হাতে মাত্র কয়েক ঘন্টা। বাঁচার আশা আর নেই। এই কয়েক ঘন্টার মধ্যেই যা করবার করতে হবে, জানাচ্ছেন দুই চিকিৎসক। যাঁরা এর মধ্যেই দীর্ঘ গবেষণার ফলে তৈরি করেছেন হৃদপিন্ডের বিকল্প যন্ত্র। নাড়ির স্পন্দন ছাড়াই দিব্যি চলে সেই যন্ত্র। সারা দেহে হৃৎপিণ্ডের মতোই পৌঁছে দেয় রক্ত সেই যন্ত্রই শেষ পর্যন্ত মুশকিল আসান হয়ে উঠল।
২০১১ সালে ৫৫ বছর বয়সি ক্রেগ লুইস অ্যামিলয়ডসিস নামক এক বিরল অটোইমিউন রোগে ভুগছিলেন। এই রোগে সারা শরীর জুড়ে অস্বাভাবিক প্রোটিন তৈরি হতে থাকে। এর প্রভাব পড়ে লিভার, হৃদপিন্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতে। চরম পরিস্থিতিতে কিডনি, হৃদপিন্ড, লিভার কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
টেক্সাস হার্ট ইনস্টিটিউট-এর চিকিৎক বিল কন ও বাড ফ্রেজার ক্রেগের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত যখন কিছুই করার নেই, তখনই এমন সিদ্ধান্ত নেন দুই চিকিৎসক। তাঁদের হাতেই তৈরি হয়েছিল বিশেষ যন্ত্রটি। তাঁদের তৈরি যন্ত্রটি প্রথমে পরীক্ষা করা হয়েছিল এক পাল গরুর উপর। মোট ৫০ টি গরুর উপর এই পরীক্ষানিরীক্ষা চলে। তাদের হৃদপিন্ড এই যন্ত্র দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে দেওয়া হয়। দেখা যায়, দিব্যি রোজকার কাজ করে চলেছে গরুগুলি। চিকিৎসক বিল কনের কথায়, স্টেথোস্কোপ দিয়ে গরুদের হৃদস্পন্দন শোনার চেষ্টা করলে দেখা যাবে, তাদের কোনও স্পন্দন নেই। এমনকী ইকেজি করলে তাতেও মাত্র একটি সরলরেখা দেখা যাবে। গরুর দেহে পরীক্ষাটি সফল হওয়ার পরেই মানুষের শরীরে যন্ত্রটি প্রতিস্থাপনের কথা ভাবেন দুই চিকিৎসক।
ক্রেগের স্ত্রী লিন্ডার অনুমতি নিয়েই যন্ত্রটি বসানো হয় ক্রেগের দেহে। ইতিমধ্যেই, ক্রেগকে ডায়ালিসিসে থাকতে হচ্ছিল। এছাড়াও, একটি শ্বাস নেওয়ার যন্ত্র ও বাহ্যিক ব্লাড পাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা জারি ছিল। যন্ত্রটি বসানোর পর দেখা যায়, ক্রেগের কোনও নাড়ির স্পন্দন নেই। অথচ সারা দেহেই দিব্যি রক্ত সঞ্চালন অব্যাহত রয়েছে।লিন্ডার কথায়, স্পন্দন না থাকা সত্ত্বেও স্বামীকে সুস্থ দেখে হতবাক হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তবে একইসঙ্গে অসম্ভব খুশিও হয়েছিলেন। এমন স্পন্দনহীন অবস্থায় একমাসের কিছু বেশি দিন বেঁচে ছিলেন ক্রেগ। মূলত দীর্ঘসময় ধরে ডায়ালিসিস ও লিভারের সমস্যার কারণেই তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তবে চিকিৎসকদের কথায়, এপ্রিলে ক্রেগের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত যন্ত্রটিতে কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি। একমাসের বেশি সময় ধরে কোনও সমস্যা ছাড়াই দুর্দান্ত পরিষেবা দিয়েছিল সেটি।