Sanjida Khatun Demise: গানের মধ্যে দিয়ে খুঁজেছেন আত্মপরিচয়। তাঁর সম্পর্কে একদা এমন কথাই লিখেছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। সংস্কৃৃতি জগতের সেই উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক সনজীদা খাতুন প্রয়াত হলেন ৯১ বছর বয়সে। মুহ্যমান বাংলার শিল্পীমহল। গত শতকে বাংলাদেশের তীব্র রাজনৈতিক সংকটের সময়েও তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ও সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম পথিকৃৎ। শান্তিনিকেতনে সকলের প্রিয় সেই ‘মিনুদি’কেই স্মরণ করলেন রবীন্দ্রগবেষক পীতম সেনগুপ্ত। সাক্ষী থাকল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।
আরও পড়ুন - ‘মাথার উপর মহীরুহের মতো ছিলেন’ সনজীদা-স্মরণ শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার
‘প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে গান শেখাতেন’
সাম্প্রদায়িকতা ও রাষ্ট্রীয় নানা সমস্যায় যখন বাংলাদেশ জর্জরিত, নিরন্তর রবীন্দ্র আদর্শ স প্রচার করে গিয়েছিলেন সনজীদা। পীতমের কথায়, ‘আমাদের সময়কালে আমরা যাঁদের পেয়েছি, তাঁদের মধ্যে খুবই নিয়মানুবর্তী ছিলেন সুচিত্রাদি (সুচিত্রা মিত্র) ও মিনুদি (সনজীদা খাতুন)। তবে সুচিত্রাদির থেকেও গণআন্দোলন, নাগরিক সভ্যতার ওঠানামার মধ্যে অনেক বেশি জড়িত ছিলেন মিনুদি। এমনটা বলার কারণ, বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে, তখন প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়েও রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনিয়েছেন মিনুদি। তাঁর স্বামী ওয়াহিদুল হকও তাঁকে সাহায্য করেছিলেন সেই কাজে। আজ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ যে রবীন্দ্রগানের চর্চা করেন, চর্চার সময় এপার বাংলা-ওপার বাংলা বিভেদ করেন না, তার নেপথ্যে অনেকটাই অবদান কিন্তু মিনুদির। আজ বাংলাদেশে রবীন্দ্র গানের চর্চা অনেক বেশি বিশুদ্ধ। এর পিছনেও ভূমিকা রয়েছে মিনুদি ও তাঁর স্বামীর।’
আরও পড়ুন - ‘স্মরণীয় প্রতিভা’ সঙ্গীতশিল্পী সনজীদা খাতুনের প্রয়াণে শোকাহত পবিত্র সরকার
‘নিজেকে দান করেছেন’
বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের গানকে আরও ছড়িয়ে দিতে পরবর্তীকালে সনজীদা খাতুন ছায়ানট গড়েছেন। ছায়ানটের মধ্যে দিয়ে বর্ষবরণ, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, রবীন্দ্রগানের পাশাপাশি অন্যান্য গানের চর্চার মধ্যে নিজেকে ‘দান’ করেছেন। শান্তিনিকেতনে একটা সময় গান শিখেছেন, পড়াশোনা করেছেন। মিনুদির লেখাতেও সেই যুক্তিনিষ্ঠতার ছাপ বারবার প্রত্যক্ষ করেছি। পরিপূর্ণ সাংস্কৃতিক মন তাঁর মধ্যে পাওয়া যায়।
‘যথেষ্ট বলিষ্ঠ চরিত্র’
রবীন্দ্রনাথ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েও অনেক সাহায্য পেয়েছেন পীতম। সে কথাও উঠে এল তাঁর স্মৃতিচারণে। লেখকের কথায়, ‘তাঁকে নারী হিসেবে দেখার থেকেও মানুষ হিসেবে মিনুদি যথেষ্ট বলিষ্ঠ চরিত্র। রবীন্দ্রনাথের গানের মধ্যে দিয়ে দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন বারবার। আমি নিজেও ব্যক্তিগত স্তরে তাঁর অনেক কথা শুনে সমৃদ্ধ হয়েছি। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে তাঁর বলা নানা কথা আজ আমাদের মতো রবীন্দ্রগবেষকদের কাছে বড় সম্পদ।’