এক বীভৎস সময়ের সমানে এসে দাঁড়িয়েছে মানুষের ভবিষ্যৎ। এই বীভৎসতার পিছনে ভূমিকা রয়েছে প্লাস্টিকের। এই ঘটনা আরও বেশি করে প্রমাণিত হল হালের এক ঘটনায়। মায়েদের বুকের দুধে প্লাস্টিকের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি এক পরীক্ষা বিজ্ঞানীদেরও হতভম্ব করে দিয়েছে। একজন-দু’জন নন, সম্প্রতি ৩৪ জন মহিলাকে নিয়ে একটি পরীক্ষা করেছিলেন তাঁরা। তাঁরা প্রত্যেকেই সদ্য মা হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই রীতিমতো সুস্থসবল এবং প্রচলিত অর্থে নীরোগ। এমন ৩৪ জন মায়ের স্তন্য পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা যা পেয়েছেন, তা ভয়াবহ। দেখা গিয়েছে, ৭৫ শতাংশ দুধেই রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এছাড়াও উদ্বেগ বাড়িয়ে দেওয়ার মতো আরও বেশ কিছু রাসায়নিকের সন্ধানও পাওয়া গিয়েছে এতে।
হালে এই পরীক্ষাটি চালানো হয়েছে রোমে। সেখানে দীর্ঘ দিন ধরেই মায়েদের এবং সন্তানদের স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিজ্ঞানীরা। বেশ কয়েকটি পরীক্ষা পরে ভয়ঙ্কর কিছু তথ্য হাতে আসে। তার পরেই এই পরীক্ষাটি চালান তাঁরা।
চিকিৎসকদের মতে, মায়ের দুধ সন্তানের পুষ্টি এবং ভবিষ্যৎ সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্যাকেট বন্দি বা আলাদা করে পরীক্ষাগারে বানানো কোনও খাবার বা পানীয়ই এর বিকল্প হতে পারে না। আর সেই কারণেই চিকিৎসকরা বেশির ভাগ মাকেই স্তন্যপান করানোর পরামর্শ দেন।
কিন্তু হালে যে তথ্য বিজ্ঞানীদের হাতে এল, তা রীতিমতো আতঙ্কিত করেছে তাঁদের। তাহলে কি আর মায়ের দুধও নিরাপদ থাকছে না? দূষণ এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতি সেদিকেই এগিয়ে চলেছে— এমনই মত বিজ্ঞানীদের।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কী পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা?
হবু বা বা যাঁরা সদ্য মা হয়েছেন, তাঁদের কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এঘুলি মেনে চললে, অনেক ক্ষেত্রেই বুকের দুধে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ কমানো যেতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
- প্রথমেই বাদ দিতে বলছেন প্লাস্টিকের প্যাকেট বা কৌটোয় রাখা খাবার। তাঁদের মতে, এগুলি থেকে খাবারে সবচেয়ে বেশি মিশছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। সেগুলি রক্তের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে স্তনে।
- এর পাশাপাশি প্লাস্টিকের পাত্রে বা বোতলে রাখা জলও এড়িয়ে চলতে বলছেন তাঁরা।
- খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে বলা হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ বা প্রাণী। এগুলির শরীরেও ব্যাপক মাত্রায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। যা শরীরে ঢুকছে খাবারের সঙ্গে।
- এর সঙ্গে এমন টুথপেস্ট বা প্রসাধনী ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যেগুলি প্লাস্টিকের কৌটো বা টিউবে আসে।
- এমনকী সিন্থেটিক জামাকাপড় থেকেও মাইক্রোপ্লাস্টিক ঢুকতে পারে শরীরে। ত্বকের ছিদ্রপথ তো বটেই তার পাশাপাশি মুখ দিয়েও ঢুকতে পারে এই মারাত্মক বস্তুটি।
বিজ্ঞানীরা শিশুদের জন্যও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।
- প্রথমত, প্লাস্টিকের ফিডিং বোতলে খাওয়ানোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এটি থেকেও মাইক্রোপ্লাস্টিক শিশুদের শরীরে যেতে পারে।
- গরুর দুধ শিশুদের খাওয়ানোর বিষয়ে সতর্ক করেছেন তাঁরা। কারণ গরুর দুধে মারাত্মক পরিমাণে এই প্লাস্টিকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
সব মিলিয়ে মানব জাতির ভবিষ্যৎ এক ভয়ঙ্কর পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। এমনই আশঙ্কা তাঁদের। প্লাস্টিক পুরোপুরি বর্জন না করলে এই অবস্থার আরও অবনতি হবে বলেই আশঙ্কা।