মুরগির ঝোল। অনেক বাঙালির কাছেই এটি রবিবারের দুপুরের সমার্থক। স্নান করে এসে গরম গরম ভাতে মুরগির ঝোল মাখার মধ্যে এক আলাদাই সুখ আছে। রবিবারের চিকেন মানেই তাতে একটু আলু থাকবে। সেই নরম, হলুদ সোনার টুকরোর মতো আলুগুলোকে ঝোল-ভাতের সঙ্গে মেখে নিয়ে... আহা!
এখন মটনের যা দাম! কোলেস্টেরলের চোখ রাঙানিও আছে। চিকেনের বেলায় সেই সবের ভয় কম। সপ্তাহে এক-দুই দিন মুরগির আইটেম চলতেই পারে। সত্যি বলতে, চিকেনের যতরকম পদই খান না কেন, রবিবারের মাংসের ঝোলের মধ্যে যেন এক আলাদা তৃপ্তি আছে।
অনেকে আবার সঙ্গে একটু স্যালাড নেন। বেশি কিছু নয়, অল্প শসা, পেঁয়াজ, টমেটো। উপরে হালকা বিট নুন আর লেবুর রস।
সব মিলিয়ে, রবিবারের দুপুরের এই অনুভূতির দিতে তাকিয়েই যেন সারা সপ্তাহটা কাটিয়ে দেওয়া যায়।
আলু দিয়ে চিকেনের ঝোল মানেই, তার রঙ হবে গাঢ় লাল। যেটাকে অনেকে চিকেনের লাল ঝোল বলে থাকেন। কিন্তু এত সুন্দর রঙ কীভাবে আসবে? সেই রেসিপিই রইল আপনাদের জন্য। আরও পড়ুন: Chicken Fajita: ঘরে কেবল কয়েকটা সবজি আর অল্প চিকেন পড়ে আছে? বানিয়ে ফেলুন চিকেন ফাহিতা
অন্যান্য চিকেনের ঝোলের রেসিপি থেকে এটি খুব বেশি আলাদা কিছু নয়। তবে এর মধ্যেই এমন কিছু টিপস পাবেন, যেগুলি মেনে চললেই এমন সুন্দর গাঢ় লাল ঝোল হবে। তাছাড়া এই রেসিপিটা প্রেসার কুকারেও করতে পারেন। চিকেন ভাল সেদ্ধ হবে, ঝোলও সুন্দর হবে। সবচেয়ে বড় কথা, গ্যাস খরচও কম হবে। তাই বেশি সময় নষ্ট না করে, এক নজরে দেখে নিন রেসিপি।
চিকেনের লাল ঝোল রেসিপি
উপকরণ
- চিকেন- ১ কেজি
- টক দই- ১৫০ গ্রাম
- সম পরিমাণে আদা-রসুন একসঙ্গে বাটা- ২ চামচ
- মাঝারি আকারের পেঁয়াজ- ৩টি, খুব মিহি করে কাটা
- মাঝারি আকারের আলু- ৩টি, ডুমো করা
- গোটা গরম মশলা- ৩টি ছোট এলাচ, ২ টুকরো দারচিনি
- তেল- ১০০-১৫০ এমএল
- গুঁড়ো মশলা- ১ চামচ জিরে, ১ চামচ ধনে, ৩ চামচ হলুদ, ২-৩ চামচ কাশ্মিরী লঙ্কা গুঁড়ো, ১ চামচ ঝাল লঙ্কা গুঁড়ো, ১/২ চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো।
- ১/২ চামচ চিনি, স্বাদ মতো নুন
প্রণালী
- প্রথমে দইটা ভাল করে ফেটিয়ে নিন। এবার সেটা চিকেনে দিয়ে ভাল করে ম্যাসাজ করুন। এভাবে সারারাত রাখতে পারলে খুব ভাল। নয় তো অন্তত ১ঘণ্টা ম্যারিনেট করার চেষ্টা করুন। দইয়ের অ্যাসিড প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে। এতে চিকেন অনেক দ্রুত নরম হয়ে যায়।
- এর পর আলুতে নুন ও হলুদ মাখিয়ে নিন। প্রেসার কুকার বা কড়ায় তেল গরম করুন। আলু বেশ লাল করে ভেজে তুলে নিন।
- এবার সেই তেলেই গোটা গরম মশলা দিন। তেলের মধ্যেই ১/২ চামচ চিনি দিন। এক্ষেত্রে বলে রাখি, চিনি শুনে বাঙালরা 'ঘটি ঘটি' করে রে রে করে তেড়ে আসবেন না! এই সামান্য চিনিতে চিকেন মিষ্টি হবে না। তবে যেটা হবে, সেটা হল, চিনিটা গরম তেলে গলতে শুরু করবে। পরে আস্তে আস্তে 'ক্যারামেলাইজ' হয়ে কালচে লাল হয়ে যাবে। এটি সুন্দর রঙের অন্যতম রহস্য।
