বাংলা নিউজ > টুকিটাকি > 15th August, 1947: দেশভাগের কারণে আমাদের পরিবার ছন্নছাড়া হয়ে যায়: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

15th August, 1947: দেশভাগের কারণে আমাদের পরিবার ছন্নছাড়া হয়ে যায়: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণে প্রথম স্বাধীনতা দিবস। গ্রাফিক্স: সুমন রায়

কেউ কলকাতায় চলে গেল, কেউ-বা অন্য জায়গায়। উঠোন ঘেরা চারটি ঘর ছিল। আমি ও দিদি থাকি এক ঘরে। ঠাকুমা থাকেন আরেক ঘরে ও অন্য একটি ঘরে দাদা থাকতেন। তারপর ১৪ অগস্ট এল। সকাল বেলা উঠেছি। মন খুব ভার। আমাদের দেশটা পাকিস্তান হয়ে গেল!

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

আমি তখন ময়মনসিংহে। কয়েক মাস আগেই আমরা জানতে পারি দেশভাগ আসন্ন এবং ময়মনসিংহ-সহ পুরো পূর্ববঙ্গ চলে যাবে পাকিস্তানের অধীনে। আমার বাবা রেলে চাকরি করতেন। সেই সূত্রে দেশভাগের দুই-তিন বছর পূর্বেই বাবা দোমহনি থেকে ময়মনসিংহে বদলি হয়েছিলেন। আমি খুব আনন্দিত ছিলাম, ময়মনসিংহে আমরা এসেছি। বিক্রমপুরে আমার দেশ। ঢাকার বিক্রমপুর। আমার দাদু অনেক আগেই বিক্রমপুর থেকে চলে এসেছিলেন। ময়মনসিংহে আমরা থিতু হয়েছিলাম। নতুন করে আমরা বসতি স্থাপন করেছিলাম।

দাদু উকিল হওয়ার সূত্রে এখানকার কোর্টে প্র্যাকটিস করতেন। ময়মনসিংহ আমার খুব প্রিয় জায়গা। কারণ আমার জন্মস্থান ময়মনসিংহ। অসম্ভব সুন্দর। সেই সময়ের শহরগুলোয় গ্রাম গ্রাম ভাব ছিল। নদী মাঠ-ঘাট ঘেরা শহর। ব্রহ্মপুত্রের ওপারে অন্ধকার হলেই আলেয়ার আলো জ্বলে ওঠা আমায় আমাকে মুগ্ধ করে দিত। এসব নিয়েই ছিল আমার দেশ। আমার জন্মভূমি। একদিন খবর পাই দেশভাগ হবে। তখন মা-বাবা ও ছোট ভাই-বোন নানা দিকে চলে গেল। আমি ও দিদি স্কুলে পড়ি। স্কুলের পড়াশোনায় ক্ষতি হবে, তাই আমরা রয়ে গেলাম। ঠাকুমা ও এক জ্যাঠতুতো দাদা থেকে গেল। বাড়ি একদম ফাঁকা হয়ে গেল।

নানা মানুষ বিভিন্ন জায়গায় চলে গেল। কেউ কলকাতায় চলে গেল, কেউ-বা অন্য জায়গায়। উঠোন ঘেরা চারটি ঘর ছিল। আমি ও দিদি থাকি এক ঘরে। ঠাকুমা থাকেন আরেক ঘরে ও অন্য একটি ঘরে দাদা থাকতেন। তারপর ১৪ অগস্ট এল। সকাল বেলা উঠেছি। মন খুব ভার। আমাদের দেশটা পাকিস্তান হয়ে গেল! আমরা আর এই দেশে থাকতে পারব না। সকালে দাদার এক বন্ধু এলেন। এসে বললেন, 'এখনও ফ্ল্যাগ তোলস নাই ক্যান?' তাঁকে বলি, বাড়িতে তো কোনও পতাকা নেই। তিনিই একটি পতাকা পাঠালেন। বাড়িতে বাঁশ দিয়ে সেই পতাকা তুলি। পাকিস্তানের পতাকা! তারপর সারা শহর ঘুরতে বেরই।

