পবিত্র রমজান মাস। বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের এক মাস সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত উপবাস পালন করবেন। ঈদ-উল-ফিতর উদযাপনের মাধ্যমে শেষ করবে। রমজানের প্রথম দিন ২ এপ্রিল শনিবার।
রমজানের রোজা মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটিকে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যাঁরা রোজা পালন করেন, তাঁরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু খান না বা পান করেন না। সূর্যাস্তের সময় ইফতারের আচার বিধি মেনে তাঁরা উপবাস ভঙ্গ করেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের রমজানের উপবাসের সময় অতিরিক্ত সাবধানতা নেওয়া প্রয়োজন। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া (নিম্ন শর্করা) বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া (উচ্চ শর্করা) হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে সঠিক ডায়েট রুটিন অনুসরণ করতে হবে। তাঁদের সুহুরের সময় সুষম খাবার খাওয়া এবং কম গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস রোগীরা ইফতারের খাবারকে ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করতে পারেন। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এবং ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
'প্রয়োজনে আগেভাগে চিকিত্সক, ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন,' বললেন সুজাতা শর্মা, সিনিয়র ডায়াবেটিস কেয়ার কোচ, BeatO অ্যাপ।
এ বিষয়ে হায়দরাবাদারে কেয়ার হাসপাতালের ডঃ কে ডি মোদী আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, 'ইফতারের সময় সঠিক খাবার গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। সন্ধ্যায় রোজা ভাঙার পর, অল্প-অল্প, স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার খান। খাদ্যতালিকায় ফল, শাকসবজি, ডাল এবং দই রাখুন। ডিপ ফ্রায়েড বা চিনি ভর্তি খাবার দিয়ে রোজা ভাঙতে যাবেন না। রোজা ভাঙার পর কোনও স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করুন। জল ছাড়াও নুন-লেবুর সরবত, চিনি ছাড়া লস্যি ইত্যাদি খেতে পারেন। শরবত, ফলের রস বা প্যাকেটজাত পানীয় এড়িয়ে চলুন।'
'ডায়াবেটিক রোগীদের রোজার সময় ঘন ঘন তাঁদের ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা উচিত। শরীর সামান্য খারাপ লাগলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত,' বলেন তিনি।
রমজানে স্বাস্থ্যকর উপবাসের টিপস:
● সুহুর বা সাহরীর শুরুতে নারকেল জল, লেবু জল বা সাধারণ জল খেয়ে নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন। ইফতার ও সেহরিতে অন্তত ৭-৮ গ্লাস জল পান করুন।
● সেহরিতে খাওয়ার সময়ে অবহেলা করবেন না। সকালে সুষম জলখাবার খান। চিকিত্সকের পরামর্শ মেনে ইনসুলিন এবং ওষুধের ডোজের সামঞ্জস্য রাখুন।
● কম গ্লাইসেমিক সূচক, এমন খাবার বেছে নিন। উদাহরণস্বরূপ, বেকড স্ন্যাকস, ফল, দই এবং দুধ সাহারির সময় এবং উপবাসের পরে খেতে পারেন। ভাত, আলু এবং ময়দার এড়িয়ে চলুন। তার বদলে কম গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত কার্বোহাইড্রেট বেছে নিন। যেমন ব্রাউন রাইস, মাল্টিগ্রেন আটা, বাজরা এবং শাকসবজি।
● রোজা ভাঙার পরে একসঙ্গে সব খাবার খাওয়ার পরিবর্তে শুরুতে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খান। তারপর হাই প্রোটিন, লো কার্ব খাবার খান।
● স্ন্যাকস হিসাবে এক টুকরো ফল, অল্প বাদাম, সবজির তরকারি খেতে পারেন। ফলমূল এবং শাকসবজি ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। ফাইবার শুধু আমাদের অন্ত্রকেই সুস্থ রাখে না। একই সঙ্গে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে।
● উপবাসের সময় অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন। কারণ এর থেকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
● চিনিযুক্ত খাবার এবং ভাজাভুজি এড়িয়ে চলুন। ডিপ ফ্রাইয়িংয়ের পরিবর্তে বেকিং এবং গ্রিলিংয়ের মতো স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি বেছে নিন। মিষ্টির ক্ষেত্রে খেজুর, ফল ইত্যাদি খান।