শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলছেন বাবারাও। বদলে যাচ্ছে পিতৃত্বের ধরন। অথচ পরিস্থিতির এমন উন্নতি হলেও, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রায়শই উপেক্ষা করা হচ্ছে, আর তা হল বাবাদের মধ্যে প্রসবোত্তর বিষণ্ণতা, ইংরেজিতে যাকে বলে পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন (পিপিডি)। সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, বাবা হওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে তা নিয়ে আলোচনা করা এবং বাবারারাও যাতে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা পান তা অবশ্যই নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও এই ধরনের সাধারণত মায়েদের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে, জার্নাল অফ অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডারে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বাবারাও সন্তানের জন্মের পরে এটি অনুভব করতে পারেন। গবেষণাটি আশ্চর্যজনকভাবে এটাও প্রকাশ করে যে এই সময়ে প্রতি ১০ জন বাবা মাঝারি থেকে তীব্র ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে যান। বলা বাহুল্য, যদি বাবাদের মধ্যে এই ভয়ানক ডিপ্রেশনের চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি তাঁদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে এবং এমনকি সন্তানের মানসিক বিকাশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আরও পড়ুন: (Health Tips: বাদামী রঙের স্রাব কীসের ইঙ্গিত? কেন হয় এই সমস্যা?)
বাবাদের এই ডিপ্রেশন নিয়ে কী বলছে গবেষণা
গবেষণায় ২০১০ সালের 'টেন টু মেন' নামক একটি রিসার্চ প্রজেক্টের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৩৫০ জনেরও বেশি পুরুষের বাবা হওয়ার আগে এবং পরবর্তী সময়ে তাঁদের মানসিক অবস্থা নিয়ে রিসার্চ করা হয়েছিল। গবেষকরা দেখেছেন যে শিশুর জন্মের আগে যেসব বাবাদের মধ্যে ডিপ্রেশনের লক্ষণ ছিল, শিশুর জন্মের পরে তাঁদের মধ্যেই এই ডিপ্রেশন অনুভব করার সম্ভাবনা বেশি ছিল। আর যে বাবারা নিজেদের যত্ন নিতেন, হবু মায়ের সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক রাখতেন এবং সামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকতেন, তাঁদের মধ্যে এই ধরনের প্রসবোত্তর বিষণ্ণতা অনুভব করার সম্ভাবনা কম ছিল। প্রকৃতপক্ষে, যখন শিশুর জন্মের আগে বাবা সুস্থ থাকলে, ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলি ১.২ শতাংশ কমে যায় এবং তীব্র ডিপ্রেশনের ঝুঁকি ১০ শতাংশ কমে যায়।
বাবাদের নীরব সংগ্রাম
যদিও বেশিরভাগ মানুষ মায়েদের পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের উপর মনোযোগ দেয়, কিন্তু এটা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে বাবারাও হরমোন এবং মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান। একজন পরামর্শদাতা এবং বাবা জোশুয়া পি স্মিথ নিজেই বলেছেন, পুরুষরা তাঁদের সন্তানের জন্মের পরে হরমোনের পরিবর্তন অনুভব করেন, যেমন টেস্টোস্টেরনের হ্রাস, যা তাঁদের মেজাজ এবং ঘুমকে প্রভাবিত করতে পারে। আমি নিজের মধ্যে এবং আমার সঙ্গে কাজ করা অন্যান্য পুরুষদের মধ্যেও একই জিনিস দেখেছি। যাইহোক, কঠোর হওয়ার সামাজিক নিয়মগুলি প্রায়শই পুরুষদের সাহায্য চাইতে বাধা দেয় এবং এই নীরবতা তাঁদের আরও একা বোধ করাতে পারে। এ প্রসঙ্গে থেরাপিস্ট শানাজ ইকন বলেন, অনেক পুরুষ তাঁদের স্ট্রাগলকে নিজেদের মধ্যেই রাখেন, যতক্ষণ না এটি তাঁদের বিবাহ, সম্পর্ক বা কর্মক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুন: (Bizarre: চিনের সর্বত্র এত দুর্গন্ধ কেন? বড় কথা বলতেই পাকিস্তানি MBBS-কে ধুয়ে দিল নেটিজেন)
বাবাদের মধ্যে পিপিডি-এর লক্ষণ
প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতাবা ডিপ্রেশন মোকাবেলা করার জন্য, লক্ষণগুলি আগে থেকেই লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর জন্মের তিন থেকে ছয় মাস পরে বাবার মধ্যে এই লক্ষণগুলো আরও বেশি পরিমাণে দেখা যায় বলে দাবি করেছেন থেরাপিস্ট ইকন:
- দীর্ঘদিন ধরে দুঃখ বা হতাশা বোধ করা।
- নিজের সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সমস্যা হওয়া।
- স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতাশ বা রাগ হওয়া।
- খুব ক্লান্ত হওয়া বা খিদে বা ঘুমের পরিবর্তন হওয়া।
- পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা আপনার পছন্দের জিনিসগুলি থেকে দূরে সরে যাওয়া।
বাবারা কীভাবে পিপিডি-এর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন
পিপিডি আক্রান্ত বাবাদের সাহায্য নেওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞরা এই পদক্ষেপগুলির পরামর্শ দেন:
- স্ট্রাগল স্বীকার করুন: এটা বুঝতে হবে যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি বাবা হওয়ার অংশ, দুর্বলতা নয়।
- সরাসরি কথা বলুন: আপনার সঙ্গী, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে আপনার অনুভূতি সম্পর্কে কথা বলুন।
- সহায়তা নিন: অন্যান্য নতুন বাবার সঙ্গে কথা বলুন, সহায়তা বা পরামর্শ নিতে পারেন।
- নিজের যত্নকে অগ্রাধিকার দিন: হাঁটা, গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া বা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মতো সহজ জিনিসগুলি আপনাকে আরও ভালো বোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
- পেশাদারের সাহায্য নিন: থেরাপি আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে।
পিতৃত্ব এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন
বাবা হওয়া একটি বড় পরিবর্তন, তবে এটি এমন মানসিক চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসে, যার প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সাইকোলজিস্ট ডঃ নিকোল মন্টেইরো বলেন, বাবারা প্রায়শই মনে করেন যে কেউ তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলিতে নজর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এই সমস্যাগুলি সমাধান করলে কেবল বাবাই নন, পুরো পরিবার ভালো থাকবে।