। সচেতনতার অভাবের কারণে অনেকেই মনে করেন, এর দায় একা এবং একমাত্র নারীরই। কিন্তু বিষয়টি আদপেও তা নয়। পুরুষের দায় নারীর সমান সমান বা কোনও ক্ষেত্রে বেশি।
হালের বহু সমীক্ষা বলছে, পুরুষের সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা কমছে। মানসিক চাপ, মদ্যাপান-ধূমপানের অভ্যাস, এমনকী করোনা— এই সবগুলিই পুরুষের যৌনক্ষমতা এবং সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।
হালে হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশের অত্যন্ত নামজাদা চিকিৎসক এবং ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ক্ষিতিজ মুর্দিয়া জানিয়েছেন, ‘এখনও বহু জায়গাতেই সন্তান না হওয়ার জন্য মহিলাদেরই দায়ী করা হয়। কিন্তু বিষয়টি একেবারেই তা নয়।’ আর এক চিকিৎসক অভিনন্দন সাদালগেও একই কথা বলেছেন। তাঁর মতে, এখন সন্তান উৎপাদনে অক্ষমতার পিছনে নারী এবং পুরুষের ভূমিকা সমান। এমনই বলছে পরিসংখ্যান। তাঁর মতে, বরং পুরুষের ভূমিকা আরও বেশি বলে জানাচ্ছে কোনও কোনও সূত্র।
সন্তান না হওয়ার পিছনে বেশ কয়েকটি ভুল ধারণা রয়েছে অনেকের। সেগুলির কথাও বলেছেন চিকিৎসকরা।
- সন্তান উৎপাদনের জন্য পুরুষের একমাত্র লাগে ভালো মানের শুক্রাণু। এমনই ভাবেন অনেকে। বিষয়টি আসলে এমনটিও নয়। বলছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, ভালো মানের শুক্রাণু থাকলেই যে কেউ বাবা হতে পারবেন, এমনটা নাও হতে পারে। ধূমপান, মদ্যপানের মতো অভ্যাস থাকলেও বাবা হওয়ার পথে অন্তরায় দেখা দিতে পারে।
- অনেকেরই ধারণা, সন্তান না হওয়াটা শুধুমাত্র নারীদের সমস্যা। পরিসংখ্যান বলছে, নারীদের সমস্যা দেখা যায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে। ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি পুরুষের সমস্যা। আর ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে দু’জনেরই সমস্যা। বাকি ১০ শতাংশের কারণ বোঝা যায় না। পরিসংখ্যান বলছেন, পুরুষের কারণে সন্তান না হওয়ার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
- অনেকের ধারণা পুরুষের যৌনাঙ্গ ঠিকঠাকভাবে কাজ করলে সন্তান উৎপাদনে কোনও সমস্যা হওযার কথা নয়। ধারণাটিকে ভুল বলছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, জীবনযাত্রার মান, ধূমপান-মদ্যপানের অভ্যাসের ভূমিকা আছে এর পিছনে।
- পুরুষের সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা কমে যাওয়ার পিছনে যৌন সংক্রামক রোগ, বয়সের মতো কয়েকটি বিষয়ও কাজ করে। এগুলো সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই।
কী করে বন্ধ্যত্ব বা সন্তান না উৎপাদন করতে পারার সমস্যা কমাবেন? তারও পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
- মানসিক চাপ কমান
- কীটনাশক বা ক্ষতিকারক রাসায়নিকের থেকে দূরে থাকুন
- মদ্যপান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখুন, ধূমপান সম্পূর্ণ ত্যাগ করুন
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- পুষ্টিকর খাবার খান
- টাইট প্যান্ট পরবেন না, যৌনাঙ্গের তাপমাত্রা যেন না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখুন
- রোজ অল্প করে হলেও এক্সারসাইজ করুন
- নিয়মিত ভিটামিন খান
মোটের উপর এই নিয়মগুলি মেনে চললেই এই সমস্যা অনেকটা কমবে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।