প্রতিবছর এপ্রিল মাসকে 'Parkinson's Disease Awareness Month' হিসাবে মনে করা হয়। এই মাস জুড়ে এমন স্নায়বিক জটিলতার রোগ ঘিরে সতর্কতামূলক বিভিন্ন বার্তা দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, বয়স বার্ধক্যের দিকে গেলে তবেই এই রোগ সাধারণত দেখা যায়। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায় বলে দাবি চিকিৎসকদের। এমন ধরনের রোগে হাত কাঁপতে থাকার মতো বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। ক্রমে শরীরের স্বাভাবিক শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেন অনেকে। এই রোগ নিয়ে নানান সময়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণাও তৈরি হয়। দেখে নেওয়া যাক, পার্কিনসন রোগের উপসর্গ কী কী?
পার্কিনসনের লক্ষণ:
৫০ বছরের পর থেকে এই নিম্নোক্ত লক্ষণ গুলি শরীরে দেখলেই সাবধন হন। এতে ঝুঁকি কমবে রোগের। প্রথমেই রোগ ধরা পড়লে কাটবে সমস্যা।
- হাত যখন কাজ করছে না, তখন যদি একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর হাত কাঁপতে থাকে,তাহলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পার্কিনসনের কাঁপার প্রবণতা একটি হাত, পা, পায়ের পাতা থেকে শুরু হয়। শরীরের দু'টি দিককেই তা প্রভাবিত করে।
- অঙ্গগুলি হঠাই শক্ত হয়ে যাওয়াও এই রোগের একটি লক্ষণ।
-মুখের ধরনে সামান্য পরিবর্তন, আর তার সঙ্গে হাঁটা চলায় ধীর গতি আসতে শুরু করে।
-ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা। আর পিছনের দিকে পড়ে যাওয়া। আরও পড়ুন-শিশুর মেনিনজাইটিস হয়েছে কীভাবে বুঝবেন? এমন রোগ সারিয়ে তোলার উপায় একনজরে
পার্কিনসনের ভয়াবহ কিছু লক্ষণ:
- পার্কিনসনের ক্ষেত্রে অনেক সময় বয়স্কদের ভাবনা চিন্তায় সমস্যায় হয়। খুঁজে পাননা শব্দ। সবার বিষয়ে সমান মানসিকতা রাখতে আরম্ভ করেন।
-অবসাদ পার্কিনসের একটি বড় দিক। স্নায়ুগতভাবে অনুভব করার শক্তি ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। গন্ধ বা দুর্গন্ধ সহজে নাকে যায় না। চোখে 'ড্রাই আই' সমস্যা দেখা যায়। খুব দুর্বল লাগে।
-পার্কিনসনের সমস্যা সহজেই হজমশক্তি কমিয়ে দেয়। ফলে হজমে কষ্ট হয়। শুরু হয় কোষ্ঠকাঠিন্য।
-এই রোগের জটিলতায় মাঝে মাঝেই ব্ল্যাক আউট, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়। ব্লাড প্রেশারগত সমস্যাও থাকে।
-এই সমস্যার জেরে মানসিক বিভিন্ন জটিলতা দেখা যায়। ফলে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
-যদি সঙ্গমের ইচ্ছা কমে যায়, তাহলে তাও পার্কিনসনের মতো রোগকে আশকারা দিতে পারে। পার্কিনসন হলে শোবার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়।
-বারবার মূত্রের প্রবণতা দেখা যায় পার্কিনসনে। ফলে সেদিক থেকেও থাকতে হবে সতর্ক।
-হাতের লেখা ছোট হতে থেকে অনেক ক্ষেক্রে বিন্দুতে মিশে যায়।
পার্কিনসনকে হারিয়ে দেওয়া সম্ভব:
চিকিৎসকরা বলছেন, বংশে এই রোগের ইতিহাস থাকলে তা পরবর্তী প্রজন্মকেও আক্রান্ত করে। মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত এই রোগের ঝুঁকি বিভিন্নভাবে বাড়ে। তবে পার্কিনসন মানেই সব লড়াই ছেড়ে বসে থাকা নয়! সময়মতো সঠিক চিকিৎসা হলে তা সেরেও যায়।
পার্কিনসন থেকে দূরে থাকতে কী কী করণীয়?
ডায়েট- ফাইবার ও ফ্লুইড , এই দুইই রয়েছে যে ডায়েটে সেই ডায়েটেই পার্কিনসনের মতো রোগকে হারিয়ে দেওয়া যায়। সহজে দেহে কোষ্ঠ কাঠিন্য দানা বাঁধতে দেবেন না।
ফিজিওথেরাপি-ফিজিওথেরাপি করলে পেশীর সমস্যা ঠিক হয়ে যায়। জয়েন্ট পেন কমে যায়।
অক্যুপেশানাল থেরাপি- এই থেরাপি দিয়ে বোঝা যায় সমস্যা কোথায় রয়েছে। ফলে কাছে পিঠে হাঁটা, জামা কাপড় পড়ার ক্ষেত্রে কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা বুঝে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়।
মেডিটেশন- প্রতিদিন করুন যোগ। যোগ অভ্যাসের ফলে শারীরিক সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।
অপারেশন- রোগের গভীরতার উপর নির্ভর করে সার্জারির সিদ্ধান্ত। মস্তিষ্কে ডিপ ব্রেন স্টিমিউলেশন সার্জারি করলে এবং সঠিক ওষুধ খেলে কিছুটা কাটানো যায় পার্কিনসনের সমস্যা।