চার বছর ধরে প্রেম করছি। এর আগে স্বল্প সময়ের জন্য প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছি। কিন্তু সেগুলির কোনওটাই খুব বেশি দূর এগোয়নি। বর্তমান সম্পর্কটা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। দুই বাড়িতেও জানে। কিন্তু এখন পড়েছি এক সমস্যায়। এর থেকে কী করে মুক্তি পাব, সোটি জানি না।
একটু গোড়া থেকেই শুরু করা যাক। আমাদের পরিচয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও তার পরে আমরা জানতে পারি, আমাদের দুই বাড়ি খুব একটা দূরে নয়। দুটোই দক্ষিণ কলকাতায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন পরিচয়, তখন আমি কলেজ থেকে পাশ করে একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতে শুরু করেছি। আমার প্রেমিকও চাকুরিরত। আস্তে আস্তে দেখাসাক্ষাৎ শুরু হল। সেটিই ক্রমে বেশ গভীর প্রেমের দিকে এগোতে লাগল।
এমনিতে আমাদের সম্পর্কটা বেশ ভালো। আমার প্রেমিক আমায় ভালোবাসে। সেটি নিয়ে কোনও সমস্যাই নেই। ক্রমে বিষয়টি এমন জায়গায় গেল, দুই বাড়িতেই বিষয়টি জানাজানি হল। দুই বাড়ির তরফেও কোনও আপত্তি নেই। ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই হয়তো আমাদের বিয়েও হয়ে যাবে। কিন্তু আমার প্রেমিকের একটি অদ্ভুত ইচ্ছা আমার জন্য খুব অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের প্রেম বেশ ঘোষিত ভাবে শুরু হয়ে যাওয়ার পরে কখনও কখনও ফোনে বা টেক্সট মেসেজে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে নানা কথা হত। ও নিজে ওর নানা ধরনের ফ্যান্টাসির কথা বলত। তার সব ক’টা কথা যে আমার খারাপ লাগত তাও নয়। খুব কল্পনাপ্রবণ। ফলে মাঝে মধ্যে শুনতে ভালোই লাগত। কিন্তু একটি বিষয়ের উপর ও খুব জোর দিত। তা হল প্রকাশ্যে, মানে খোলা জায়গায় বা খোলা আকাশের নীচে শারীরিকভাবে মিলিত হওয়ার বিষয়। আমি কথা শুনে মজা পেতাম। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যে ও খুব সিরিয়াস, তা বুঝতে পারতাম না। বিষয়টি যে ওর কাছে খুব সিরিয়াস, তা টের পেলাম বছর খানেক যেতে না যেতেই।
আমার সেবার বেড়াতে গিয়েছিলাম। যেখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম, সেই জায়গাটা জঙ্গল। যদিও বাড়িতে বলে গিয়েছিলাম, কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে যাচ্ছি, কিন্তু গিয়েছিলাম শুধু আমরা দু’জন। এমন বেশ কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ এসে গিয়েছিল, যখন প্রকৃতির মাঝে শুধু আমরা দু’জন, আর কেউ নেই। আমার প্রেমিকের ফ্যান্টাসির বিষয়টি কতটা সিরিয়াস, সেটি তখন টের পাই। প্রাথমিক ভাবে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আমার আপত্তি ছিল না। কিন্তু একটা সময় দেখলাম, ও ওই খোলা জায়গাতেই পুরোপুরি মিলিত হতে চাইছে। বিষয়টি নিয়ে আমার যে অস্বস্তি আছে, সেটি বুঝতেও পারছে না বা চাইছে না। কোনও রকমে সেবার ওকে নিরস্ত করি।
বাড়ি ফেরার পরে বা বাকি সময় আমদের সম্পর্ক একদম স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে। ধীরে ধীরে বিয়ের কথাও শুরু হয়। তার পরে একবার ঠিক হয়, আমরা ট্রেক করতে যাব। সেবারও দুই বাড়িতে বলা হয়, সঙ্গে আরও কয়েক জন বন্ধু যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাই আমরা দু’জনেই। সেখানেও সেই কাণ্ড!
ট্রেকের সময়ে আমরা দু’জনেই ছিলাম। সঙ্গে আর কেউ ছিলেন না। এক দিন পাহাড়ের পথে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে উঠতে উঠতে একটা ফাঁকা জায়গা পড়ে। আমরা কিছুটা বিশ্রামের জন্য সেখানে দাঁড়াই। তখনই ওর মনে হয়, কিছুটা ঘনিষ্ঠ হবে। ক্রমে আমরা একটু আড়ালে একটি জায়াগায় সরে যাই। ঘনিষ্ঠতার পরিমাণ বাড়তে থাকে। এবং সেই প্রথম বার আমি বাধ্য হই ওর কথা মেনে নিতে।
ভেবেছিলাম, সেখানেই বিষয়টি হয়তো শেষ। কিন্তু তার পরেও আরও একবার একই ঘটনা ঘটে। এমনকী তার দু’দিন বাদে আমরা বিপদেও পড়ি।
একই ভাবে ও জোর করে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে। আমরা রাস্তা থেকে একটু সরে যাই। ঠিক তার একটু পরেই বয়স্কদের একটি গ্রুপ সেই রাস্তায় এসে হাজির হয়। নারী-পুরুষ মিলিয়ে অন্তত জনা সাত-আট। ভাগ্য ভালো ওঁরা আমাদের শব্দ শোনেননি বা খেয়াল করেননি। সেদিন বরাত জোরে বাঁচি। না হলে কী কেলেঙ্কারি যে হত, কে জানে!
