বাংলা নিউজ > টুকিটাকি > How was 15th August, 1947: ‘ভিড়ে হারিয়ে গেল ছাতা, আর হারিয়ে গেল দেশ’, মনোজ মিত্র

How was 15th August, 1947: ‘ভিড়ে হারিয়ে গেল ছাতা, আর হারিয়ে গেল দেশ’, মনোজ মিত্র

মনোজ মিত্রর স্মৃতিচারণে প্রথম স্বাধীনতা দিবস। গ্রাফিক্স: সুমন রায়

বাবা মার সঙ্গে ছোট্ট আমি খুলনায় চলেছি। প্রতিটা স্টেশনে অনেকক্ষণ করে ট্রেন থামছে। সবার মনে আনন্দ। আমাদের নতুন দেশ হয়েছে। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সবাই সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। স্টেশনে এসে যাত্রীদের আত্মীয়স্বজন খবার দিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে উৎসবের মেজাজ।

মনোজ মিত্র

প্রথম স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন আমাদের কাছে এক মর্মান্তিক স্মৃতি। আমাদের দেশ খুলনা জেলার সাতক্ষীরায়। এখন অবশ্য সাতক্ষীরা আলাদা জেলা হয়েছে। দেশভাগের সময় খুলনা কিন্তু ভারতেই ছিল। আমাদের দেশের বাড়ি ভারতবর্ষে আছে বলে আমরা খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। আমার বাবা ইংরেজ সরকারের কর্মচারি ছিলেন। অফিসার পদে চাকরি করতেন। ময়মনসিংয়ে পোস্টিং। পরিবারের সঙ্গে সেখানেই থাকতাম ছোটবেলায়। আমার বয়স যখন ৯ বছর তখনই পার্টিশন হল। বাবাকে জানানো হল কবে চাকরিতে যোগ দিতে হবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। আমরা রওনা হলাম ময়মনসিং থেকে কলকাতার উদ্দেশে। প্রথমে নৌপথে সিরাজগঞ্জ। তারপর ট্রেনযাত্রা। কলকাতায় আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ছিল। অনেকটা রাস্তা জার্নির পর একটু বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল। এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছিলাম।

পরের দিন শিয়ালদা থেকে রওনা হলাম খুলনার। ট্রেনে বহু পরিচিত মানষের সঙ্গে দেখা। বাবা মার সঙ্গে ছোট্ট আমি খুলনায় চলেছি। প্রতিটা স্টেশনে অনেকক্ষণ করে ট্রেন থামছে। সবার মনে আনন্দ। আমাদের নতুন দেশ হয়েছে। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সবাই সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। স্টেশনে এসে যাত্রীদের আত্মীয়স্বজন খবার দিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে উৎসবের মেজাজ। এরই মধ্যে দিয়ে আমরা পৌঁছলাম খুলনা স্টেশনে। তারপর আমাদের ইচ্ছে স্টিমারে করে সাতক্ষীরা যার। সারা রাত স্টিমারে পিকনিক হবে। ইলিশ মাছ রান্না হবে। চতুর্দিকে হইচই। বাবা আমাকে একটা ছাতা কিনে দিয়েছিল। আমই ভীষণ আনন্দিত। আনন্দের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। উঠে দেখি ছাতাটা। হারিয়ে গিয়েছে।

আমার ভীষণ মন খারাপ হল। এমন সময় ভোরবেলায় স্টিমার থেকে বাবা চা খেতে নেমেছিলেন। বাবা খুব ধীর স্থির মানুষ। ফিরে আসার সময় দেখা গেল তাঁর চোখ লাল হয়ে আছে। মা জিগ্যেস করলেন কী হয়েছে? তখনই বাবা স্টিমার ভর্তি সবাইকে জানায় আমাদের খুলনা জেলা পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেদিনের আনন্দ মুহূর্তে বিষাদে পরিণত হয়েছিল। ওই ছাতাটা হারিয়ে যাওয়াই যেন দেশ হারানোর প্রতীক! আমরা ছোট তখন এতটা বুঝতাম না। মা কাঁদতে লাগল। শেষমেশ আমরা পৌঁছলাম দেশের বাড়িতে।

সঙ্গে সঙ্গে এপারে চলে আসিনি। ৬ মাস পর বাবার চাকরির পোস্টিং হল মুর্শিদাবাদের কান্দিতে। বাবা কাজে যোগ দিলেন। আমরা খুলনাতেই রইলাম। আমার দাদু একটি নিরিবিলিতে থাকতে চেয়েছিলেন শেষ জীবনটা। তাই দু'বছর বাদে বসিরহাটে চলে আসে আমাদের পরিবার। সেখানেই গ্রামের স্কুলে আমার কয়েক বছর পড়াশোনা। তারপরে অবশ্য কলকাতায় চলে আসি। অভিনয়ে যোগ দিই। বছর তিনেক আগে খুলনায় গিয়েছিলাম একটা সেমিনারে যোগ দিতে। উদ্যোক্তারা আমাকে দেশের বাড়িতে নিয়ে যান। তবে ছোটবেলার দেশের বাড়ির সঙ্গে এখনকার বাড়িটির কোনও মিল নেই। আমাদের বাড়িতে যেখানে দুর্গাপুজো হত সেখানে এখন আমবাগান। তবু দেশের বাড়িতে দাঁড়িয়ে অপরিসীম আনন্দ পেয়েছিলাম।

বন্ধ করুন