সকলের মধ্যে কী উল্লাস। সে কী চিৎকার-চেচামেচি। পাকিস্তান জিন্দাবাদ এসব স্লোগান। তখন এক রকম বোম ছিল। লোহার নলের মধ্যে বারুদ পুরে সলতে দিয়ে সেই বোম ফাটানো হত। সেই গাইটঠা বোম সারি পরপর ফাটানো হচ্ছে। উল্লাস। পরস্পরকে জড়িয়ে ধরছে মানুষ। আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে সবার মধ্যে। কিন্তু আমি আনন্দ করতে পারছি না। কারণ পাকিস্তান তো আমার দেশ নয়! উল্লাসে ভেসে যাচ্ছি কিন্তু কিছুতেই সেই অনভূত হচ্ছে না। রাস্তা দিয়ে আনন্দ উৎসব দেখছি। তেমন খারাপও লাগছে না। যদিও মন বলছে আমাকে তো দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই দেশে থাকতে পারব না আমি। আসলে এ এক অদ্ভুত অনুভূতি! কয়েক দিন আগেই এই দেশ আমার ছিল। এখন অন্যের দেশ হয়ে গেল! আমার জন্ম থেকে শৈশব যে দেশে‌ কেটেছে, হঠাৎ সেই দেশ আমার নয়! মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়েছিল। আর এ থেকে প্রবল হতাশা।

একজন মানুষের থেকে তার দেশ কেড়ে নেওয়া-- কী যে আঘাতের ব্যাপার, তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। তবে আমার শোক তো শৌখিন শোক। কিন্তু যেসব মানুষ ভিটে মাটি জমি ঘর বাড়ি সব হারাল! তাদের কী হবে! তারপর তো ডাকাতি শুরু হয়ে গেল চারদিকে। যারা দেশ ছেড়েছে তাদের সম্পত্তি দখল হয়ে গেল। অনেকেই নিঃসম্বল অবস্থায় দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে এসেছে। কোনও মতে শরণার্থীশিবিরে থাকা খাওয়া জুটেছে।

আমার সে ঘটনা এখনও স্মৃতিতে বিদ্যমান। কারণ এমন দিন খুব কমই এসেছে আমার জীবনে। খুব বিষণ্ণ মনভাব সেদিন। কান্না-কান্না চোখে ফিরে এসেছি বাড়িতে। ঠাকুমা, দিদি ও আমি সবাই নীরব। বুঝতে পেরেছি এবার চলে যেতে হবে। কয়েক মাস পরেই এক ভোররাতে আমরা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে আসি। কী যে বেদনাদায়ক সেই মুহূর্ত! সে কথা বলতে গেলে ভাষাহীন হয়ে পরি। যদিও আমাদের তেমন সমস্যা হয়নি। বাবা রেলে চাকরি করতেন। তাই অসমে সরকারি কোয়াটারে এসে বসবাস শুরু করি। দেশভাগের ফলে আমাদের পরিবার ছন্নছাড়া হয়ে যায়। কে যে কোথায় চলে গিয়েছে-- আজও অজানা!

পূর্ববঙ্গে একটা যৌথ পরিবারের ভাবনা ছিল। কিন্তু এখানে এসে সবাই যেন নিমেষে হারিয়ে গেল! আজ আমাদের পরিবারের অনেক ভাই-বোনকে আমি নিজেই চিনি না। এক সময় লতায় পাতায় জড়িয়ে থাকা আত্মীয়রাও পরমআত্মীয় ছিলেন। এই যে যৌথ পরিবারের পরিকল্পনা-- দেশভাগের ফলে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। এই ঘটনা খুব পীড়া দেয়। আমরা খুব আত্মীয়বৎসল ছিলাম। প্রকৃতপক্ষে বাঙালরা আত্মীয়বৎসল হয়। আত্মীয়দের খোঁজখবর রাখা ও দেখাশোনা করা এক অন্যতম অঙ্গ ছিল।

