প্রায় প্রতিটি মহিলার কাছেই মাতৃত্বের স্বাদের অনুভূতি তুলনাহীন। এই অভূতপূর্ব সময়কাল যতটা আনন্দের ততটাই সঙ্গে থাকে সুস্থ থাকার চ্যালেঞ্জ। যোগ বিশেষজ্ঞ অভিষেক অটওয়াল বলছেন, সন্তানের জন্মের পর মায়ের সুস্থতায় যোগভ্যাস খুবই উপকারি। ডেলিভারি নর্মাল হোক, বা সিজার, সন্তান প্রসবের পর মায়ের সুস্থ থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই সময়ে মায়ের শরীরে আসে বাড়তি মেদ। যা কমিয়ে ফেলার চেষ্টাতেই এই যোগভ্যাস জরুরি। অভিষেক ওটওয়াল বলছেন, সন্তানের জন্মের ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ পর যোগভ্যাস শুরু করাটা জরুরি। তবে নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া এই যোগভ্যাস শুরু করাটা খুব একটা কার্যকরী হবে না। যে সমস্ত যোগভ্যাস এই সময় জরুরি, সেগুলি হল, দেখে নেওয়া যাক।
চতুরঙ্গ দণ্ডাসন
উল্টো হয়ে হাত ও পায়ের পাতার অংশে ভর দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ সেকেন্ড থাকতে হবে। এটিকে প্ল্যাঙ্ক পোজ বলা হয়। এভাবে যতক্ষণ পারা যায়, ততক্ষণ থাকলে মেলে কাঙ্খিত সুস্থতা। শরীরের কেন্দ্রীয় জায়গায় সুস্থতা বজায় রাখতে এই যোগভ্যাস জরুরি। এই আসনের জন্য প্রয়োজন শক্তি।
ভুজঙ্গাসন
পেটের উপর শুয়ে পড়ুন। আপনার হাতের তালু আপনার বুকের পাশে, বাহুগুলি আপনার শরীরের কাছাকাছি, কনুইগুলি বাইরের দিকে নির্দেশ করুন। শ্বাস নিন এবং আপনার কপাল, ঘাড় এবং কাঁধ তুলুন। এই আসনের সময় স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিন। পেটে চাপ পড়বে আলতো। এতে পেশী হয় শক্ত, রক্তচলাচল ঠিক হয়, কমে যায় ক্লান্তি।
তাড়াসন
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাত মাথার উপর সোজাভাবে রেখে, একটি হাত দিয়ে অন্য হাতটি ধরে রাখতে হবে। আপনার ২টি পায়ের মধ্যে একটি ছোট ফাঁক দিয়ে মাটিতে শক্ত হয়ে দাঁড়ান এবং গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার সময় আপনার আঙ্গুলগুলিকে ইন্টারলক করে আপনার উভয় বাহু উপরের দিকে তুলুন। এখন, একই সাথে আপনার হিল উঁচু করে আপনার পায়ের আঙ্গুলের উপর দাঁড়ান এবং পায়ের আঙ্গুল থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত প্রসারিত হওয়ার চাপ লক্ষ্য করুন। এতে শ্বাসপ্রশ্বাস সঠিক হয়।
ত্রিকোণাসন
আপনার পা আরামদায়কভাবে আলাদা করে একটি সমতল মাটিতে সোজা হয়ে দাঁড়ান। গোড়ালি ভিতরের দিকে রেখে আপনার ডান পা বাইরের দিকে ঘুরিয়ে দিন। উভয় হিল একটি সরল লাইন হতে হবে। শ্বাস নিন এবং আপনার শরীরকে আপনার নিতম্ব থেকে ডানদিকে বেঁকিয়ে নিন এবং আপনার বাম হাতটি সোজা উপরে তুলুন। এদিকে, আপনার ডান হাতটি হয় আপনার গোড়ালি উপর বা এমনকি মাদুরের উপর রাখুন। মেরুদণ্ড ও তার আশপাশের এলাকা ফিট রাখতে এই ব্যায়াম প্রয়োজন।
উষ্ট্রাসন
যোগা ম্যাটের পর হাঁটু গেড়ে বসুন। এরপর হাত পিছনে নিয়ে গিয়ে গোড়ালি ছুঁয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। যাতে পেট স্ট্রেচ হয়। এতে পিছনের দিকে বেন্ড হতে হবে। কয়েক সেকেন্ড এমন থাকতে হবে। এতে হজম ভালো হয়।
নৌকাসন
আপনার সামনে সোজা পা ছড়িয়ে মেঝেতে বসুন। আপনার মেরুদণ্ড খাড়া রেখে এবং হাতগুলি আপনার নিতম্বের পাশে রেখে, আপনার হাঁটু বাঁকুন এবং কিছুটা পিছনে ঝুঁকুন। এখন শ্বাস নিন এবং আপনার হাত সামনের দিকে প্রসারিত করার সময় উভয় পা উপরে তুলুন। আপনার পায়ের আঙ্গুল চোখের স্তরে রাখুন এবং আপনার মেরুদণ্ড লম্বা করুন। ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডের জন্য ভঙ্গিটি ধরে রাখুন এবং ভঙ্গিটি ছেড়ে দিন।
প্রাণায়ম
পা ক্রস করে বাবু হয়ে বসে, হাঁচুর উপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করুন। সমস্ত ক্লান্তি ভুলে গিয়ে আরাম করে বসুন। লম্বা করে শ্বাস নিন। এক একটি হাত দিয়ে একটি কে নাক চেপে ধরতে হবে। বাম নাক দিয়ে ৪ বার নিঃশ্বাস, এরপর ডানদিকেও একইরকম। মাঝে ২ সেকেন্ডের জন্য নাকের এক একটি দিক আঙুল দিয়ে চেপে শ্বাসবায়ু আটকে রেখে তা ছাড়তে হবে। ৫ মিনিটের এই প্রক্রিয়ায় শ্বাসবায়ু সতেজ হয়।