Shantiniketan Poushmela 2024: দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ফিরে আসছে পৌষমেলা। বাউলসঙ্গীত, হস্তশিল্প ও শিল্পীদের সমাগমে ফের মুখর হয়ে উঠবে মেলা প্রাঙ্গণ। পূর্বপল্লীর মাঠে পৌষমেলার আয়োজন শুরু হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে। এই মেলা আয়োজনের ইচ্ছে ছিল তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের। প্রতি বছর ৭ পৌষ মেলার শুভ সূচনা হয়। কিন্তু কেন এই বিশেষ দিনে শুরু হয় শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা? জানা যায়, এর নেপথ্যে রয়েছে প্রায় দুই শতক আগের এক ঘটনা।
যেখান থেকে শুরু
অতীতের দিকে হেঁটে ফিরে যেতে হবে ১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর তারিখে। বাংলা সন ১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ ছিল সেই দিন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কুড়িজন সহব্রতীসহ রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ মহাশয়ের কাছে ব্রহ্মের নামে অঙ্গীকার করে দীক্ষাগ্রহণ করলেন। দিনটিকে তাই ব্রাহ্মধর্মের সূচনা দিবস হিসেবে ধরা হয়। গোড়াতেই ধর্মের নামকরণ অবশ্য ‘ব্রাহ্মধর্ম’ হয়নি। ‘বেদান্ত প্রতিপাদিত ধর্ম্ম’ নামে পরিচিত ছিল দেবেন্দ্রনাথ ও তাঁর সহব্রতীদের ভাবনাপ্রসূত ধর্ম। তবে শুরু থেকেই অনেক শিক্ষিত ব্যক্তির মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছিল ব্রাহ্মধর্ম। নতুন ধর্ম নিয়ে আগ্রহ আরও বিকশিত করার একটি তাগিদও অনুভব করেছিলেন মহর্ষি। তাই দীক্ষাগ্রহণের দুই বছর পর একটি উৎসবের পরিকল্পনা করেন। ১৮৪৫ সালে দীক্ষাগ্রহণের দিন অর্থাৎ ৭ পৌষ সেই উৎসব পালিত হল। উৎসবের আয়োজন অবশ্য শান্তিনিকেতনে হয়নি। দেবেন্দ্রনাথের পলতার পরপারে গোরিটির বাগানবাড়িতে আয়োজিত হয় পৌষ উৎসব।
পৌষ উৎসব ও মেলা ভিন্ন ধারণা
পৌষ উৎসব আর মেলা এক নয়। মেলা আয়োজনের ইচ্ছে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। সে কথা তিনি উল্লেখ করেন তাঁর ট্রাস্ট ডিড বা অছিপত্রে। ১৮৮৮ সালের ৮ মার্চ শান্তিনিকেতনের ট্রাস্ট ডিডে লেখেন, ‘নিরাকার এক ব্রহ্মের উপাসনা ব্যতীত কোনও সম্প্রদায় বিশেষের অভীষ্ট দেবতা বা পশু, পক্ষী, মনুষ্যের বা মূর্ত্তির বা চিত্রের বা কোনও চিহ্নের পূজা বা হোম যজ্ঞাদি ওই শান্তিনিকেতনে হইবে না।--- ধর্ম্মভাব উদ্দীপনের জন্য ট্রষ্টীগণ বর্ষে বর্ষে একটি মেলা বসাইবার চেষ্টা ও উদ্যোগ করিবেন। এই মেলাতে সকল ধর্ম্ম বিচার ও ধর্ম্মালাপ করিতে পারিবেন। এই মেলার উৎসবে কোন প্রকার পৌত্তলিক আরাধনা হইবে না ও কুৎসিত আমোদ-উল্লাস হইতে পারিবে না, মদ্য মাংস ব্যতীত এই মেলায় সর্ব্বপ্রকার দ্রব্যাদি খরিদ বিক্রয় হইতে পারিবে। যদি কালে এই মেলার দ্বারা কোনও রূপ আয় হয়, তবে ট্রষ্টীগণ ঐ আয়ের টাকা মেলার কিম্বা আশ্রমের উন্নতির জন্য় ব্য়য় করিবেন।’(বানান অপরিবর্তিত)
পৌষমেলায় কখনও আসেননি মহর্ষি
এই ডিড অনুসরণ করে ও মহর্ষির ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ১৮৯৪ সালে পৌষমেলার আয়োজন করল। তারিখ অপরিবর্তিত থাকল। ৭ পৌষ অর্থাৎ যেদিন ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষাগ্রহণ করেছিলেন মহর্ষি ও তাঁর সহব্রতীরা, সেই দিনই আয়োজিত হল পৌষমেলা। পৌষ উৎসবের আয়োজন করলেও পৌষমেলায় কখনও যোগ দেননি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। কারণ, বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ বলছে, ১৮৮৩ সালে তিনি শেষবার শান্তিনিকেতন আসেন। পৌষমেলা প্রথম আয়োজিত হয়েছিল ১৮৯৪ সালে।
কততম পৌষমেলা এই বছর?
পৌষ উৎসব আর মেলা শান্তিনিকেতনে একইসঙ্গে শুরু হয়নি। শান্তিনিকেতনের শুরুর বছরটি অর্থাৎ ১৮৯১ সালটিকে শান্তিনিকেতনে পৌষ উৎসবের প্রথম সাল হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই হিসেবে ২০১৯ সালে শান্তিনিকেতনে পালিত হয়েছিল ১২৮তম পৌষ উৎসব। অন্যদিকে পৌষমেলা শুরু হয়েছিল ১৮৯৪ সালে। ফলে ২০১৯ সালে মেলার ১২৫তম বর্ষপূর্তি হয়। ২০২৪ সালে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ১২৯তম বর্ষ হবে পৌষ উৎসবের। অন্যদিকে পৌষমেলার ১২৬তম বর্ষপূর্তি হচ্ছে এই বছর।
------------------------------
তথ্যসূত্র - শান্তিনিকেতনের পৌষ-উৎসব ও মেলা: বিবর্তনের রূপরেখা -মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়