সেই সময় সীমান্তে কোনও পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশনের ব্যাপার ছিল না। অবাধ যাতায়াত চলত। কণকণে এক শীতের রাতে ঠাকুমা দিদি ও আমি ট্রেনে চেপে এদেশে চলে আসি। হিন্দুদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে মাইগ্রেশন চলছিল। অবশ্য শুধু হিন্দু নয়, এ দেশের অনেক মুসলিমও বাংলাদেশে চলে যায় তখন। তবে সেই সংখ্যাটা নেহাতই কম। স্বাধীনতার চেয়েও দেশ হারানো বেদনা আমার কাছে অনেক বড়ো বিষয়!

টুকিটাকি খবর

Latest News

গাড়ির সামনে ছিল নিজেরই সন্তান, না দেখে চারচাকা চালিয়ে দিলেন বাবা! এরপর? আগামিকাল কেমন কাটবে? সুখবর পেতে পারেন? জানুন ২৪ এপ্রিল বুধবারের রাশিফল মালদায় আম বাগানের একী হাল! তবে কি এবার মিলবে না? দাম কেমন হবে?খোঁজ নিল HT Bangla কৃষ্ণনগরের ছেলে-শান্তিপুরের মেয়ে, দ্বৈপায়ন-পায়েলের যুগলবন্দি দেখে মুগ্ধ সৌরভ মহিলাকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে বিজেপি কর্মীকে মারধর, ভাঙচুর করা হল দোকান বিনয় তামাংকে বহিষ্কার করল কংগ্রেস, টানা ৬ বছরের জন্য সরিয়ে দিল পাহাড়ি নেতাকে ‘শীতলকুচি… বিএসএফ কার কথায় গুলি চালিয়েছিল?’ বীরভূমে কাকে খোঁচা মমতার? ২০১৯-এর তুলনায় ২০২৪-এ ১ম দফায় ভোটের হার কমেছে, বাড়ানোর লক্ষ্যে নয়া কৌশল EC-র ৬০০০ ধাপ পেরিয়ে মাউন্ট তাইশানে উঠতে গলদঘর্ম চিনের মানুষ, ভাইরাল ভিডিয়ো আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে বিশেষ উপহার, কৌশাম্বিকে বিয়ে নিয়ে প্রথমবার মুখ খুললেন আদৃত

Latest IPL News

বিদেশিদের ব্যর্থতা নাকি ভালো স্পিনারের অভাব! কেন ফের ডুবতে বসেছে প্রীতির পঞ্জাব IPL 2024: ক্রিকেটের ব্যাকরণকে নতুনভাবে লিখছে SRH, ফিরে দেখা তাদের কার্যকলাপ ব্যর্থতার ধারা বজায় প্রথমার্ধে, পন্তের দিল্লিকে আশার আলো দেখাচ্ছেন ম্যাকগার্ক IPL 2024: MI-র বিরুদ্ধে ৫ উইকেট নিয়ে অতীতের যন্ত্রণার কথা মনে করলেন সন্দীপ শর্মা RR vs MI: আমি মনে করি না ওর কারোর পরামর্শের দরকার আছে- যশস্বীর প্রশংসায় সঞ্জু IPL-এ দ্বিতীয় শতরান! MI-এর বিরুদ্ধে ভালো খেলার রহস্য ফাঁস করলেন যশস্বী সূর্য, হার্দিক নয়, প্রাক্তন নাইটকে পরবর্তী T20 দলের অধিনায়ক হিসাবে বাছলেন ভাজ্জি ‘ধোনির ব্যাটের তলা দিয়ে বল গেলেও ওয়াইড’,কাইফের পোস্টে লাইক দিয়ে রোষের মুখে বিরাট বেগুনি টুপির দৌড়ে বুমরাহর সঙ্গে একই ট্র্যাকে চাহাল, কমলা টুপির মালিক কোহলি বিনিয়োগ নিয়ে ভাবছি না, স্টার্ক মার খেতেই সাফাই KKR CEO-র

Copyright © 2024 HT Digital Streams Limited. All RightsReserved.