Singles' Day 2022: সবই যেন 'যুগলদের' জন্য। দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল হপিং থেকে শুরু করে ২৫ ডিসেম্বরের পার্কস্ট্রিট। দুরন্ত প্রেমের উড়ন্ত হৃদয়ের কম্পন ছাড়া কোনও উত্সবেরই আসল আমেজ বুঝতে পারবেন না। পাশের মানুষটি ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছবিগুলিও কেমন যেন ম্যাড়ম্যাড়ে। একা। সত্যি বলতে, শুধু ঘুরতে যাওয়া বা ছবি তোলাই নয়। মাঝে মাঝে মনের কথাগুলি বলার জন্যও কাউকে লাগে(যদিও জেন-জি প্রথম দু'টিতেই বেশি মনযোগী)।
সিঙ্গলত্বের এই চরম অভিশাপে ডুবে থাকা মানুষ তখন খড়কুটো আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা চালান। পরীক্ষার নম্বর এখন ব্যাকফুটে। মাথা নত করে পড়ুয়ার আর্জি, 'হে ঠাকুর, এবার তো সরস্বতী পুজোয় কাউকে জুটিয়ে দাও। আর কতদিন একা একা?'
মানুষের মন আসলে পাখির মতো। খাঁচার দানাপানির লোভে প্রবেশ করলেই বন্দী! সেই বাঁধন ছেড়ে বের হওয়ার সাধ্যি কার। তাই প্রেম করুন ভেবেচিন্তে। একবার মিঙ্গেল হলেই সিঙ্গল লাইফের সমস্ত আনন্দ জীবন থেকে হাওয়া হয়ে যাবে। সম্পর্কেরও একটি আলাদা আনন্দ আছে। কিন্তু একা থাকার আনন্দটা?
আশেপাশে দেখুন। অনেকেই কিন্তু এখন স্বেচ্ছায় সিঙ্গল। সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, মিলেনিয়ালরা তো ছিলেনই। জেনারেশন জেডেরও অনেকেই সম্পর্কে জড়ানোর বিষয়ে সেভাবে আগ্রহী নন। বরং নিজেরাই নিজেদের প্রেমে পড়েন তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়ার #selflove ।
এহেন সদাসিঙ্গল মানুষের জন্যই তাই একটি বিশেষ দিন 'সিঙ্গলস ডে'। ১১ নভেম্বর সেই দিন। এমন একটি দিন, যেখানে একা থাকার আনন্দকেই উদযাপন করা হয়। টিন্ডার, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও যে আপনি একা, সেটা কিছুটা হলেও আপনার সাফল্য বলা যেতেই পারেই। সেই সাফল্য উদযাপন করতেই এই বিশেষ দিন।
কিন্তু একা থাকা নিয়ে এত আনন্দ করারই বা কী আছে?
এইচটি লাইফস্টাইল-কে দেওয়া সাক্ষাত্কারে মনোবিজ্ঞানী মহিমা সাহি বলেন, 'একাকীত্ব যে খুব দারুণ, সেটা কিন্তু কেউ কখনও বলবে না। কিন্তু বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, একাকীত্বও মানুষের 'মানসিক স্বাস্থ্যের' জন্য উপকারি। মানুষ ক্রমেই সেটা বুঝছে। আর সেই কারণেই এখন ভারতে ৫০%-এরও বেশি মানুষ অবিবাহিত থাকাটাই বেশি ভাল বলে মনে করছেন। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত যে, প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ ব্যক্তিদের তুলনায় অবিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যেই 'স্বয়ংসম্পূর্ণতার' অনুভূতি অনেকটা বেশি পরিমাণে থাকে।'
অর্থাত্, আপনার খুশির ঠিকাদার আপনি নিজেই। আপনার কাজ, খুশি, আনন্দ, সিদ্ধান্ত অন্য আর কোনও মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে নেই। শুধু তাই নয়। অন্য কাউকে খুশি করা, সামাজিক মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হওয়া মতো বিষয়েও ভাবনার কোনও প্রয়োজন নেই।
মনোবিদের মতে, যাঁরা একা থাকেন তাঁদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিও একেবারে স্বতন্ত্র হয়। তাতে আর কারও প্রভাব, ভাবনা মিশে যায় না। তাছাড়া প্রেম-বিয়ের সম্পর্কে অবিশ্বাস, 'স্পেস'-এর অভাব, সঙ্গীর জন্য নিজের ইচ্ছা ব্যাকফুটে পাঠান অনেকেই। একা থাকলে কিন্তু সেই মাথা ব্যাথা নেই।
সেসব তো না হয় বোঝাই গেল। কিন্তু এই বিশেষ দিনটি আপনি(এতদূর পড়েছেন যখন সিঙ্গলই হবেন) কীভাবে উদযাপন করবেন?
১. হবিতে সময় দিন: আপনার কি ছবি আঁকতে ভাল লাগে? অনেকদিন ধরে একটি ভাল ছবি আঁকবেন ভাবছেন অথচ তা করা হচ্ছে না? শুরু করে ফেলুন। অথবা ধরুন, আপনার ছোটবেলায় গিয়ার দেওয়া মাউন্টেন বাইকের শখ ছিল। কিন্তু সেই সময়ে বাবা সাধারণ 'বাংলা' সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। এমনটা হয়ে থাকলে আর দেরি করবেন না। একটি ভাল সাইকেল কিনে নিজেকে উপহার দিন।
মোদ্দা কথা, আপনার হবি, শখ, ভাল লাগাকে একটু জায়গা দিন। কারণ সিঙ্গল হিসাবে আপনাকে নিজেকেই নিজে ভালবাসতে হবে।
২. ত্বকের যত্ন নিন: নিজের স্কিন কেয়ার রুটিনে নজর দিতে পারেন। একটি ভাল সানস্ক্রিন, ফেসওয়াশ, সিরাম কিনুন। শীত আসছে, ভাল ময়েশ্চরাইজার কিনতে পারেন। সিঙ্গল অ্যান্ড গ্লোয়িং থাকুন।
৩. ভাল খাওয়াদাওয়া করুন: পছন্দের টপিং দেওয়া পিত্জা বা ভাল বিরিয়ানি অর্ডার করুন। প্রয়োজনে কোনও আপনারই মতো সিঙ্গল বন্ধুর সঙ্গে রেস্তোরাঁয় ঢুঁ মেরে আসুন।
৪. শীতের পোশাক: ঠান্ডা পড়েই গেল। শীতের জন্য ভাল হুডি, ডেনিমের জ্যাকেট কিনতে পারেন। আবার বিয়েবাড়ি থাকলে ভাল পাঞ্জাবি, স্যুট কিনতে পারেন।
সর্বোপরি আপনি যে সিঙ্গল, সেটার আনন্দকে উদযাপন করুন। বলা তো যায় না, কোনদিন প্রেমের তুফানে আপনার এই সিঙ্গলত্বের পাল ফুটিফাটা হয়ে যেতে পারে। ততদিন 'এনজয়' করে নিন।