হুগলির শ্রীরামপুরের পঞ্চানন তলায় দোলের দিন মহিষাসুরমর্দিনী পূজার রীতি চলে আসছে দীর্ঘ ২২১ বছর ধরে। এই বিশেষ পূজার সূচনা করেন দে পরিবারের দুই সদস্য - পুলিনবিহারী দে এবং নগেন্দ্রনাথ দে। ১২১১ বঙ্গাব্দে (১৮০৪ সালে) তাঁরা স্বপ্নাদেশ পান। তারপর থেকেই এই পূজার প্রচলন শুরু হয়। স্থানীয়ভাবে এই পুজো 'অকাল দুর্গা' বা মহিষাসুরমর্দিনী পূজা হিসেবে পরিচিত।
পূজার পদ্ধতি ও রীতি
শ্রীরামপুরের পঞ্চানন তলায় এই পূজা সম্পূর্ণ তন্ত্র মতে অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপূজার মতো কলা বউ স্নান বা বোধনের আয়োজন না হলেও, সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত নিয়ম মেনে পূজা হয়। তবে পূজার বিশেষত্ব হল, এখানে দেবী দুর্গার দুই পাশে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীর পরিবর্তে তাঁর দুই সখী জয়া ও বিজয়া উপস্থিত থাকে।
আগে এই পূজায় মোষ ও ছাগল বলির প্রচলন ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এই বলি প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে নবমীর দিন দেবীকে মাছের ভোগ দেওয়া হয়। অষ্টমী ও নবমী দিনে মহাভোগের আয়োজন করা হয় এবং বহু মানুষ ভোগ গ্রহণের জন্য এখানে সমবেত হন।
বারোয়ারি পূজার রূপান্তর
১৯৭০ সাল থেকে এই পূজার দায়িত্ব নেয় স্থানীয় শ্রীরামপুর টাউন ক্লাব। আগে এটি একটি পারিবারিক পূজা ছিল, কিন্তু এখন এটি বারোয়ারি পূজায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে পূজার আয়োজন ও পরিচালনার দায়িত্বে আছেন এই ক্লাবের সদস্যরা।
ক্লাবের সদস্য তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “দোলের দিন থেকে পূজা শুরু হয় এবং চার দিন ধরে চলে। অষ্টমীর দিন মহাভোগ ও নবমীর দিন মৎস্য ভোগের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি বছর দু-তিন হাজার মানুষের ভোগের আয়োজন করা হয়। এই কয়েক দিন পাড়ার কোনও বাড়িতে রান্না হয় না। অতিথিদেরও এখানে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।"
আরও পড়ুন - Dolyatra 2025: কোচবিহারে দোলের নেপথ্যে শ্রীকৃষ্ণের ভেড়াসুর বধ! মদনমোহন পুজোতে কেন এই রীতি
দোলের সাথে পূজার সংযোগ
দোল উৎসবের দিন দেবীর পায়ে আবির দিয়ে পূজার সূচনা করা হয়। সকাল থেকেই প্রভাতফেরির মাধ্যমে আবির খেলা শুরু হয় এবং পূজার দিনগুলিতে স্থানীয় মানুষের মধ্যে এক আনন্দমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
পুরোহিত ত্যাগী নাথ অঘোর পি জানান, “কালিকাপুরাণ অনুযায়ী এই পূজা তন্ত্র মতে অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এখানে সপ্তমী, অষ্টমী বা নবমী তিথির বিশেষত্ব নেই, তবে পূর্ণিমা তিথি থেকে প্রতিপদ, দ্বিতীয়া ও তৃতীয়া পর্যন্ত দেবীর পূজা হয়।"
আরও পড়ুন - Dolyatra 2025: হোমানল দিয়ে হয় বহ্নি উৎসব, ৩০০ বছর পেরিয়ে আজও অমলিন শোভাবাজার রাজবাড়ির দোল
শ্রীরামপুরের এই 'অকাল দুর্গাপূজা' স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই প্রথা চলমান রয়েছে এবং আজও গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে পালিত হচ্ছে।