আপনি যদি ধূমপান করে থাকেন এবং নিজের অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রণালী সম্পর্কে চিন্তিত হন, তা হলে এখনই ধূমপান ছাড়ুন। একটি সিগারেটের ধোঁয়া আপনাকে লক্ষাধিক ফ্রি র্যাডিক্যালের সংস্পর্শে নিয়ে আসতে পারে। এমনকি এই অভ্যাসের ফলে ফুসফুস ও রক্তের ক্যান্সার, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোকের সম্ভাবনা থেকেই যায়।
ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিসিস (COPD) আবার স্মোকারর্স ডিসিস নামে পরিচিত। বর্তমানে ভারতে COPD আক্রান্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে চিন্তার বিষয় হল, অ্যাক্টিভ স্মোকার নন, এমন ব্যক্তিও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
ফর্টিস হাসপাতালের তরফে কনসালটেন্ট পাল্মোনলজিস্ট ও স্লিপ মেডিসিন এক্সপার্ট ড: অংশু পাঞ্জাবি COPD-র সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। পাশাপাশি প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কেও জানিয়েছেন তিনি।
COPD কী?
এটি একটি সাধারণ, দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা যার ফলে ব্যক্তির শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তবে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। এম্ফিসিমা ও ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের ক্ষেত্রেও COPD নামটি ব্যবহৃত হয়।
এর গুরুতর পরিণতির ওপর COPD-র স্টেজ নির্ভর করে। গোল্ড স্টেজিংয়ের মাধ্যমে COPD-র স্টেজের গ্রেডিং করা হয়। এর বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে জেনে নিন এখানে—
প্রথম স্টেজ: প্রাথমিক
কোনও ব্যক্তির COPD যদি প্রাথমিক স্টেজে থাকে, তা হলে তাঁরা হয়তো এই রোগের টেরও পাবেন না। এই FEV-1 ৮০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে। এর সাধারণ কিছু লক্ষণ হল কাশি, মিউকাস উৎপন্ন করা। এর ফলে সাধারণ সর্দি-কাশির সঙ্গে COPD-কে গুলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। ব্রঙ্কোডিলেটার ওষুধের সাহায্যে এর চিকিৎসা করা হয়। এটি নেবুলাইজারের সাহায্যে গ্রহণ করা হয়। যা ফুসফুসের শ্বাসনালীকে উন্মুক্ত করে।
দ্বিতীয় স্টেজ: মাঝারি
FEV-1-এর স্তর ৫০-৭৯ শতাংশ হলে এটি দ্বিতীয় স্টেজ হিসেবে গণ্য করা হবে। এ সময় অধিক কাশি, মিউকাস উৎপত্তি বৃদ্ধি পাওয়া, হাঁটাচলা বা ওয়ার্কআউটের সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সমস্যা বাড়লে চিকিৎসকরা স্টেরয়েড ও অক্সিজেন গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারেন।
তৃতীয় স্টেজ: গুরুতর
এই স্টেজে FEV-1-এর স্তর ৩০-৫০ শতাংশে নেমে আসে। এসময় বার বার সর্দি লাগে, বুক আরষ্ঠ হয়ে পড়ে, গোড়ালি ফুলে যায়। পাশাপাশি আগের সাধারণ লক্ষণগুলি তো থাকেই।
চতুর্থ স্টেজ: অধিক গুরুতর
এ সময় ফুসফুস বা হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে পড়তে পারে, অক্সিজেনের স্তর কমে যায়। FEV-1-এর স্তর নেমে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশে। শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য সমস্যা এ সময় প্রাণঘাতী হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অস্ত্রোপচার, ফুসফুস প্রতিস্থাপন, ফুসফুসের ঘনত্ব কমানো, বুলেক্টমি ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা চালানো হয়।
COPD প্রতিরোধের উপায়
- ধূমপান ত্যাগ করুন।
- ক্ষতি আটকাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
- ধুলোকণা ও ধোঁয়া প্রতিরোধের জন্য মাস্ক পরুন।
- ফুসফুসের কার্যকরিতা বৃদ্ধির জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
- এক্সারসাইজ করুন।
- নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
- সুষম আহার গ্রহণ করুন ও বেশি করে জল খান।
- নিজের চারপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।