চারপাশে যা দেখে, যা বোঝে, সাধারণত তাই করে ছোটরা। এমন পরিস্থিতিতে, শিশুর আচরণের উপর তার বাবা-মায়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি থাকে। প্রত্যেক বাবা-মাই চান তাদের সন্তান সৎ হোক এবং ভালো আচরণ করুক। কিন্তু অজান্তেই বাবা-মা এমন ভুল করে ফেলেন, যার ফলে শিশু মিথ্যা বলতে এবং যে কোনও জিনিস লুকাতে শেখে। মিথ্যা বলাটা হয়তো একটি স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে নিতান্তই সাধারণ, কিন্তু ছোটদের মধ্যে নয়। যদি কোনও শিশু বারবার মিথ্যা বলতে শুরু করে তবে এটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
ছোটরা মিথ্যা বলে কেন
যদি আপনার সন্তান বারবার মিথ্যা বলে, তাহলে সম্ভবত এর পিছনে আপনার কিছু ভুল থাকতেই পারে। আসুন জেনে নিই সেই বড় ভুলের বিষয়ে, যা শিশুদের মিথ্যা বলতে বাধ্য করতে পারে।
সবসময় কঠোর শাসন
যদি বাবা-মা সন্তানের প্রতিটি ভুলকেই বড় সমস্যা করে তোলেন, তাহলে আপনার সন্তান সত্য বলতে ভয় পেতে পারে। যদি কোনও শিশু ছোটখাটো ভুল করে এবং বাবা-মা তাকে খুব বেশি বকাবকি করে অথবা বারবার তার ভুল পুনরাবৃত্তি করে, তাহলে সে পরের বার মিথ্যা বলে পালানোর চেষ্টা করবেই। বারবার বকাবকি এবং উপদেশ দেওয়ার ফলে শিশুটি এটা ভেবে বসে যে সত্য কথা বললে সমস্যা বাড়বে। তাই বাবা-মায়ের উচিত সন্তানদের ছোট ছোট ভুল ক্ষমা করে তাদের সঠিক পথ দেখানো।
সন্তানের প্রতি উচ্চ প্রত্যাশা রাখা
যদি বাবা-মা সবসময় সন্তানের কাছ থেকে উচ্চ প্রত্যাশা রাখেন, তাহলে শিশুটি তা পূরণ করার জন্য মিথ্যা বলতে পারে। যেমন, বাবা-মায়েরা যখন সন্তানকে সর্বদা ক্লাসে টপ কাররা জন্য চাপ দিতে থাকেন, তখন শিশুটি বকা খাওয়ার ভয়ে তার কম নম্বর লুকোনোর জন্য মিথ্যা বলতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে, শিশুকে বুঝতে দিন যে ভুল হলেও সত্য কথা বলা আরও দরকার। তার ক্ষমতা বুঝুন এবং তার উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ দেবেন না।
ছোট বলে তার কথার গুরুত্ব না দেওয়া
যখন বাবা-মা সন্তানের অনুভূতি উপেক্ষা করেন, তখন শিশু তার মতামত প্রকাশ করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারে। অনেক সময় সন্তান কিছু বলতে চায়, এবং সেইসময় যদি বাবা-মা তার কথা গুরুত্ব সহকারে না শোনেন, তাহলে সে তার কথা আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য মিথ্যা বলতে শুরু করে। যদি বাবা-মা সবকিছু অস্বীকার করে বা মজা করে, তাহলে শিশুটি সত্য বলতে লজ্জা পেতে শুরু করে। তাই, বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের কথা মনোযোগ সহকারে শোনা এবং তাকেও সম্মান করা। যদি সন্তান কিছু ভুল করে, তাহলে তাকে ভালোবাসার সঙ্গে সঠিক এবং ভুলের মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়ে দেওয়া।
নিজেই মিথ্যা বলতে যাবেন না
বাচ্চারা বাবা-মায়ের কাজ দেখেই মিথ্যা বলা শেখে। যদি বাবা-মা নিজেরাই মিথ্যা বলেন, তাহলে সন্তানও সেটাকে সঠিক বলে মনে করে। অনেক সময় বাবা-মা ভুল করে এমন কিছু বলে ফেলেন যা বাচ্চাদের মিথ্যা বলতে উৎসাহিত করে, যেমন বাবা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও বলা যে বাবা বাড়িতে নেই, তখন শিশুটি শেখে যে মিথ্যা বলা ঠিকই ব্যাপার। অনেক সময়, বাবা-মা অপ্রয়োজনীয় অজুহাত দেখান বা কথা দিয়ে কথা রাখেন না, যার কারণে শিশুও মিথ্যা বলা, কথা না রাখার বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে মনে করতে শুরু করে। তাই আপনি যদি না চান যে আপনার সন্তান মিথ্যা বলুক, তাহলে নিজেও তার সাথে সৎ থাকুন। ছোট ছোট বিষয়েও সত্য কথা বলার অভ্যাস করুন, যাতে শিশুটিও সততা এবং সত্য কথা বলা শিখতে পারে।