- চিনি যেন পুড়ে না যায়। তাই এরপরেই পেঁয়াজ কুচি দিয়ে দিন। পেঁয়াজ যেন খুব মিহি কুঁচনো হয়। পেঁয়াজটা হালকা বাদামি করে ভাজুন।
- পেঁয়াজে রঙ এসে গেলে আদা-রসুন বাটা দিন। পুরোটা এক-দেড় মিনিট ভাজুন।
- এরপর স্টোভের আঁচ কমিয়ে দিন। গুঁড়ো মশলাগুলো দিয়ে দিন। বেশি আঁচ থাকলে মশলা জ্বলে যাবে। মশলাগুলো পেঁয়াজ, আদা-রসুন বাটার সঙ্গে ভাজুন। এর ফলে মশলার কাঁচা গন্ধটা চলে যাবে। মশলার এক গাঢ় নিজস্ব গন্ধ আসবে।
- তাছাড়া এই গুঁড়ো মশলার মধ্যেই লক্ষ্য করুন, বেশ খানিকটা হলুদের কথা বলা হয়েছে। এই হলুদ বেশি হলে তা সুন্দর রঙ আনতে সাহায্য করবে। তবে চিন্তা করবেন না, তেলে ভাল করে কষিয়ে নিলে হলুদের কাঁচা গন্ধের কোনও সম্ভাবনা নেই। সেই সঙ্গে কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়োটাও এই রঙ আনবে। দুইটিই ১ মিনিট কষানো গুরুত্বপূর্ণ।
- মশলা ১ মিনিট কষিয়েই এবার অল্প জল দিন। কড়া বা প্রেশার কুকারের তলায় লেগে যাওয়া মশলাটা খুন্তি দিয়ে ছাড়িয়ে নিন। পুরো ব্যাপারটা কষান। দেখবেন তেল ছাড়তে শুরু করেছে।
- এবার ম্যারিনেট করে রাখা চিকেন দিন। স্বাদ মতো নুন ও গোলমরিচ দিন। কষাতে শুরু করুন। নুনের দেওয়ার পর চিকেন থেকে তার জল ছাড়তে শুরু করবে। হাই ফ্লেমে কষাতে থাকুন।
- এভাবে ৮-১০ মিনিট কষালেই চিকেনের গায়ে হালকা রঙ এসে যাবে। তেল ছাড়তে শুরু করবে মশলা থেকে। এবার ভেজে রাখা আলুটা দিয়ে দিন।
- জলের পরিমাণটা এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ১ কিলো চিকেন থেকেই অনেকটা জল বের হবে। যে কটা সার্ভিং হবে, সেই অনুযায়ী জল মাপুন।
ধরুন আপনার বাড়ির ৩ জন সদস্য। তাহলে, দুপুর ও রাতে আধ বাটি করে দিনে মোট ১টি ছোট বাটির সমান ঝোল লাগবে। ৩ জনের মোট ৩ বাটি। এদিকে চিকেন থেকেই ১ বাটি জল ছাড়বে। তাই এক্ষেত্রে ২ বাটি জল দিলেই যথেষ্ট।
- প্রেসার কুকারে করলে জল বাস্প হয়ে কম বের হবে। তাই চিন্তা নেই। চিকেন আর আলু মোটামুটি ঝোলে ঢাকলেই যথেষ্ট। আর কড়ার ক্ষেত্রে প্রথমে অল্পই জল দিন। পরে শুকিয়ে আসছে মনে হলে জল দিতে পারেন।
- এবার প্রেশার কুকার হাই ফ্লেমে দিয়ে ১টি সিটি দিন। সিটি হওয়ার পর ১০-১৫ মিনিট ওভাবেই রেখে, তারপর ঢাকনা খুলুন।
- কড়াতে রান্না করলে, হালকা আঁচে চিকেন ও আলু সেদ্ধ হওয়ার অপেক্ষা করুন। পারলে ঢাকা দিয়ে রাখুন।

- চিকেন সেদ্ধ হয়ে উপরে তেল ভেসে উঠবে। দেখলে মনে হবে অনেক বেশি তেল দেওয়া। কিন্তু আসলে, চিকেনের ফ্যাট, টক দইয়ে থাকা ফ্যাট গলে উপরে চলে আসে। প্রেসার কুকারে এই ব্যাপারটা আরও ভাল হয়।
এবার গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন রবিবারের দুপুরের লাল ঝোল। রাতে রুটির সঙ্গেও জমে যাবে। সঙ্গে একটু স্যালাড কেটে নিতে ভুলবেন না।