বাংলা নিউজ > টুকিটাকি > Rabindranath Tagore: ধর্ম আর ঈশ্বরের মাঝে দাঁড়িয়েছিলেন কোন রবি? ফিরে দেখলেন দুই রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ

Rabindranath Tagore: ধর্ম আর ঈশ্বরের মাঝে দাঁড়িয়েছিলেন কোন রবি? ফিরে দেখলেন দুই রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ

কে ছিল তাঁর চিরসখা? (Encyclopedia)

রবীন্দ্রনাথের অনেকটা আঙিনা জুড়ে ব্যপ্ত তাঁর ধর্মভাবনা। শিশু থেকে শেষ বয়সের নানা লেখায় ঈশ্বর নানাভাবে ফিরে এসেছেন। কে সেই আনন্দময়? দুই রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞের আলোচনায় আভাস মিলল তাঁর।

এক অন্য খোঁজে

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর ঈশ্বরের সম্পর্কটা বেশ অম্লমধুর। কখনও ‘ছেড়ো না’র (‘চিরসখা’ গানে) আর্তি থেকে তৈরি হচ্ছে ‘এই করেছ ভালো’র দুঃখজ প্রত্যয়। আবার কখনও ‘জগতের আনন্দযজ্ঞে’ নিমন্ত্রণ পেয়েছেন বলে ধন্য তাঁর ‘মানবজীবন’। পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, মঙ্গলকাব্যের সময় থেকেই বঙ্গজাতি দেবতাদের সঙ্গে এক প্রিয়ত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। রবীন্দ্রনাথ যেন সেই সম্পর্কের শৈল্পিক প্রলেপ ও অবশ্যই ‘অন্য’ একটি মাত্রা। সেই অন্য মাত্রাটি কী?

চেতনার ব্যপ্তির নিরিখে মাঝে মাঝে কবির ধর্মভাবনা দূরূহ বলে মনে হয়। তাঁর প্রবন্ধে, বক্তৃতায়, গানে, কবিতায় রয়েছে এক গভীরতম স্পর্শের উল্লেখ। তাই প্রশ্ন জাগে, দুঃখ থেকে সুখের পথে, কষ্ট থেকে প্রত্যয়ের যাত্রায় কে ছিল তাঁর মননের ছায়াসঙ্গী? ফুরায়ে ফেলে কেই বা তাঁকে ভরেছিল নব নব জীবনে!

তার ‘ধর্ম’ বুঝবার আয়োজন

যতদিন গিয়েছে, প্রিয় মানুষেরা স্মৃতি হয়েছে, ততই রবীন্দ্রনাথের ‘আত্মীয়’ হয়ে উঠেছেন তাঁর ঈশ্বর। একান্তের প্রতি কবির আবেগও হয়েছে তীব্র। এমন ব্যপ্ত যে রবীন্দ্রনাথ, তাঁর ঈশ্বরের খোঁজ কোন সুরে সুর মেলালে পাওয়া যেতে পারে? বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক সৌরীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য সেই সূত্রে বললেন এক সংহত ভাবের কথা। তাঁর কথায়, ‘রবীন্দ্রনাথের ঔপনিষদিক চিন্তা ওঁর সারা জীবনের গভীর উপাদান। আমরা যে আধুনিক সময়ের মানুষ, সেখানে ওঁর চিন্তাগুলি নানা কারণে স্পষ্ট ধরা পড়ে না। যে সমস্ত ধারণা, শব্দ ও প্রত্যয় দিয়ে ওই জগৎটা তৈরি, আমরা তার বাইরে। ওই জগতের থেকে যেন একভাবে বিচ্ছিন্ন। তাই তিনি যে জগতকে বিবৃত করতে চান, তা বুঝতে নিজেদের কিছুটা ভাঙচুর করে নিতে হবে। তিনি লিখছেন একটি ছোট বালুকণার মধ্যেও অসীমের স্পর্শ রয়েছে। বালুকণা শেষ, তারপরেই শুরু না-বালুকণার।‌ ফলে বালুকণা কিন্তু না-বালুকণা সমুদ্রেই রয়েছে। এই কথা ওই তরুণ বয়সেই তাঁর মনে আসছে! পরে ঔপনিষদিক মন যখন আরও পরিণত হয়েছে, ততই দানা বেঁধেছে এই ভাবনাগুলো।’

ওঁর ঔপনিষদিক মন

কথায় কথায় উঠে এল রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান চিন্তার কথাও। ঈশ্বরকে কাছে পেতে যুক্তিবাদী মনকে বিসর্জন দেননি কবি। সৌরীনবাবুর কথায়, ‘ওঁর গানের মধ্যে অবলীলায় আসছে ‘মানব তুমি অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড মাঝে ভ্রমিছ’। তাঁর অসীম ও ব্রহ্মাণ্ডের ধারণার সঙ্গে ‘মানব’ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বিজ্ঞান চিন্তাতেও জড়িয়ে সেভাবে রয়েছে মানবরূপ।

