তেলাঙ্গানার একটি ছোট গ্রামে বড় হয়েছেন, মেয়ের পড়াশোনার উপর আগাগোড়াই জোর দিয়েছেন বাবা-মা। মেয়েকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে উৎসাহিত করেছেন। মেয়েও বাবা মায়ের পরামর্শ মেনে, বিআইটিএস পিলানি থেকে ফার্মেসিতে গ্রাজুয়েশন করেন। আইআইএম কলকাতা থেকে এমবিএ পাস করেন। কর্মজীবন শুরু করেন জনলক্ষ্মী স্মল ফাইন্যান্স ব্যাঙ্কে। কিন্তু কোথাও যেন শান্তি পাচ্ছিলেন না। তাই ছেড়ে দিয়েছিলেন চাকরিটা। সবজি বা ভেজি পাউডারের ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিলেন কীর্তি প্রিয়া।
ফাস্ট ফুড, দ্রুত তৈরিও হয়ে যায়, খেতেও সুস্বাদু, তাই ফাস্ট ফুডই আজ সকলের প্রথম পছন্দ। অথচ এই তাৎক্ষণিক সমাধান যে দীর্ঘস্থায়ী রোগ ডেকে আনছে, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের মতো আরও স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করছে, তা মাথায় থাকে না। আর এই চটজলদি অস্বাস্থ্যকর জীবনে স্বাস্থ্যকর জীবনধারার প্রচার করার জন্যই কাজ করছেন আইআইএম স্নাতক কীর্তি প্রিয়া। প্রায় ১ কোটি টাকার ব্যবসাও দাঁড় করিয়েছেন নিজ হাতেই।
কোহ ফুডস, তেলাঙ্গানার এই হেলথ ফুড ব্র্যান্ডটি প্রতিষ্ঠা করেছেন কীর্তি প্রিয়া নিজেই। স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রচার করে এই ব্র্যান্ড। কোনও প্রিজারভেটিভ ছাড়াই ১০০ শতাংশ উদ্ভিদ-ভিত্তিক পাউডার বিক্রি করা হয়, যা জলে মিশিয়ে খাওয়াও সহজ।
কীভাবে আজ নিজের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন কীর্তি
কীর্তি যখন কর্পোরেট চাকরিতে ব্যস্ত থাকতেন, খাওয়ার সময় পেতেন না, তাঁর মা তাঁকে পুষ্টির জন্য ডিহাইড্রেটেড ভেজি পাউডার খাওয়ার জন্য দিতেন। স্টার্টআপপিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কীর্তি জানিয়েছেন যে 'আমি এত ব্যস্ত থাকতাম যে মাঝে মাঝে আমি খাবার খাওয়াই হত না। আমার মা তখন আমাকে এই বাড়িতে তৈরি ডিহাইড্রেটেড ভেজি পাউডার পাঠাতে শুরু করেন। আমি সেগুলো আমার পানীয়, তরকারি এবং ভাতে মিশিয়ে খেতে পারতাম। এগুলো আমার জীবনধারাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। তখনই আমার মনে হয়েছিল, আমার মতো আরও ব্যস্ত মানুষের কাছে আমি এই খাবার পৌঁছে দিলে কেমন হয়। সেখান থেকেও কোহ ফুডসের যাত্রা শুরু।
আরও পড়ুন: (Food problem of Namibia: খাবার নেই, হাতি, জলহস্তী মেরে জনগণের মধ্যে মাংস বিলি করবে নামিবিয়া)
এরপর, ২০১৮ সালে, কীর্তি কোহ ফুডস শুরু করেছিলেন। তখন, এই দ্রুত স্বাস্থ্যকর খাবারের পরিকল্পনা বাজারে সম্পূর্ণ নতুন ছিল। তাই কীর্তি বিষয়টি বাজারে ফিট করার জন্য অনেক গবেষণায় করেছেন। ২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত, কোহ ফুডস-কে ট্রায়াল পিরিয়ডে রাখা হয়েছিল। এরপর ২০২০ সালে করোনার সময়, তাঁদের পণ্যের স্থানীয় চাহিদা বেড়ে যায়, যার ফলে কোহ ফুডস-এর ব্যবসা বাড়ানোর কথাও ভাবতে পেরেছিলেন তিনি। কীর্তির কথায়, ২০২১ সালে, তিনি বিজনেসের জন্য স্ট্যান্ডআপ ইন্ডিয়া থেকে লোন নিয়েছিলেন।
কোহ ফুডস আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২২ সালে চালু হয়েছিল
ব্যবসার জন্য সেই সময়, কীর্তি নিজের কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাবা-মা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এই নতুন ব্যবসা আদৌ মুনাফা দেবে কিনা নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু, এরপর কীর্তির প্রচেষ্টায় কোহ ফুডস ধীরে ধীরে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল। তখন বাবা মা আবার তাঁকে সমর্থন করতে শুরু করেন। তবে, কীর্তির জন্য সেই সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল একটি উৎপাদন কারখানা স্থাপন করা। ২৬ বছর বয়সে, কীরথি কৃষিকাজ সম্পর্কে জানতে গ্রামীণ তেলাঙ্গানায় পৌঁছেছিলেন। অবশেষে, ৬,০০০ বর্গফুট জায়গা সহ একটি এল একর প্ল্যান্ট খোলেন কীর্তি। শুরু করেন কোহ ফুডস উৎপাদন।
সাফল্যের শীর্ষে এখন কোহ ফুডস
আজ, কোহ ফুডস, প্রায় ২০ জন কৃষকের সঙ্গে কাজ করে। পালং শাক, বিটরুট, গাজর এবং কারি পাতার মতো সবজি চাষ করা হয় অতিরিক্ত জল বা কীটনাশক ব্যবহার না করেই। তারপর কোম্পানি ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রায় সবজিগুলো শুকিয়ে, তা গুঁড়ো করে বিক্রি করে। কোহ ফুডস পালং শাক পাউডার, বিটরুট পাউডার, গাজর পাউডার, মরিঙ্গা পাউডার, ডিহাইড্রেটেড টমেটো এবং ডিহাইড্রেটেড সবুজ মরিচের মতো পণ্য অফার করে। কীর্তির কারখানায় ১৫ জন গ্রামীণ মহিলাও কাজ করেন। ২০২৪ অর্থবছরে, কোম্পানি ২০ লক্ষ টাকা আয় করেছে। ২০২৫ অর্থবছরের জন্য, তারা ইতিমধ্যে ৪০ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছে এবং ১ কোটি উপার্জনের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে
প্রসঙ্গত, কোহ ফুডস এখন ভারতে তার ব্যবসা আরও প্রসারিত করছে। কোম্পানি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তাদের পণ্য বিক্রি করতে শুরু করেছে।