বাংলা নিউজ > টুকিটাকি > Poila Baishakh 1429: ‘নববর্ষের বৈঠক সেরে বসে আছি গঙ্গার ধারে, তাকিয়ে আছি অনন্তের দিকে, নতুন বছর আসছে’

Poila Baishakh 1429: ‘নববর্ষের বৈঠক সেরে বসে আছি গঙ্গার ধারে, তাকিয়ে আছি অনন্তের দিকে, নতুন বছর আসছে’

‘নববর্ষের বৈঠক’-এ শ্যুটিংয়ের ফাঁকে

বাঙালির পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল ‘নববর্ষের বৈঠক’-এর কথা। সেই অনুষ্ঠানের অন্যতম রূপকার পঙ্কজ সাহা। কোন স্মৃতি তাঁকে আজও হাত ধরে নিয়ে যায় সেই সময়ে? 

‘আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন? না পারলে, বারবার জিজ্ঞাসা করবেন।’ 

টেলিফোনের ওপারে যে ভদ্রলোক রয়েছেন, তাঁর গলা ধরে গিয়েছে। একটু থেমে বললেন, ‘ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে। তার পরে গলা বদলে গিয়েছে। স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষমতাও কমে গিয়েছে।’

পয়লা বৈশাখের সকাল। বাইরে হালকা ছ্যাঁকা লাগা রোদ। মোবাইল ফোনে ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে নববর্ষ আর পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছাবার্তা। এগুলি সবই এখন দস্তুর হয়ে গিয়েছে। যদিও ১০-১৫ বছর আগে বাঙালির পক্ষে এই দিনটিতে এভাবে পাইকারি হিসাবে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানোর সুযোগ ছিল না। কিন্তু তার পরেও সে দিনটির গায়ে অন্যভাবে লেগে থাকত উৎসবের ছোঁয়া। যে উৎসবের শুরুটা হত ছোটপর্দায় একটি অনুষ্ঠানের হাত ধরে।

‘নববর্ষের বৈঠক’।

এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা এবং মুখ্য পরিকল্পনার দায়িত্ব যাঁর উপরে ছিল, তিনি পঙ্কজ সাহা। দীর্ঘ দিন কলকাতা দূরদর্শনের দায়িত্বে থাকা পঙ্কজবাবু অবসর নিয়েছেন বহু দিন। তাঁকে নিয়ে স্বল্পবিস্তর বিতর্কও হয়েছে কখনও কখনও। কিন্তু ‘নববর্ষের বৈঠক’-এর সঙ্গে তাঁর নাম এমন আঠা দিয়ে সেঁটে গিয়েছে, যা বাঙালির পক্ষে চট করে ভোলা সম্ভব নয়। 

তাই তাঁকে টেলিফোন করা।

বয়স ৭৫ ছুঁয়েছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল একবার। তবু স্মৃতিতে কোনও টান পড়েনি।

‘১৯৭৬ সালে আমরা প্রথম শুরু করি ‘নববর্ষের বৈঠক’। ইচ্ছা ছিল এমন এক অনুষ্ঠান করব, যা হবে ধর্মনিরপেক্ষ। সব বাঙালির ভালো লাগবে। বাঙালিকে তাঁদের ইতিহাসের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে।’ কাঁপা গলায় টেলিফোনের উলটো দিক থেকে বললেন পঙ্কজবাবু। 

প্রথম দিকে সন্ধ্যায় সম্প্রচারিত হত এই অনুষ্ঠান। পরে তা সকাল থেকে সম্প্রচার শুরু হয়। আর তখনই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই অনুষ্ঠানটি। পয়লা বৈশাখের সকালে টিভি চালিয়ে দিয়ে গান বা কথা শুনতে শুনতে এগোত দিনটা। ঘরগেরস্থালির টুকটাক কাজের মধ্যে মিশে যেত বৈশাখী সুর।

‘নববর্ষের বৈঠক’-এর কোন পর্বটা আপনার সবচেয়ে প্রিয়?

প্রশ্ন শুনে পঙ্কজবাবু এক মুহূর্ত থামেন। বলেন, ‘চলন্ত রেলগাড়িতে একবার আমরা শ্যুটিং করেছিলাম। কেরালা থেকে কয়লার ইঞ্জিন আনানো হল। হাওড়া থেকে শ্যুটিং করতে করতে আমরা শান্তিনিকেতন গেলাম। ট্রেন থামল প্রান্তিক স্টেশনে। রাতে শান্তিনিকেতনে থেকে পরদিন আবার শ্যুটিং করতে করতেই হাওড়া ফিরেছিলাম। রেল কোনও পয়সা নেয়নি।’

শুধু ট্রেনে নববর্ষের আড্ডা নয়, তার সঙ্গে বাংলা সাহিত্যে, বাংলা সংস্কৃতিতে রেলের গুরুত্ব মনে করিয়ে দেওয়াও ছিল সেই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য। তেমনই বলছেন পঙ্কজবাবু। বলছেন, ‘জ্যোতিভূষণ চাকী, পবিত্র সরকার সেই অনুষ্ঠানের গবেষণার কাজটি করে দিয়েছিলেন। আর মাথার উপর ছিলেন শঙ্খ ঘোষ। উনি সবটা বুঝিয়ে দিতেন।’

কারা ছিলেন ট্রেনে?

