‘রমজান’ শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে। রামিয়া বা আর-রামম থেকে এসেছে এই শব্দটি, যার অর্থ ‘তাপমাত্রা’ বা ‘শুষ্কতা’। যে সব দেশে আরবি প্রধান ভাষা নয়, সেই সব দেশ যেমন ইরান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা তুরস্কে একে ‘রামাজান’ বা ‘রমজান’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
রমজান মাসে কী করতে হয়?
পবিত্র রমজান মাসে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানরা রোজা পালন করেন। কিন্তু অসুস্থ, অন্তঃসত্ত্বা, ডায়াবেটিক রোগী, ঋতুমতি নারীদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল রয়েছে।
রোজা বা সাওমে ভোর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের খাওয়াদাওয়া, পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা খারাপ কাজ এবং (স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে) শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকার নিয়ম। এ মাসে মুসলমানেরা অধিক ইবাদত করেন। কারণ অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বেড়ে যায়।
এ মাসে লাইলাতুল কদর নামে রাতে কোরান নাযিল হয়েছিল। সে রাতকে আল্লা তাআলা কোরানে হাজার মাসের চেয়ে বেশি উত্তম বলেছেন। এ রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।
রমজান মাসের শেষদিকে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে, শাওয়াল মাসের ২ তারিখে মুসলমানরা ইদল-ফিতর পালন করে থাকেন। যেটি মুসলমানদের দু’টি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি।
রমজানের ইতিহাস
অনেকে বিশ্বাস করেন, সমস্ত ধর্মগ্রন্থ রমজান মাসে হাজির হয়েছিল। ইব্রাহিম, তাওরাত, সাম, জাবুর এবং কোরানের লিখিত গ্রন্থগুলি প্রথম, ষষ্ঠ, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ শতকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের যে পাঁচটি বিশেষ সংখ্যাযুক্ত রাত আছে। তার মধ্যে একটি রাত শবে কদর সম্পর্কে মহম্মদ তাঁর প্রথম কোরানিক ওহি পেয়েছিলেন বলে জানা যায়।
যদিও মুসলমানদের প্রথমবার হিজরির দ্বিতীয় বছরে অর্থাৎ ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে রোজা রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, রোজা পালনের বিষয়টি বাস্তবে একেশ্বরবাদের উদ্ভাবন নয়। বরং মুমিনদের তাকওয়া অর্জন (আল্লার ভয়) করা সর্বদা প্রয়োজনীয় ছিল। তাঁরা এই বিষয়টিকে নির্দেশ করেন যে, মক্কার আরব্য পুরাণে আরবের পাপ শেষ করা হয় এবং আরবের প্রাক-ইসলামি পৌত্তলিকেরা শাস্তি এড়াতে মহরমের দশম দিনে রোজা করেছিল।
ধর্মতত্ত্ববিদ এবং ঐতিহাসিক ফিলিপ জেনকিন্স দাবি করেছেন, রমজানের রোজা পালনের বিষয়টি ‘সিরিয়ার চর্চ’ থেকে বেড়েছে। ধর্মতত্ত্ববিদ পল গর্ডন চ্যান্ডলার-সহ আরও অনেকেই এই বক্তব্য সমর্থন করেন। তবে কয়েক জন মুসলমান শিক্ষাবিদ এই মতটি নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন।