রণবীর ভট্টাচার্য
কোভিড নিয়ে দুশ্চিন্তা কমেছে আগেই, পর্যটনের হাল ফিরছে, মানুষ আবার সাহস করে ঘুরতে বেরোচ্ছেন। ঠিক এই সময়েই কলকাতা উপহার পেল নতুন তাজ বেঙ্গল, পুরনো সুইসোটেলের জায়গায়, নব কলেবরে, নতুন রূপে এবং অবশ্যই নতুন আশা নিয়ে। ১৩৭টি ঘর, ১০টি স্যুইট, ৬টি ব্যাঙ্কয়েট হল এবং দুটো রেস্তোরাঁ নিয়ে যাত্রা শুরু হল শনিবার। মুম্বাইয়ের মতো এই তাজেও থাকছে বিখ্যাত ‘শামিয়ানা’, আর শিল্পকলার উৎকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে প্রতিটি ঘরে। শুধু তাই নয়, প্রতিটি ঘরের কার্পেটে রয়েছে গুগল ম্যাপের মতো করে বানানো সুন্দর আঁকিবুঁকি। কলকাতার এই নতুন তাজকে মোটেই বাজেট পাঁচতারা হোটেল বলা যাবে না। তবে মধ্যবিত্ত বাঙালি এক রাত কাটিয়ে আসতেই পারেন, যখন বুকিং শুরু হচ্ছে ৭৫০০ টাকা থেকে!
ঠিক দু’বছর আগের কথা। কোভিড তখন শিয়রে, প্রথম ঢেউয়ের মাঝেই জানা গিয়েছিল যে অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের সঙ্গে ফরাসি হসপিটালিটি চেন অ্যাকরের চুক্তির পুনর্নবীকরণ হয়নি, আর তাই পুরোপুরি বন্ধ হতে চলেছে সুইসোটেল।
পর্যটন এবং হোটেল ব্যবসার অনেকেই মুষড়ে পড়েছিলেন খবরটি শুনে। ঠিক দুই বছর পর তাজের হাত ধরেই ফিরে এল প্রাণ সেখানে। এই বিষয়ে তাজ বেঙ্গল সিটি সেন্টার - নিউটাউনের উদ্বোধনে অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান তথা প্রখ্যাত শিল্পপতি হর্ষবর্ধন নেওটিয়া জানালেন, ‘সম্পূর্ণ নতুন রূপে কলকাতার পাঁচতারা হোটেলের মানচিত্রে যোগ দিল এই তাজ বেঙ্গল। আমরা খুবই গর্বিত তাজ গ্রুপের সঙ্গে এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকতে পারে। প্রায় ১৫ মাস সময় লেগেছে পুরোদস্তুর তৈরি হতে। কোভিডের জন্য একটু বিলম্ব হলেও এই তাজ বেঙ্গল তৈরি আপনাদের স্বাগত জানানোর জন্য। আপাতত ১০ বছরের চুক্তি হয়েছে। এই হোটেলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে বাংলার শ্বাস প্রশ্বাস এবং আমরা আশাবাদী আগামী দিনে অচিরেই মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠবে এই তাজ বেঙ্গল।’
টাটা তথা তাজ গ্রুপের সুনাম সর্বত্র। শুধু পরিষেবা এবং আতিথেয়তা নয়, সামগ্রিক দিক থেকেই ভারত এবং ভারতের বাইরে একটি বিশ্বমানের ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে পুনিত চটওয়াল, ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও, আইএইচসিএল জানান, ‘কলকাতাকে সারা বিশ্ব চেনে বুদ্ধিমত্তা ও সাবেকিয়ানার জন্য। সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে তারিফ করেন এখনকার মানুষ। এই সমস্ত আঙ্গিক আমরা রাখার চেষ্টা করেছি এই নতুন তাজ বেঙ্গলে। শুধু পর্যটন নয়, ব্যবসায়িক দিক থেকেও লাভজনক হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। ১৯০৩ সালে বোম্বে শহরে তৈরি তাজমহল প্ল্যালেস থেকে কলকাতার এই নতুন তাজ বেঙ্গল, আমরা সব সময়ই দায়বদ্ধ থেকেছি আমাদের অতিথিদের থেকে। তবে আমাদের লক্ষ্য ব্যবসায় মুনাফা নয়, বরং সমাজকে নতুন কিছু উপহার দেওয়া, যাতে পরিষেবা হোক কিংবা আতিথেয়তা, আমরা সেরা কিছু দেওয়ার জায়গায় থাকি। আশা রাখছি, মানুষ সব সময়ের মতো আমাদের পাশে থাকবেন।’
ভৌগলিক দিক থেকে, এই তাজ বেঙ্গলের খুব কাছেই রয়েছে দমদম বিমানবন্দর, কলকাতা ও সল্টলেক ঢিল ছোড়া দূরত্বে, ইকো পার্ক একদম নাকে ডগায় আর সেক্টর ফাইভের ব্যবসায়িক কেন্দ্র একদম দোরগোড়ায়। বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারও খুব দূর নয়। তাই আশা করাই যায়, সামনের দিনে, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আসা শিল্পপতি, উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের কাছে এই নতুন তাজ বেঙ্গল খুব সুবিধার হতে পারে। হোটেলের প্রতিটি ঘরের ক্ষেত্রে যে যত্ন নেওয়া হয়েছে, তা তারিফ করার মত। চার তলার স্পেশ্যাল স্যুইটে প্রতিটি ঘরের সাথে রয়েছে জাকুজি, যা কলকাতার ক্ষেত্রে খুব বেশি দেখা যায় না বলা যেতে পারে। কলকাতায় এই মুহূর্তে আইএইচসিএল এর ছয় খানা হোটেল রয়েছে। এছাড়া রাজকুটির ও তালকুটিরের কাজও চলছে। সদ্য সমাপ্ত বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের কথা ধরেই বলা চলে, সামনের দিনে, ব্যবসায়িক দিক থেকে, যথেষ্ট আশা করার সত্যি জায়গা রয়েছে।