বয়স পেরিয়েছে নব্বইয়ের কোঠা। ভুগছিলেন প্রাণঘাতী অসুখ হেমপটিসিসে (Hemoptysis)। বিরল এই রোগে অনবরত থুতনি বা মুখ থেকে রক্তপাত হতে থাকে।যুগান্তকারী প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে রোগটির চিকিৎসা করল মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল।
পূর্ব ভারতের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অরিন্দম পান্ডে, 'মান্তা' নামের একটি ডিভাইসের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে রক্তনালি বন্ধ করার উপায় খুঁজে বের করেন, যেখানে সহায়তা করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইজাজ আহমেদ ও চিকিৎসক অর্ণব দে।
২০২৪ সালে দক্ষিণ কলকাতার ৯০ বছরের এই প্রৌঢ় প্রচন্ড সর্দি-কাশি, রক্তবমি ও হাঁপানির সমস্যায় ধুঁকছিলেন। বুকের এক্স-রে করতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে লোবার নিউমোনিয়া (lobar pneumonia) ধরা পড়লেও, আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায় তার অ্যানারিজম (aneurysm) রয়েছে।
আরও পড়ুন - Rich Source Of Protein: চিকেনের থেকেও বেশি প্রোটিন এই ৫ বীজে! কখন কীভাবে খেলে উপকার?
আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় রক্তনালি ধমনী (Aorta) দেয়াল যখন অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ফেঁপে উঠে বাম ফুসফুসের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তখনই তাকে অ্যানারিজম বলা হয়। অতিরিক্ত চাপের কারণে কোনোভাবে যদি রক্তনালী ফেটে যায় তাহলে অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের দরুণ রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
এই জরুরি অবস্থার সামাল দিতে মেডিক্যাল টিম থোরাসিক এন্ডোভাস্কুলার আওরটিক রিপেয়ার (TEVAR) পদ্ধতি প্রয়োগ করেন।
চিকিৎসক অরিন্দম পান্ডে বলছেন, ‘এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি ১২০/৩০ মিলিমিটার স্টেন্ট গ্রাফ্ট বসানো হয়। এরপর মান্তা ডিভাইস ব্যবহার করে রক্তনালীটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিটি বেশ দ্রুত কার্যকরী এবং এতে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই রোগীর রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।’ তিনি জানান, ক্যাথ ল্যাব টিম, রেডিওলজিস্ট ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভবপর হত না।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী দীননাথ ভট্টাচার্য জানান, যখন তিনি মেডিকাতে আসেন তখন শ্বাসকষ্টের সমস্যায় অত্যন্ত ভুগছিলেন। তার পরিবারও তাকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন। চিকিৎসক অর্ণব বেরা তাকে চিকিৎসক অরিন্দম পান্ডের কাছে রেফার করেন। তাঁর পরামর্শ নেওয়ার পর তিনি ও তার পরিবার অনেকটাই আশ্বস্ত হন।
‘তারপর থেকে আমি একদম স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি, কোন রকম শ্বাসকষ্ট ছাড়াই। এখন কোনো ব্যাথা নেই আমার। আমি এবং আমার পরিবার মেডিকার এই অভিনব টিমের কাছে কৃতজ্ঞ।’ বললেন দীননাথ।
পূর্ব ভারতের মনিপাল হাসপাতালের মুখ্য স্থানীয় পরিচালনকারী অফিসার চিকিৎসক অয়নাভ দেবগুপ্ত জানিয়েছেন, রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে তারা ধারাবাহিক বেঞ্চমার্ক তৈরি করেছেন এবং ভবিষ্যতেও আরো নতুন দৃষ্টান্ত রচনায় উদ্যোগী।