আগামীকাল ভোর ভোর কোনও কাজ আছে। সঠিক সময়ে ঘুম না ভাঙলে পন্ড হতে পারে সবটাই। এসব ক্ষেত্রে অ্যালার্মের মতো কার্যকরী জিনিস খুঁজে পাওয়া ভার। অ্যালার্ম সঠিক সময়ে ঘুম ভাঙিয়ে রুটিনে গন্ডগোল হতে দেয় না। তবে, অ্যালার্মের যে শুধুই গুণ রয়েছে তেমনটা নয়। সাম্প্রতিককালের বেশকিছু সমীক্ষায় উঠে এসেছে অ্যালার্মের কিছু গুরুতর সমস্যার কথা। ফোনে বা ঘড়িতে অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙছে প্রতিদিন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর থেকেই তৈরি হচ্ছে বেশকিছু স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা। অ্যালার্মের শব্দে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যাওয়ার ফলে শরীরের সাধারণ ছন্দে বাধা পড়ে। সেই থেকে হৃদরোগ বা মস্তিস্ক ও কানের সমস্যাও হতে পারে।
সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় অ্যালার্ম ও স্বাস্থ্যের সম্পর্কের দিকটি উঠে এসেছে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙার ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা থাকে। এর কারণ হঠাৎ শব্দে ঘুম ভাঙলে শরীরে আপৎকালীন হরমোন আড্রিনালিনের ক্ষরণ বাড়ে। অ্যাড্রিনালিনের এই ক্ষরণবৃদ্ধির ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এতেই হৃদযন্ত্রে চাপ তৈরি হয়।
অ্যালার্মের শব্দ কানে এলে তা মাথায় স্নায়ুর মাধ্যমে বার্তা বহন করে নিয়ে যায়। এরপরেই আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। দীর্ঘসময় ধরে এমন হঠাৎ শব্দ শুনলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমতে থাকে।
হঠাৎ করে অ্যালার্মের জন্য ঘুম ভেঙে গেলে হজমের সাধারণ ছন্দ ব্যাহত হয়। ফলে হজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এর থেকে বাড়তে অ্যাসিডিটি সংক্রান্ত সমস্যা।
অ্যালার্ম ঘুমের স্বাভাবিক চাহিদা মেটার আগেই ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ঘুমের স্বাভাবিক চাহিদা পূরণ করা জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে অ্যালার্মের জন্য হঠৎ ঘুম ভাঙলে সে চাহিদা পূরণ নাও হতে পারে। ফলে ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা বাড়তে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে একই বাঁধাধরা রুটিনে ঘুম থেকে উঠতে হলে একঘেয়েমি তৈরি হয়। এর থেকে জন্ম নিতে পারে অবসাদ।
আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গভীর ঘুমের মধ্যে থেকে হঠাৎ শব্দ শুনে জেগে ওঠার কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি ও গণনাশক্তি কিছু পরিমাণে ক্ষতিগ্ৰস্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, অ্যালার্ম সময়মাফিক উপকার করলেও শরীরের স্বাভাবিক বিশ্রামটাও দরকার। তাই দিনে অন্তত ৮ ঘন্টা অ্যালার্ম ছাড়াই ঘুমোনো চেষ্টা করা উচিত। দৈনিক ঘুমের চাহিদা সম্পূর্ণ হলে ঘুম নিজে থেকেই ভেঙে যাবে। ফলে অ্যালার্মেরও প্রয়োজন হবে না।