<p>ওঁর ঔপনিষদিক মন আর মানব দৃষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে চৈতন্য</p>

ওঁর ঔপনিষদিক মন আর মানব দৃষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে চৈতন্য

(Encyclopedia)

রবীন্দ্রনাথের ধর্মচিন্তা কথা এলেই চলে আসে পুরুষকারের ধারণা। কথা প্রসঙ্গে সৌরীনবাবু তুললেন তাঁর এক গানের কথা। ‘সঞ্চার করো সকলে কর্মে শান্ত তোমার ছন্দ, অন্তর মম বিকশিত করো….।’- এই শান্ত ছন্দ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মধ্যেই রয়েছে, কিন্তু কোথাও একটা যেন অসীমের সঙ্গে মিলিত হয়ে রয়েছে। যেমন সংগীততত্ত্ব, ধ্বনিতত্ত্বে রয়েছে ‘অনাহত নাদ’ শব্দটি। অমিয় চক্রবর্তীকে উৎসর্গ করে লেখা ‘পঁচিশে বৈশাখ’ কবিতার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলছেন, ‘এই যে তোমরা আমার কাছে এসেছ, আমাকে জেনেছ কি, আমাকে দেখেছ কি? জেনেছ আমার মধ্যে কি বিরাট এক অসম্পূর্ণতা?’ রবীন্দ্রনাথও যে সম্পূর্ণ রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেননি, বরং হয়ে উঠছেন, এ তার বড় প্রমাণ। এক সুরে চলা কবিতাটা ওই মুহূর্তে এসে হঠাৎ যেন ঝাঁঝিয়ে উঠছে। এ তাঁর ভিতরকার তীব্রতা, সংহতির প্রসব।’

সম্প্রদায় ভাবনার গোড়া

ধর্মের থেকে ধর্মীয় আচার, রীতিকানুন প্রধান হয়ে উঠছে। এও কিন্তু ভারতের বুকে এক স্বাভাবিক দৃশ্য। কিন্তু শেষ বৈশাখের এই ভারতসন্তানের মধ্যে সেদিক থেকেও বোনা ছিল আলাদা সুরের বীজ। কবির ধর্মভাবনার কথা এলে সেদিকটা না বললেই নয়, জানালেন সৌরীনবাবু। বললেন, ‘আচার যে ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে সম্প্রদায় ভাবনা উসকে দেয়, তাও ওঁর একটা উপন্যাসে ফুটে উঠেছে। ‘গোরা’ উপন্যাসে গোরা খুব সংস্কারবদ্ধ ছিল। তারপর যখন সে জানতে পারে আনন্দময়ী তার মা নয়, তখন বিপুল বিস্ময়ে উচ্চারণ করছে, ‘তুমি আমার মা নও!’। রবীন্দ্রনাথও একাধিক জায়গায় বলেছেন, তাঁর সম্প্রদায়ভুক্ত ভাবনা ভাবতে ভালো লাগে না। পিতৃসূত্রে প্রাপ্ত ব্রাহ্মধর্মের সঙ্গেও একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তাঁর। শিলাইদহে যখন পল্লীগঠনের কথা ভাবছেন, তখন তথাকথিত হিন্দু সম্প্রদায় নানান রকম বাধা তৈরি করেছে। সেই সূত্রে এক জায়গা তিনি লিখলেন, এভাবে আইডিয়ালাইজ করে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে ভাবতে ভালো লাগে না। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩০-এর কোঠায়! অর্থাৎ জীবনটাকে পূর্ণ সংহতির জীবন হিসেবে ভাবলে অনেকটা সহজ হয়ে যায় তাঁর কথাকে বোঝা। তাঁর অখন্ড চৈতন্যভিত্তিক তীব্র তেজের কথা মাথায় রাখলে ধর্ম সম্পর্কিত নানা লেখা ‘মানুষের ধর্ম’ থেকে ‘রিলিজিয়ন অফ ম্যান’ সবের মধ্যেই যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়।’

<p>ধর্মের এ-ই সম্প্রদায়গত সংকীর্ণ রূপটি রবীন্দ্রনাথের বিরক্তির কারণ</p>

ধর্মের এ-ই সম্প্রদায়গত সংকীর্ণ রূপটি রবীন্দ্রনাথের বিরক্তির কারণ

(Encyclopedia)

রবীন্দ্রনাথের আগ্রহ সেই কাঙ্খিত কল্যাণময়ের প্রতি! সম্প্রদায়ের সংকীর্ণ রূপ বড় বিরক্তি ছিল কবির, সে কথাই জানালেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রবীন্দ্র-চিন্তক বিশ্বজিৎ রায়। সাম্প্রতিককালে দেশের চেহারা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলছেন, ‘বর্তমান ভারত দলগত ও সম্প্রদায়গত ধর্মের বিষয়ে কৌতূহলী। রাজনৈতিক কারণেই ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ধর্মের এ-ই সম্প্রদায়গত সংকীর্ণ রূপটি রবীন্দ্রনাথের বিরক্তির কারণ। সে বিরক্তির প্রকাশ গোরা ও ঘরে-বাইরে উপন্যাসে চোখে পড়ে। ধর্ম তাঁর মতে ব্যক্তিগত উপলব্ধি, চিত্তের বিকাশে মানুষ যখন অপরের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করেন তখন তিনি মানুষের ধর্মে উপনীত হন। এ-ই ধর্ম দেশ কালের খণ্ডতাকে অতিক্রম করতে পারে।’

মানুষ ও ঈশ্বর — পরস্পর নির্ভর?

রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বরবোধের খোঁজেই এই বিশেষ আয়োজন। দুই রবীন্দ্র চিন্তকের কথায় কথায় খুঁজতে চাওয়া তাঁর সেই ঈশ্বরকে — যার জন্য কবির ‘আঁখি জাগে’! রবীন্দ্রনাথের এমন ব্যপ্ত সমুদ্রে তাঁকে স্পষ্ট করে পাওয়া দূরূহ‌। না পেলেই বোধহয় ভালো। কারণ একবার পেয়ে গেলে আর অবশিষ্ট থাকে না পাওয়ার অশেষ কাতরতা। বরং এই খোঁজে তাঁর আভাস মিলল কিছুটা। বাকি যে সিংহভাগ অধরা, তাঁর খোঁজেই আমাদের জীবনযাত্রা। সে শুধু রবীন্দ্রনাথের নয়, যা কিছু কল্যাণময়, তা তো সকলেরই। শব্দের পরিসরে নয়, জীবনের বোধ দিয়েই তাঁর সত্যিকারের খোঁজ করা চলে। অতএব এই শব্দ-আয়োজনের শেষ প্রান্তে এসে সে পথের অভিমুখেই যাত্রা শুরু!

(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup)

টুকিটাকি খবর

Latest News

প্রকাশিত মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল, এবার ঝাড়খণ্ডের পাশের হার কমে দাঁড়াল ৯০.৩১% ফের শোকের ছায়া ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে, ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত রমন সুব্বা রাও অনুশীলনে গুরুতর চোট হাঁটুতে,প্যারিসের টিকিট পেয়েও যেতে পারবেন না শ্রীশঙ্কর মুরলি পাল্টে গেল DD নিউজের লোগো, DD ইন্ডিয়ার পর গেরুয়ার ছোঁয়া সরকারি খবরের চ্যানেলে প্রথম দফার নির্বাচন, সকাল সকাল বুথে লাইন দিয়ে ভোট দিলেন রজনীকান্ত, ধনুশ, বিজয়রা ‘আবগারি দুর্নীতির ৫০ কোটি তো BJP-র’, কেজরি জেলে থাকলে নড্ডা নয় কেন? তোপ অভিষেকের জলপাইগুড়িতে বিজেপির বুথ অফিসে ঢুকে পড়লেন তৃণমূল প্রার্থী, কী ঘটল সেখানে?‌ PBKS হারলেও নায়ক আশুতোষ, কে এই প্লেয়ার? যাঁর ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ সূর্য, বুমরাহরাও ‘অনেক মুসলিমের নাম নেই তালিকায়’, UP-তে বুথ দখলের অভিযোগ BJP-র নামে একটি IPL-এ টেল-এন্ডার হিসেবে সব থেকে বেশি রান আশুতোষের, দেখুন সেরা ৫-এর তালিকা

Latest IPL News

PBKS হারলেও নায়ক আশুতোষ, কে এই প্লেয়ার? যাঁর ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ সূর্য, বুমরাহরাও স্নায়ুচাপের পরীক্ষা হয়েছে এই ম্যাচে, পঞ্জাব বধের পর বললেন হার্দিক পান্ডিয়া ছন্নছাড়া ক্যাপ্টেন্সি, দেরি হল ফিল্ড সাজাতে, বড় জরিমানার মুখে পড়লেন হার্দিক IPL 2024: ইডেনে এবার সবুজ জার্সি পরে নামছেন কোহলিরা,চাইছেন নিজেদের ভাগ্যও বদলাতে PBKS vs MI: IPL-এর ইতিহাসে এত বছরে যা হয়নি সেটাই হল এবার! ক্যামেরা দেখাল টসের স কাজে এল না আশুতোষ-শশাঙ্কের লড়াই, রোমাঞ্চকর ম্যাচে পঞ্জাবকে ৯ রানে হারাল মুম্বই বুমরাহের ইনসুইং ইয়র্কার বুঝতেই পারলেন না রসউ, উপড়ে গেল দু'টি স্টাম্প- ভিডিয়ো তখন আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম- MI vs RR ম্যাচের স্মৃতি ভুলতে পারছেন না রোহিত আমরা চাই ধোনি শেষ বলে ছক্কা মারুক কিন্তু… লখনউয়ের রাস্তায় LSG-র প্রার্থনা ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য কী করেছেন? CSK-র সমালোচনা করতেই প্রাক্তনীর রোষে হর্ষ ভোগলে

Copyright © 2024 HT Digital Streams Limited. All RightsReserved.