দেবী সরস্বতীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রে উচ্চারণ করা হয় —
ঔঁ ভদ্রকালৈ নমো নিত্যং সরস্বতৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদান্ত বেদাঙ্গ-বিদ্যাস্থানেভ্যঃ এব চ।
এষ স-চন্দন বিল্বপত্র পুষ্পাঞ্জলি ঔঁ ঐং শ্রী শ্রী সরস্বতৈ নমঃ।
দেবী সরস্বতী কি কালীরই আরেক রূপ? কী বলছে শাস্ত্র?
মা সরস্বতী ও মা কালী, দুই দেবীই হিন্দু ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তাঁদের ভূমিকা ভিন্ন। সরস্বতী দেবী বিদ্যার, সঙ্গীতের, কলার এবং জ্ঞানের দেবী। অন্যদিকে কালী দেবী সাধারণত শক্তি, ধ্বংস এবং পুনর্নির্মাণের প্রতীক হিসেবে পূজিত হন।
আরও পড়ুন - কীভাবে বাঙালির এত আপন সরস্বতী পুজো? কী বলছে বাগদেবী আরাধনার ইতিহাস
তবে, সরস্বতী পুজোর পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্রে ভদ্রকালীর উল্লেখের পিছনে কিছু বিশেষ সাংস্কৃতিক বা আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ রয়েছে। শাস্ত্রের মা কালীকে জ্ঞানস্বরূপা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক শাস্ত্রের মতে, কালী ও সরস্বতী আদতে একে অপরের বিশেষ রূপ। অর্থাৎ মা কালীই সরস্বতী, আবার মা সরস্বতীই কালী। ভদ্রকালীকে শাস্ত্রে বলা হয়েছে ‘অনিরুদ্ধা সরস্বতী’। অর্থাৎ তিনি ও দেবী সরস্বতী একইসঙ্গে অবস্থান করেন। বলা হয় মা কালী জ্ঞানস্বরূপা, অন্যদিকে মা সরস্বতী জ্ঞানপ্রদায়িনী।
আরও পড়ুন - ‘বিদ্যা দদাতি বিনয়ং’ শিক্ষাই জীবনের পাথেয়, পরিজনদের পাঠান সরস্বতী পুজোর শুভেচ্ছা
নানাভাবে মা কালীর ও মা সরস্বতীর মধ্যে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। যেমন ধরা যাক, অক্ষমালার কথা। মা কালীর গলায় ৫১ মুণ্ডের মালা থাকে। অন্যদিকে দেবীর হাতে থাকা অক্ষমালাতেও রয়েছে ৫১ বর্ণ। ক থেকে ক্ষ সেই বর্ণগুলি। দেবী কালিকার খড়্গকে জ্ঞানখড়্গ বলেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তার কারণ, এই খড়্গের আঘাতে মায়া, মোহ, সংসার, অবিদ্যার ছেদন হয়। মা সরস্বতীর হাতে সেই খড়্গের অনুরূপে থাকে বেদ। তিনি সাধককে দান করেন জ্ঞান।
আবার অন্যদিকে ভদ্রকালীর উল্লেখ এই অর্থে হতে পারে যে, কালী কেবল ধ্বংসের নয়। বরং নির্মাণ ও জ্ঞানও। বহু প্রাচীন শাস্ত্রে কালীকে সৃজনশীল শক্তির, মহাকালের সঞ্চালিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ অনুসারে, মা সরস্বতী এবং মা কালীকে একই সঙ্গে পূজা করা হয়, যেখানে কালী শক্তির দেবী হিসেবে এবং সরস্বতী জ্ঞানের দেবী হিসেবে পূজিত হন।