১৯ অগস্ট, শুক্রবার পড়েছে এবারের জন্মাষ্টমীর তিথি। বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্ম এই পুণ্য তিথিতে হয়েছিল বলে মনে করা হয়। মানুষের হিংসা যখন চরম আকার নেয়, চারিদিকে যখন অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে তখনই ভগবান বিষ্ণু অবতার রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে আসেন বলে মনে করা হয়। তেমনই মথুরার রাজা কংসের অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেলে তাঁরই বোনের গর্ভে জন্ম নেন কৃষ্ণ। এবং মামাকে বধ করে রক্ষা করেন পৃথিবীকে। কৃষ্ণের জন্মতিথিকেই জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করা হয়।
এই জন্মাষ্টমী তিথির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৫৬ ভোগের ইতিহাস। ভক্তরা এই দিন ৫৬ ধরনের ভোগ নিদেবেন করেন কৃষ্ণের বাল্যরূপ গোপালকে। অনেকেই গোপালকে বাড়ির ছোট এবং অন্যতম সদস্য মনে করেন। কিন্তু এখন মনে প্রশ্ন আসতেই পারে হঠাৎ ৫৬ ভোগ?
৫৬ ভোগের ইতিহাস
বৃন্দাবনে যাঁরা থাকতেন তাঁরা ইন্দ্র দেবকে তুষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মহার্ঘ্য ভোগ নিবেদন করত, কারণ ইন্দ্র হচ্ছেন বৃষ্টি এবং বজ্রের দেবতা। তাঁর কৃপাতেই বৃষ্টিপাত হয়। আর ভালো ফসলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণের বৃষ্টি দরকার। কিন্তু কৃষ্ণ বুঝছেন গরীব চাষীদের পক্ষে এত দামী ভোগ নিবেদন করা সম্ভব নয়। তখন তিনি বৃন্দাবনের সমস্ত চাষীকে বোঝান যে যাঁর সামর্থ্য মতো যেন ইন্দ্রদেবকে ভোগ দেন। কিন্তু এই ঘটনার ফলে রেগে যান ইন্দ্র দেব। রাগের চোটে শুরু করলেন প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি। এর ফলে বৃন্দাবনে প্রলয় দেখা দেয়, সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে। কৃষ্ণই তখন তাঁদের গোবর্ধন পর্বতের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
সেখানে গিয়ে অবাক হয়ে যান বৃন্দাবনবাসীরা। দেখেন কৃষ্ণ তাঁর কড়ে আঙুলে এই পর্বত তুলে রেখেছেন। তখন তাঁরা সবাই এই পর্বতের নিচে আশ্রয় নেন। এরপর টানা সাতদিন তুমুল ঝড়-বৃষ্টি হয়। আর কৃষ্ণ তথা গোপাল একই ভাবে ধরে রইলেন গোবর্ধন পর্বতকে। না নড়লেন, না কিছু খেলেন ওই সাতদিন। শেষপর্যন্ত যখন ইন্দ্র থামলেন তখন বৃন্দাবনবাসীরা তাঁর জন্য ৫৬ ধরনের খাবার তৈরি করলেন। ভাবছেন কেন ছাপান্ন? কারণ কৃষ্ণ দিনে ৮ বার খেতেন, আর সাতদিন অভুক্ত ছিলেন। তাই ৮X৭, ৫৬ পদ।
হিন্দুদের কাছে এই দিনটিকে ভীষণই পুণ্যের। এদিন সকাল থেকেই ভক্তরা গোপালের জন্য নানান ধরনের ভোগ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই ৫৬ ভোগে দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, মিষ্টি, পানীয়, নোনতা, ইত্যাদি। সঙ্গে তাঁর পছন্দের মাখন, মিছরি, ননী, মোহনভোগ তো অবশ্যই থাকে। এছাড়া অনেকেই বাসন্তী পোলাও, খিচুড়ি, লুচি, সুজি, পায়েস দিয়ে থাকেন। বাড়ির খুদে সদস্যের জন্মদিনে সুন্দর করে আয়োজন তো করতেই হবে। তাই দেশ জুড়ে ধুমধাম করে পালিত হয় গোপাল জন্মদিন, জন্মাষ্টমী।