এখন আমাদের বিয়ে মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছে। হয়তো আগামী বছরেই সব হয়ে যাবে। কিন্তু আমি আতঙ্কে আছি। বিশেষ করে ওর সঙ্গে বেড়াতে যেতে। এই অদ্ভুত ফ্যান্টাসির থেকে মুক্তি পাব কী করে? যদি রাজি না হই, তাহলে কি পরে সমস্যা দেখা দিতে পারে? ভেঙে যেতে পারে কি সম্পর্ক? কী করব?
বিশেষজ্ঞের জবাব:
সম্পর্কবিদ মৌমিতা গুপ্ত এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য:
বেশির ভাগ মানুষের যৌনতা নিয়ে নানা ধরনের ফ্যান্টাসি থাকে। সেগুলো থাকার মধ্যে অস্বাভাবিকত্ব নেই। বিশেষত যত ক্ষণ না সেগুলি সঙ্গে মানুষটির সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তত ক্ষণ যৌথ ইচ্ছায়, তাঁরা সেগুলি পূরণ করতেই পারেন। কিন্তু আপনার প্রেমিকের বিষয়টির ক্ষেত্রে কয়েকটি কথা মাথায় রাখতে হবে।
প্রথমত, আপনার প্রেমিকের যে জাতীয় ফ্যান্টাসি রয়েছে, তা মোটেই বিরল কিছু নয়। এমন ফ্যান্টাসি অনেকেরই থাকে। অনেকেই চান, তাঁর সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে খোলা জায়গায় বা খোলা আকাশের নীচে প্রকৃতির মাঝে মিলিত হতে। অনেকেই এ জন্য বাড়ির ছাদ বা নির্জন প্রকৃতির মাঝে কোনও জায়গা বেছে নেন। সেই পর্যন্ত কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু অন্য একটি বিষয় খুব জোর দিতে মনে রাখা উচিত।
আপনার প্রেমিকের বা আরও অনেকের এই জাতীয় ইচ্ছা থাকতেই পারে, কিন্তু তা যেন অন্যের অস্বস্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত যুগল যখন ঘনিষ্ঠ অবস্থায়, তখন যদি সেখানে কোনও রক্ষণশীল মানসিকতার বয়স্ক মানুষ হাজির হন, তা তাঁদের কাছে বিস্তর অস্বস্তির হয়ে দাঁড়াতে পারে। শুধু তাই নয়, খুদে সন্তানদের নিয়ে কোনও বাবা-মা সেখানে এলে আর এক ঝামেলা। পুরোপুরি সঙ্গমরত না হয়ে কেউ যদি শুধু চুম্বনরত হন, তাতেই সমস্যা হয়। সেখানে পুরোপুরি সঙ্গম হলে তো কথাই নেই। ফলে এই সমস্যাটির দিকে নজর রাখতে হবে।
বিষয়টি শুধু যে মানুষের অস্বস্তির প্রশ্ন, তাও নয়। এটিও মনে রাখতে হবে, ভারতীয় আইনে বিষয়টি দণ্ডনীয়ও। মুক্ত জায়গায় যুগলের ঘনিষ্ঠ হওয়া আইন সমর্থন করে না। যদিও ঘনিষ্ঠতার মাত্রা কতটা হলে, সেটিকে অপরাধ বলা হবে, তা নিয়ে নানা মত আছে, কিন্তু মোটের উপর বিষয়টি আইনিভাবে সমর্থন যোগ্য নয়, তা মাথায় রাখা উচিত।
এছাড়াও বাড়ির বাইরে এমন ধরনের সম্পর্কের আরও কিছু বিপদ থাকে। বিশেষ করে সেখানে যদি তেমন গণ্ডগোলের লোকজন এসে যায়, তা হলে বিপদের সীমা থাকবে না। এগুলোও মনে রাখতে হবে।
এবার আসা যাক, আপনার বিষয়ে। আপনার প্রেমিকের খুব পছন্দের একটি বিষয়, বা বলা ভালো তীব্র ফ্যান্টাসির একটি বিষয় আপনার পছন্দ নয়। এমন হলে আপনি কী করবেন? এর উত্তরটা খুব সহজ। আপনি বলবেন, এটায় আপনি রাজি নন। তাতে যদি তাঁর খারাপ লাগে, তাহলে কিছু করার নেই। কিন্তু আপনি যদি তাঁকে না হারাতে চান, এবং সেই জন্য তাঁর ফ্যান্টাসি পূরণ করতে রাজি হয়ে যান, তাহলে তাঁরও উচিত, আপনার যাতে অস্বস্তি হয়, তেমন কিছু না করার। আর সেটিই তো এই ধরনের সম্পর্কের গোড়ার কথা।
কোনও লিখিত চুক্তি না থাকলেও যখন একটি প্রেমের সম্পর্ক চলে, তখন ধরে নিতে হয় দুটো মানুষই এমন কোনও কাজ করবেন না, যা অন্য জনকে অস্বস্তিতে ফেলে। সেই দায়িত্ব আপনার প্রেমিকের বা ভবিষ্যৎ বরেরও আছে। আর সেই বিষয়টির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, তাঁর দায়িত্ব।
আর যদি দেখাতে না পারেন? তাহলে এই সম্পর্ক এমনিতেও এক না একদিন দুর্বল হয়ে যাবে। তার জন্য যৌন ফ্যান্টাসি পূরণ না হওয়ার দরকার হবে না, অন্য কোনও না কোনও কারণ ঠিক বেরিয়ে আসবে। ফলে গোড়া থেকেই ওঁকে বুঝিয়ে দিন, সবটা ওঁর মতো করে হবে না। আপনার পছন্দ-অপছন্দের দাম আছে। না হলে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ মোটেই উজ্জ্বল নয়।