কোচবিহারে বক্সিরহাটের রসিববিল পর্যটন কেন্দ্র। শীতের দিনে বহু পর্যটকের কাছে এই রসিকবিল অন্য়তম গন্তব্য হয়ে ওঠে। এবার সেই রসিকবিল প্রকৃতি পর্যটনকেন্দ্র থেকে ঘড়িয়াল আনা হল জলঙ্গিতে। আসলে রসিকবিল প্রকৃতি পর্যটনকেন্দ্রে ঘড়িয়ালদের থাকার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল। সেকারণেই সেই ঘড়িয়ালের ঠিকানা বদলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই কারণে সব মিলিয়ে ৩৭টি ঘড়িয়ালকে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির কাছে টিকটিকপাড়ায় ভাগিরথীর শাখানদীতে ছাড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেই মতো শুক্রবার কোচবিহার থেকে জলঙ্গিতে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয় ওই ঘড়িয়াল ছানাদের। কিন্তু আনা বললেই তো আনা নয়। এতগুলি ঘড়িয়ালকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্য়া রয়েছে। তাছাড়া রাস্তাতেই ঘড়িয়ালের মৃত্যু হতে পারে। সেকারণে বিরাট পরিকল্পনা নিল বনদফতর।
কোচবিহারের রসিকবিল প্রকৃতি পর্যটনকেন্দ্রে অন্তত ১১টি পূর্ণ বয়স্ক ঘড়িয়াল রয়েছে। এর মধ্য়ে সাতটি পুরুষ ঘড়িয়াল রয়েছে। এখানে বেশ যত্নেই রাখা হয়েছিল ঘড়িয়ালগুলিকে। কিন্তু বাচ্চা ঘড়িয়ালের সংখ্য়া ক্রমেই বাড়তে থাকে। বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে একেবারে ভরা সংসার। সেক্ষেত্রে ঘড়িয়ালদের একাংশকে এবার অন্যত্র না সরালে সমস্যা হতে পারত। সেকারণেই এবার ঘড়িয়ালগুলিতে দ্রুত অন্য়ত্র সরানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
সেই মতো বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। ঘড়িয়ালের ছানাগুলিকে পাইপের মধ্য়ে প্রবেশ করিয়ে সেখানে নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো অসংখ্য ছিদ্র করে দেওয়া হয়। এরপর বাঁশের মাচায় সেই ঘড়িয়ালগুলিকে রেখে ট্রাকে তোলা হয়। এদিকে কোচবিহার থেকে মুর্শিদাবাদ প্রায় ৬০০ কিমি পথ পার হওয়ার জন্য় প্রাণী চিকিৎসক, বনকর্মীরাও ওই ট্রাকের সঙ্গে যান। একেবারে গ্রিন করিডর করে ঘড়িয়ালগুলিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে আটকে গেলে সমস্যা হতে পারত।
তবে রসিকবিলে যাতে ঘড়িয়ালদের বাচ্চা হতে পারে সেকারণে তাদের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হয়। ওড়িশার নন্দনকানন ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরাও এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছিলেন। ঘড়িয়াল প্রজননের জন্য় নির্দিষ্ট বালির বিছানা করা হয়েছিল। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ডিমগুলি রাখা হয়েছিল। সেখানে জেনারেটরেরও ব্যবস্থা করা হয়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ডিম ফুটে বাচ্চা করার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর একে একে ডিম ফুটে বাচ্চা হতে শুরু করে। এরপরই একেবারে ভরা সংসার হয় ঘড়িয়ালের।