এপার বাংলা আর ওপার বাংলার সংস্কৃতিতে অনেক মিল। কিন্তু দুই বাংলায় এক দিনে পয়লা বৈশাখ পালন করা হয় না। পশ্চিমবঙ্গে পালন করা হয় ১৫ এপ্রিল। কিন্তু বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল। এর কারণ জানেন?
বাংলাদেশের ক্যালেন্ডারের ইতিহাস
বাংলাদেশ যখন ব্রিটিশ শাসিত ভারতের অংশ ছিল তখন ভারতীয় বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাকে সরকার ১৯৫২ সালে পঞ্জিকা সংস্কারের দায়িত্ব দেয়। সেই পঞ্জিকা অনুসারে, পয়লা বৈশাখ ছিল ১৪ এপ্রিল। যদিও মেঘনাদ সাহা যে সংস্কারটি করেন, তা কার্যকর হয়নি।
পরে পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববঙ্গে ১৯৬৬ সালে ড. মহম্মদ শহিদুল্লাহের পরিচালনায় একটি কমিটি পুরনো বাংলা দিনপঞ্জির সংশোধ করে। প্রথম পাঁচ মাসকে ৩১ দিন, আর বাকি মাসগুলিকে ৩০ দিন বানানো হয়। প্রতি অধিবর্ষে ফাল্গুন মাসে ৩১ দিন ধার্য করা হয়। যদিও প্রথমে এই পঞ্জিকাও কারযকর হয়নি। পরে ১৯৮৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে এই পঞ্জিকা গ্রহণ করে। এরপর, জাতীয় দিনপঞ্জির সূচনা ও প্রতি বছর নববর্ষ ১৪ এপ্রিলেই হয়ে থাকে।
পশ্চিমবঙ্গের থেকে আলাদা কেন?
ভারতের রাজ্যগুলিতে যে দিনপঞ্জি ব্যবহার করা হয়, তা সংস্কৃত গ্রন্থ সূর্যসিদ্ধান্তে উপর ভিত্তি করে লেখা। ভারতে পঞ্জিকা-সংস্কারের উদ্যোগ প্রথমে নেওয়া হয় মহারাষ্ট্রে।
শহিদুল্লাহ্ বাংলা অ্যাকাডেমির পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির প্রধান ছিলেন। তাঁর সংস্কারের পর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি টাস্কফোর্স কমিটির সংস্কার প্রস্তাবনার উন্নয়ন সাধন করে। সেখানে যে নিয়মগুলি গৃহীত হয়, সেগুলি হল:
১. সাধারণভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জির বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩১ দিন এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩০ দিন গণ্য করা হবে।
২. গ্রেগরিয় বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে বা লিপ ইয়ারে যে বাংলা বছরের ফাল্গুন মাস পড়বে, সেই বাংলা বছরকে অধিবর্ষ গণ্য করা হবে।
৩. অধিবর্ষে ফাল্গুন মাস ৩১ দিনে গণ্য হবে।
৪. আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী রাত ১২টায় তারিখ পরিবর্তিত হবে।
শহিদুল্লাহ পঞ্জিকা সংস্কারের সময়ে মেঘনাদ সাহার প্রস্তাবকেই গ্রহণ করেন।