প্রজাতন্ত্র ভারতের ৭৫বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবসে পা দিল স্বাধীন ভারত। ১৯৫০ সালের একই দিনে কার্যকর হয়েছিল ভারতীয় সংবিধান । এই দিনটিতেই প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করে ভারত। এই মহান দিনের স্মরণেই প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশপ্রেমে ভরে ওঠে ভারতীয় মন।
৭৬তম বছরে প্রজাতন্ত্র দিবসের কতটা পরিবর্তন হয়েছে
বহু বছর ধরে চলা দীর্ঘ সংগ্রামের পর অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীন ভারতের জন্ম হয়। এই নতুন ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় এবং এই প্রয়োজন পূরণের জন্য একটি কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি গঠন করা হয়। দেশ ও জনগণের সকল চাহিদা ও স্বার্থের কথা মাথায় রেখে দীর্ঘ দুই বছর ১১ মাস ১৮ দিনের চিন্তা-চেতনার পর দেশের সংবিধান প্রণীত হয়।
১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি এটি অনুমোদন করে এবং সেই কারণেই প্রতি বছর ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবস পালিত হয়। এর পরে, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি, দেশের সংবিধান কার্যকর হয় এবং ভারত একটি প্রজাতন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এই দিনটি বিভিন্ন দিক থেকে ছিল বিশেষ, কারণ এই দিনেই প্রথম রাষ্ট্রপতিও পেয়েছিল স্বাধীন ভারত। এই দিনেই ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। আর আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দেশের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। উল্লেখযোগ্যভাবে তিনিই আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে আসা ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি।
১৯৫০ প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি ডাঃ সুকর্ণো। এদিন প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানোর রীতি শুরু হয়। আজও সেই রীতি মেনে আসছে ভারত। ২০২৫ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের সঙ্গে ১৯৫০ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কিন্তু একটা দারুণ মিল রয়েছে। কারণ এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারতের প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোকে।
এইভাবে প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন হয়েছিল
ভারতের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে, ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ সংবিধান বাস্তবায়নের পর, রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর পতাকা উত্তোলন করেন। প্রথমবারের মতো, প্রজাতন্ত্র দিবসে ৩১ বন্দুকের স্যালুট দেওয়া হয়েছিল,যদিও পরে এই সংখ্যা কমে ২১ করা হয়। জেনে অবাক হবেন যে প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসটি আরউইন স্টেডিয়ামে পালিত হয়েছিল, যেখানে বর্তমানে দিল্লি চিড়িয়াখানা অবস্থিত এবং আজ এই স্টেডিয়ামটিকে মেজর ধ্যানচাঁদ স্টেডিয়ামও বলা হয়। ১৯৫০ সালে, আরউইন স্টেডিয়ামের (বর্তমানে মেজর ধ্যানচাঁদ স্টেডিয়াম) পরে, রেড ফোর্ট, কিংসওয়ে ক্যাম্প এবং তারপর রামলীলা ময়দানেও প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছিল।
১৯৫০ সালের কুচকাওয়াজ ও ২০২৫ সালের কুচকাওয়াজ
১৯৫০ সালের কুচকাওয়াজ ২০২৫ সালের কুচকাওয়াজের মতো দুর্দান্ত হয়ত নাও হতে পারে, কিন্তু এটি ছিল প্রত্যেক ভারতীয়ের জন্য গর্বের প্রতীক, ভারতীয়দের জন্য একটি নতুন শুরুর দিন। পরবর্তী বছরগুলিতে, প্যারেডের জাঁকজমক বৃদ্ধি পায় এবং লোকনৃত্য, ট্যাবলো, আতশবাজির রমরমা নজর কাড়ে। আবার এই বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসে সংবিধান বাস্তবায়নের 'প্ল্যাটিনাম জুবিলি' উদযাপন করবে ভারত। অতএব, এই প্রজাতন্ত্র দিবস এমনিতেই খুব বিশেষ, তবে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, দেশের স্থলভিত্তিক সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী জয়েন্ট ট্যাবলো প্রদর্শন করতে চলেছে। এটি এই প্রজাতন্ত্র দিবসটিকে আরও বিশেষ করে তোলে। দেশের সেনাবাহিনীর এই যৌথ ট্যাবলো প্রদর্শনের উদ্দেশ্য হল তিন সেনাবাহিনীর মধ্যে আরও ভাল সমন্বয় এবং বোঝাপড়ার প্রচার করা।
প্রসঙ্গত, সবশেষে এটা বলতেই হবে যে প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসটি যে কেবল অনুষ্ঠান ছিল তা কিন্তু একেবারেই নয়, এটি ছিল প্রথমবার, হাজারও দুর্দিন শেষে ভারতের প্রজাতন্ত্র হওয়ার উদযাপন। আজও, ১৯৫০ সালের সেই ঐতিহাসিক দিনের স্মৃতি প্রত্যেকে ভারতীয়ের দেশপ্রেমী মন গর্বে ভরিয়ে তোলে।