‘সপরিবার সলিল চৌধুরী, শাঁওলী মিত্র, প্রতিভা বসু…’, নাম বলতে বলতে থামেন পঙ্কজবাবু। ‘অনেক দিন হয়েছে। সকলের কথা আর মনে নেই। তবে মনে আছে, নোয়াদার ঢালে ট্রেন থামল। ওখানে বাউল মেলার আয়োজন হয়েছিল। আমরা শ্যুটিং করলাম। তার পরে বাউলরাও আমাদের সঙ্গে ট্রেনে উঠে পড়লেন। গান করতে করতে চললেন।’

‘আর একবার পাতালরেলে বৈঠক বসেছিল। টানা পাঁচ রাত ধরে আমরা পাতালরেলে শ্যুটিং করি। প্রতিটা স্টেশনে ট্রেন থামত। সেই স্টেশন নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আমরা ফিরে যেতাম বাঙালির ইতিহাসে। আর সেই বিষয় সংক্রান্ত কথা আর গান হত।’ বলছেন তিনি।

‘বাংলা ১৪০০ সালে, মানে ঠিক ২৯ বছর আগে ঠাকুরবাড়িতে বৈঠকের শ্যুটিং করি। সেবার বাংলার প্রাচীন ফেরিওয়ালাদের নিয়ে একটি অংশ ছিল। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সেই অংশটি নির্মাণ করা হয়। তাঁরা ফেরিওয়ালা সেজে ঠাকুরবাড়ির বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যান আর পুরনো ফেরির ডাকগুলি দিতে থাকেন। ‘কুয়োর ঘটি তুলবে গো…’, ‘মাথা ঘষার মাটি চাই-ই-ই-ই’… এসব।’ একের পর এক গল্প বলেন তিনি।

বঙ্গভঙ্গের ১০০ বছর, জন্মসূত্রে বাঙালি না হয়েও যাঁরা বাঙালির চেয়ে বেশি বাঙালি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিল্পী— এমন নানা বিষয় নিয়ে বছরের পর বছর চলেছে নববর্ষের বৈঠক। এখনকার বহু নামজাদা শিল্পীর পরিচিতি এসেছিল ওই বৈঠক থেকেই। 

মাঝে মধ্যে আসতেন বাংলাদেশের নামি শিল্পীরাও। ‘ওঁদের হোটেল থাকার মতো পয়সা দিতে পারতাম না। ওঁরা আমদের ভালোবেসেই শ্যুটিং করতে আসতেন। তাই ওঁদের অনেককে আমাদের বাড়িতেই রাখতে হত। এভাবেই আমরা অনুষ্ঠানটিকে তৈরি করেছিলাম আস্তে আস্তে।’ বলেন তিনি।

‘ওটা আমাদের কাছে শুধু একটা অনুষ্ঠান ছিল না। আত্মার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল ‘নববর্ষের বৈঠক’। যাকে বার করে ফেলা সম্ভব নয়।’ বলেন পঙ্কজ সাহা।

অবসর নেওয়ার পরেও কয়েক বছর ‘নববর্ষের বৈঠক’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আজ পিছন ফিরে তাকালে কোন ঘটনার কথা সবচেয়ে বেশি করে মনে পড়ে?

দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলে পঙ্কজবাবুর গলা কাঁপে। বলেন, ‘শ্যুটিং তো আগে হয়ে যেত। রাত জেগে এডিট করতাম আমরা। পয়লা বৈশাখের আগের রাতে এডিট চলত। পরের দিন সকাল থেকে সম্প্রচার হত অনুষ্ঠান। সব শেষ হয়ে গেলে দূরদর্শন ভবন থেকে সবাই মিলে বেরতাম। চলে যেতাম গঙ্গার ধারে। বসে থাকতাম সবাই। হাওয়া এসে লাগত মুখে। আজও পয়লা বৈশাখের সকাল। বাইরে হালকা ছ্যাঁকা লাগা রোদ। মোবাইল ফোনে ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে নববর্ষ আর পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছাবার্তা। কিন্তু আমরা সকলে আজও গঙ্গার ধারেই বসে আছি। মুখে ঠান্ডা বাতাস লাগছে। আমরা তাকিয়ে আছি দূরে। তাকিয়ে আছি অনন্তের দিকে। নতুন বছরকে বরণ করব বলে।’

টুকিটাকি খবর

Latest News

আগামিকাল শনিবার কেমন কাটবে আপনার? ৩০ মার্চের রাশিফল জেনে নিন আজ রাতেই বিশ্বের চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ৫০০ টি-২০ ম্যাচের শিখরে নারিন, সেরা ১০-এ রয়েছেন কারা? ‘আমায় ২ লিস্ট দিল’, একাদশই বলতে পারল না শ্রেয়স, নিজে দল বাছে না, বলল নেটপাড়া স্টেশনে নেমে টুক করে শুলেন রেললাইনে, মাথার উপর ট্রেন, তারপর কী হল গোবরডাঙায় ? করণ জোহরের বান্দ্রার বাড়ির ভাড়াটে এবার ইমরান খান! প্রতি মাসের ভাড়া কত জানেন? বিশ্বকাপ জয়ের ছবি প্রচারে ব্যবহার করা যাবে না, পাঠানকে জানাল নির্বাচন কমিশন 'জেতার পর দেবের মুখ দেখিনি, আপনারটা...' জনগণের চাঁচাছোলা প্রশ্নে হতবাক হিরণ! উত্তর মালদায় বিজেপির দেওয়াল লিখনে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কমিশনে নালিশ জানাবে তৃণমূল পৃথ্বীকে একাদশে না রাখার DC-র সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রাক্তন SRH কোচ আইন ভাঙলে পুলিশ কি ড্রাইভিং লাইসেন্স কাড়তে পারে? মামলা করলেন কলকাতার আইনজীবী

Copyright © 2024 HT Digital Streams Limited. All RightsReserved.