পয়লা বৈশাখ এখন শুধুই স্মৃতি। কারণ কলেজ স্ট্রিটে আগের মতো পয়লা বৈশাখ পালন হয় না। এখন বিভিন্ন জায়গায় বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমাদের সময় এই দিনটি ছিল অন্যরকম আনন্দের দিন। তখন গরম থাকলেও এত ভয় ছিল না। এখন তো শুধুই হিট স্ট্রোকের ভয়। আমরা মাথায় রুমাল জড়িয়ে কলেজ স্ট্রিটে যেতাম। কেউ ছাতা ব্যবহার করত না। সেই যাওয়ার মধ্যেই ছিল প্রবল আনন্দ।
কলেজে পড়ার সময় থেকেই কলেজ স্ট্রিটের নববর্ষে যাই। বড় বড় সাহিত্যিকরা আসতেন। বিমল করকে দেখতাম। আসতেন সমরেশ বসু। তাঁদের চোখের সামনে দেখাটাই ছিল সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাঁরা আড্ডা দিতেন। কখনও তর্কও বাঁধত। আমরা দূর থেকে দেখতাম। এরই মধ্যে ডাবের জল আসত। আড্ডার মোড় ঘুরে যেত অন্যদিকে। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে নতুন নতুন বই প্রকাশ পেত। বইগুলো কেনার জন্য ভিড় করত নানা পাঠক।
যখন লেখকদের তালিকায় আমারও নাম উঠে এল তখন আমি আর বাইরে নয় প্রকাশকদের ঘরের একপাশে বসেই আড্ডা দিতাম। নানা খবার আসত। অনেক লেখক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হত আর জমে উঠত আড্ডা। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে লেখকদের এই আড্ডায় বেশি দেখনি। বিমল ঘোষ, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়-সহ অনেকেই আসতেন নববর্ষের আড্ডায়।
তখন বেস্টসেলার বলে শব্দটি এত শুনতে পেতাম না। বেস্টসেলার মানেই যে সেটা ভালো বই এমন কোনও কথা নেই। বিশ্ব সাহিত্যে এমন অনেক কালজয়ী বই আছে যা বাজারে কাটেনি। আমাদের আড্ডায় নানা বিষয় নিয়ে কথা হত। তারপর সন্ধ্যা হয়ে যেত। কলকাতায় বইতে শুরু করত গঙ্গার শীতল হাওয়া। সেই হাওয়া খেতে খেতে বাড়ি চলে আসতাম।