Ratan Tata Love Life: কোটিপতি ব্যবসায়ীদের প্রতি অনেক সময় একটা স্বভাবক্রোধ দেখা যায় সাধারণ মানুষের মধ্যে। ক্রোধের বিষয় এই যেন মানুষকে নিষ্পেষণ করেই তাঁরা বড়লোক হয়েছেন। সম্প্রতি মোবাইলের ট্যারিফ বৃদ্ধির পর সোশাল মিডিয়ায় তেমনই এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু হয়েছিল। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এইসব পরিচিত সমীকরণের বাইরে থেকে গিয়েছেন রতন টাটা। তাঁর ব্যক্তিত্ব, মানবিকতা আর পাঁচজন ব্যবসায়ীর থেকে উঁচু স্থানে পৌঁছে দিয়েছে তাঁকে। একজন সফল ও বিশ্বের প্রথম সারির ব্যবসায়ী হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ তাঁকে মানুষ হিসেবেই দেখেছে। তবে এই মানুষটির ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও আগ্রহ বহু মানুষের। এত পরোপকারী ও (প্রায়) অজাতশত্রু যিনি, তাঁর কি কোনও মনের মানুষ ছিলেন? কোনও নারীকে ভালোবেসেছিলেন টাটা গ্রুপের সর্বেসর্বা এই ব্যক্তি? কেনই বা ভালবাসা সত্ত্বেও চিরকাল অবিবাহিত থেকে গেলেন?
উপরের প্রশ্নগুলি বারবার উঠেছে। এবং এর উত্তরও দিয়েছেন রতন টাটা। তাঁর বিয়ে না করার কারণ তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন। তবে তার থেকেও বেশি উল্লেখ্য তাঁর প্রেমের কথা। ্্ক্্ তাঁর জীবনেও প্রেম এসেছিল। তিনিও ভালোবেসেছিলেন এক নারীকে। তাঁর প্রথম প্রেম ছিল এক মার্কিনি কন্যার সঙ্গে। তখন রতন টাটা কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য নিয়ে পড়ছেন। সেখানেই গভীর সম্পর্কে ছিলেন ওই মেয়েটির সঙ্গে। তখন ১৯৬০ সাল। ১৯৬২ সালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেল। ভারত ও চিনের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব যুদ্ধের আকার নিল। রতন টাটা দেশ ও পরিবারের কথা ভেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়লেন। ভেবেছিলেন তাঁর প্রেমিকা তাঁর সঙ্গে আসবেন। কিন্তু মেয়ের বাবা-মা নারাজ। বিয়ে দিয়ে ভারতে মেয়েকে পাঠাতে চান না তাঁরা। সম্পর্ক সেখানেই ভেঙে যায়।

আরও পড়ুন - Ratan Tata Lesser Known Facts: প্রয়াত রতন টাটা! তাঁর সম্পর্কে এই ১০টি তথ্য জানলে শ্রদ্ধা অনেকটাই বেড়ে যাবে
এর পরেও প্রেম এসেছিল তাঁর জীবনে। ২০১১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে রতন টাটা বলেন, তাঁর জীবনে চারবার বিয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানা কারণে পিছিয়ে আসতে হয় তাঁকে। এর মধ্যে একটি ক্ষেত্রে তাঁর ঠাকুমাও জড়িত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আর বিয়ে করা হয়নি টাটা গ্রুপের প্রধান ব্যক্তিটির। তবু তাঁর এক প্রেমের কথা আজও অনেকের মুখে মুখে ঘোরে। সেই প্রেম ছিল ষাটের দশকের এক অভিনেত্রীর সঙ্গে।
ষাটের দশকের সেই অভিনেত্রীর সঙ্গে বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছিল সম্পর্ক। কিন্তু বিয়ে হয়নি। পরে অভিনেত্রী অন্য একজনকে বিয়ে করে নেন। সে সম্পর্ক বেশি দিন টেঁকেনি। তিনি সিমি গারেওয়াল, সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র অন্যতম অভিনেত্রী। সিমি গারেওয়ালও ঘটনাচক্রে একাই জীবন কাটিয়েছেন। কোনও সম্পর্কই তাঁর টেঁকেনি। তবে রতন টাটার সম্পর্কে শ্রদ্ধাপূর্ণ মন্তব্য শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘রতন টাটা সত্যিকারের জেন্টলম্যান। টাকা তাঁর জীবনে কখনই আসল বিষয় নয়। এমন মানুষ এত বড় একটি ব্যবসায়ী পরিবারে খুঁজে পাওয়া দুর্লভ।’ তাঁর ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি হিউমরের প্রশংসাও করেছিলেন তিনি। এও শোনা যায়, তিনি ও রতন টাটা দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন।
কিন্তু ওই যে, সময় শেষ কথা বলে। তাই সময়ই শেষ কথা বলে দিয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতির জেরে আর সম্পর্কটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। তবে দুজনের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ক্ষুণ্ণ হয়নি। রতন টাটার প্রয়াণের পর আজ এ কথা বলাই যায়, বিয়ে না হলেও ‘প্রেমিকা’র ভালবাসার অনুভূতি চিরকাল তাঁর সঙ্গী ছিল। শুধু ‘প্রেমিকা’ কেন? কোটি কোটি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা শেষ মুহূর্ত (Ratan Tata death) পর্যন্ত তাঁর সঙ্গী ছিল। বিশ্বাস করতে ভালো লাগে — আগামীদিনেও এই ভালোবাসা তাঁর স্মৃতির সঙ্গী হবে!