সারা দেশে প্রায় ৫৮ লক্ষ মৃত্যুর কারণ হল অসংক্রামক রোগ। আর দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ এই কারণেই প্রাণ হারান। এমনকী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে মোট এনসিডি-সংক্রান্ত মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মৃত্যুর ঘটনা ভারতেই ঘটে। এনসিডি অর্থাৎ নন কমিউনিকেবল বা অসংক্রামক রোগের ফলে ধেয়ে আসা অকাল মৃত্যু, দেশের শ্রমশক্তি, উৎপাদনশীলতায়, যথেষ্ট কুপ্রভাব ফেলে। অনুমান করা হয় যে এনসিডিতে প্রতি ১০ শতাংশ মৃত্যু বৃদ্ধি, বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ০.৫ শতাংশ হ্রাস ঘটায়।
ভারতে রোগের ব্যাপক প্রভাব
আর কার্ডিওভাসকুলার রোগগুলি বেশিরভাগ মানুষের, এনসিডিতে মৃত্যুর জন্যই দায়ী। বার্ষিক ১৭.৯ মিলিয়ন মানুষ এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন। তারপরে ৯.৩ মিলিয়ন মানুষ ক্যানসারে প্রাণ হারান। দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগে ৪.১ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারান, এবং ডায়াবেটিসের কারণে কিডনি রোগে মৃত্যু হয় প্রায় ২.০ মিলিয়ন মানুষের।
কী বলছেন ডাক্তাররা
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, কেরালার ওয়েস্টফ্রন্ট হাইটেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি এইচওডি ডাঃ মোহানান পাদিনহারে বলেছেন, তামাকের ব্যবহার, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং অ্যালকোহলের ক্ষতিকর ব্যবহার, সবই এনসিডির ঝুঁকি বাড়ায়।তামাক প্রতি বছর ৮ মিলিয়নেরও বেশি মৃত্যুর জন্য দায়ী।
১.৮ মিলিয়ন বার্ষিক মৃত্যুর জন্য অতিরিক্ত লবণ/সোডিয়াম খাওয়াকে দায়ী করা হয়েছে। অ্যালকোহল ব্যবহারের জন্য দায়ী ৩ মিলিয়ন বার্ষিক মৃত্যু হয় অর্ধেকেরও বেশি ক্যানসার সহ এনসিডি থেকে। প্রতি বছর ৮৩০,০০০ মৃত্যুর জন্য অপর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমকে দায়ী করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেনইন্টারভেনশিয়াল কার্ডিওলজিস্ট এবং এইচওডি এএমআরআই মনিপাল হাসপাতালের ডাক্তার প্রকাশ কর হাজরা।
ডঃ হাজরা আরও বলেছেন, অতিরিক্ত ওজন/স্থূলতা, হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজের উচ্চ মাত্রা); এবং হাইপারলিপিডেমিয়া (রক্তে চর্বির উচ্চ মাত্রা) এনসিডির ঝুঁকি বাড়ায়। আবার বায়ু দূষণের কারণেও এনসিডি উসকানি পায়। বিশ্বব্যাপী ৬.৭ মিলিয়ন মৃত্যুর জন্য দায়ী এই দূষণ।
সমীক্ষায় বিস্ফোরক তথ্য
ডায়াবেটিস এবং বিপাকীয় এনসিডিগুলির প্রভাব বোঝার জন্য সম্প্রতি, ভারতের ২৮ রাজ্য, দু'টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং দিল্লির জাতীয় রাজধানী অঞ্চল মিলিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।
দেখা গিয়েছে যে, ভারতে এখন বিপাকীয় এনসিডি-র প্রাদুর্ভাব আগের অনুমানের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২১ সালের এই সমীক্ষা অনুসারে, ১০১ মিলিয়ন লোকের ডায়াবেটিস ছিল এবং প্রিডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৩৬ মিলিয়ন। ভারতে প্রায় ৩১৫ মিলিয়ন লোকের উচ্চ রক্তচাপ ছিল, ২৫৪ মিলিয়নের সাধারণ স্থূলতা ছিল এবং ৩৫১ মিলিয়নের পেটে স্থূলতা ছিল। এছাড়াও, ২১৩ মিলিয়ন লোকের হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া ছিল এবং ১৮৫ মিলিয়নের উচ্চ এলডিএল কোলেস্টেরল ছিল।
আরও পড়ুন: (Hair care tips: বর্ষায় সেলিব্রিটিরা কীভাবে চুলের যত্ন করছেন, শুনুন তাঁদের মুখেই)
মহিলাদের এই কারণে চিন্তা বেশি
তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এই মৃত্যু এড়াতে, ব্যক্তি ও সমাজের উপর এনসিডি-র প্রভাব কমানোর জন্য, স্বাস্থ্য, অর্থ, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, পরিকল্পনা এবং অন্যান্য সহ সমস্ত সেক্টরকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন কার্ডিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি ড. সৌমিত্র কুমা। সঠিক সময়ে এই রোগগুলি সনাক্তকরণ, স্ক্রিনিং এবং চিকিৎসা করা জরুরি। আর এনসিডির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মহিলাদের আগেভাগে ব্যবস্থা নিতে হবে কারণ মহিলাদের মধ্যে এনসিডি-এর প্রাদুর্ভাব প্রতি ১,০০০ জনে ৬২, যেখানে প্রতি ১,০০০ পুরুষের মধ্যে মাত্র ৩৬।
এর মোকাবিলায় ভারতকে ৩.৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে
ডব্লিউএইচও গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর দ্য প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অফ এনসিডির মতে, ভারত হল প্রথম দেশ, যে এনসিডি থেকে বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে নির্দিষ্ট প্ল্যানিং করছে৷ তাই ২০৩০ সালের মধ্যে এনসিডি থেকে অকাল মৃত্যু এক তৃতীয়াংশ হ্রাস করতে জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। শুধুমাত্র অসুস্থদের চিকিৎসা দিয়ে এনসিডির মহামারী থামানো যাবে না, সুস্থ ব্যক্তিদেরও রক্ষা করতে হবে। এনসিডিগুলির জন্য প্রধান ঝুঁকির কারণগুলি হ্রাস করা অবশ্যই জরুরি। যদিও, ২০৩০ সালের মধ্যে এই উন্নত লক্ষমাত্রা অর্জন করতে হলে, ভারতকে ২০৩০ সালের মধ্যে এনসিডিগুলি ভারতকে প্রায় ৩.৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে।