হৃদপিন্ড পরীক্ষার যন্ত্র তৈরি এবার শুরু হল কলকাতার বুকে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে স্থাপিত হয় আঞ্চলিক জেরিয়াট্রিক কেন্দ্র। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও সেই কেন্দ্র এবার যৌথভাবে হৃদপিন্ডের স্পন্দন সংক্রান্ত রোগ পরীক্ষার যন্ত্র তৈরি করা শুরু করল। এর পাশাপাশি কেন্দ্রটিতে বয়স্কদের স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণাও শুরু করা হবে।
জেরিয়াট্রিক কেন্দ্রের আধিকারিক অরুণাংশু তালুকদার আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, বয়স্কদের জন্য পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রথম এমন কেন্দ্র তৈরি হল। এই কেন্দ্রে যন্ত্রের পরীক্ষানিরীক্ষার পাশাপাশি বয়স্কদের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণাও শুরু হচ্ছে। এতে বয়সজনিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা আরও সহজ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এছাড়াও, অরুণাংশুর কথায়, এই কেন্দ্রে প্রবীণদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিম দেওয়া হবে। বয়স্কদের চিকিৎসা আরও উন্নত করার লক্ষ্যেই মূলত হাত মিলিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের আঞ্চলিক জেরিয়াট্রিক কেন্দ্র।
এই বিশেষ প্রকল্পে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স বিভাগের শিক্ষক রাজর্ষি গুপ্ত, রেডিয়ো ফিজিক্স বিভাগের শিক্ষিকা সুমিত্রা মুখোপাধ্যায় এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক হিমাদ্রি দাস। রাজর্ষির কথায়, হৃদপিন্ডের স্পন্দনজনিত সমস্যা বা অ্যারিথমিয়া বয়স্কদের একটি স্বাভাবিক সমস্যা। এই সমস্যা নির্ণয়ে বর্তমানে হল্টার রেকর্ডের সাহায্য নেওয়া হয়। এটি যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনই খরচবহুল। সবার পক্ষে এই চিকিৎসার ভার বহন করাও মুশকিল হয়। তাই চিকিৎসা বয়স্কদের আয়ত্তে আনতেই এই প্রচেষ্টার শুরু।
জানা যাচ্ছে, প্রস্তাবিত যন্ত্রের সাহায্যে অনেক কম সময়ে স্পন্দনজনিত সমস্যা নির্ধারণ করা সম্ভব। এতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করাও সম্ভব হয়। রাজর্ষির কথায়, বর্তমানে ভারতে চিকিৎসক ও রোগীর অনুপাত প্রায় ১:২২০০। এর থেকেই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায় দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার হাল। এই কারণেই আরও জরুরি হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা। নতুন যন্ত্রের আবিষ্কার ও উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যার কিছুটা সমাধান সম্ভব। রাজর্ষির মতে, মেশিন লার্নিং ও ইন্টারনেট অফ থিংসের ব্যবহার বাড়ালে চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও আরও গতি আসবে। প্রযুক্তির ব্যবহারে আরও সহজ হবে রোগ নির্ণয়। এতে স্বাস্থ্য পরিষেবার সমস্যা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব জানাচ্ছেন রাজর্ষি।