তা সে কোনও বিষয় যতই বেআইনি হোক না কেন, মানুষের মন থেকে তা সহজে যাওয়ার নয়। সে কথাই আবার প্রমাণ করে একটি পাঠ্যপুস্তক। সেখানে দাবি করা হয়েছে, পণপ্রথারও নাকি অনেক গুণ আছে। তাতে পণের লোভ দেখিয়ে ভালো দেখতে বা খারাপ দেখতে ছেলেদের সঙ্গে ‘খারাপ দেখতে’ মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যায়। এই কাণ্ড নিয়ে রীতিমতো শোরগোল রাজনৈতিক মহল।
সম্প্রতি শিবসেনা নেত্রী ও রাজ্যসভার সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদি টুইটারে ওই বইয়ের একটি পাতা শেয়ার করেছেন। অবিলম্বে এই ধরনের বই বাতিল করার জন্য প্রিয়াঙ্কা আবেদন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে।
কী লেখা আছে বইয়ে?
১৯৬১ সালে পণপ্রথা রোধে আইন আনা হয়েছে। তার পর থেকে পণ দেওয়া নেওয়া যেখানে সম্পূর্ণ বেআইনি একটি কাজ, সেখানে নার্সদের জন্য লিখিত সমাজবিদ্যার একটি বইয়ে লেখা হয়েছে পণপ্রথার কী কী গুণ তা নিয়ে। টি কে ইন্দ্রাণী নামে কারও লেখা বইটি। বইটির মলাটে দাবি করা হয়েছে, ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিলের সিলেবাস অনুযায়ীই নাকি বইটি লিখিত!
এবার দেখে নেওয়া যাক কী কী বলা হয়েছে বইটিতে।
সেখানে বলা হয়েছে, নতুন সংসারকে সাজিয়ে তুলতে পণপ্রথা অত্যন্ত জরুরি। বালিশ, বিছানা, পাখা, টিভি, রেফ্রিজারেটর, বাসনকোসনের বা গাড়ি দিয়ে নতুন সংসারকে সাজিয়ে তোলা হয় পণের মাধ্য়মে।
এর পরে বলা হয়েছে, পণের আর এক গুণ— এর মাধ্যমে পৈতৃক সম্পত্তির একাংশ পেয়ে যান মেয়েরা।
যা পড়ে অনেকেই অবাক হয়েছে, তা হল, এখানেই দাবি করা হয়েছে পণপ্রথা নাকি নারীশিক্ষার প্রসারে সাহায্য করে। কারণ মেয়েরা বেশি শিক্ষিত হলে কম পণ দিতে হয়। তাই পরিবারের উপর থেকে পণের বোঝা কমাতে মেয়েরা বেশি বেশি করে পড়াশোনা করেন।
তবে সবচেয়ে বিতর্কিত যুক্তিটি দেওয়া হয়েছে একেবারে শেষে। বলা হয়েছে, ‘খারাপ দেখতে’ মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যায় পণের কারণে। কুৎসিত কিংবা সুদর্শন ছেলেদের সঙ্গে তাদের বিয়ে দেওয়া সম্ভব পণের লোভ দেখিয়ে।
অবিলম্বে এই বই বাতিল করার দাবি উঠেছে নানা মহল থেকে। নেটিজেনদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদ মহলও বলছে এমন বই বন্ধ করতে।
তারই মাঝে এই বইটির দায় নিতে চাইছে না ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিল। তাদের মনোনীত সিলেবাসে রয়েছে বইটি। সোমবার কাউন্সিলের তরফে নোটিশ জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নার্সিং কাউন্সিল কোনও লেখব বা প্রকাশনাকে সমর্থন করে না। কোনও লেখককে নার্সিং কাউন্সিলের নাম ব্যবহার করার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। বইয়ের বক্তব্য কাউন্সিল সমর্থন করে না বলে জানানো হয়েছে।