আয়কর আধিকারিক বিমলেশের মৃত্যুর পরে, তাঁর পরিবার ১৭ মাস ধরে তার দেহকে বাড়িতে রেখে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। পরিবারের সদস্যরা বিমলেশের দেহের সেবাও করে গিয়েছেন এই সময় ধরে।
মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য কোনও রাসায়নিক তাঁরা ব্যবহার করেননি। কারণ তাঁদের দাবি, বিমলেশ বেঁচে ছিলেন। অথচ বিমলেশ ১৭ মাস আগে মারা গিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে তাঁ ডেথ সার্টিফিকেট পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল।
তাহলে কীভাবে বিমলেশের শরীর ১৭ মাস কোনও গন্ধ বা ক্ষয় ছাড়াই নিরাপদে ছিল?কীভাবে একটি পরিবার ১৭ মাস ধরে একটি মৃতদেহ নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করেছিল এবং এই সত্যটি প্রতিবেশীরাও জানতে পারেননি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমলেশের শরীর ‘মমিফাইড বডি’ হয়ে থাকতে পারে। এতে, শরীর বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক আবরণ দ্বারা সুরক্ষিত থাকে।
চিকিৎসক কীর্তিবর্ধন সিং বলেছেন, পরিবারের সদস্যরা কোনও রাসায়নিক প্রয়োগ করার কথা অস্বীকার করছেন। এখন এটি তদন্তসাপেক্ষ বিষয়। টিস্যুর ক্ষতি না করে অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি সফলভাবে পরীক্ষা করে মৃত্যুর কারণ জানা যেতে পারে। এটাও সম্ভব যে পরিবারের সদস্যদের কথা আংশিক সত্য। মৃত্য়ুর পরেও হৃদস্পন্দন কিছু সময়ের জন্য থাকতে পারে। এছাড়া দীর্ঘ কোমার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতর সকালে বিমলেশের বাড়িতে পৌঁছেছিল। কিন্তু পরিবার তাদের ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। ডেপুটি সিএমও ও ডিসিপি তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর দুপুর ২টোর দিকে মৃতদেহটি উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
২০২১ সালে বিমলেশকে বিরহানা রোডে অবস্থিত মতি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।মৃত্যুর পর তাঁর ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এতে লেখা ছিল যে ৩৫ বছর বয়সি বিমলেশকে ১৯ এপ্রিল শ্বাসকষ্টের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বিমলেশ ২২ এপ্রিল ভোর ৪টেয় মারা যান।
বিমলেশের ভাই কী জানান?
২০২১ সালের এপ্রিলে, হাসপাতাল বিমলেশকে মৃত ঘোষণা করে। ডেথ সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়। এরপর বিমলেশ কীভাবে জীবিত হলেন? কেন তার মৃতদেহ ১৭ মাস ধরে রেখেছিল পরিবার? তাকে কীভাবে রাখা হয়েছিল?
বিমলেশের ভাই দীনেশ জানান, ‘২০২১ সালের এপ্রিলে মতি হাসপাতালে ভাইকে আড়াই লাখের ইনজেকশন দেওয়া হয়। তার পরেও বলা হয়, বিমলেশ বাঁচেনি। ভোর চারটেয় ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। আমরা মৃতদেহের জন্য অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত নিয়ে পাইনি।একটি মারুতি অল্টো গাড়িতে করে মৃতদেহ বাড়িতে আনা হয়। শেষকৃত্যের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এরই মধ্যে বাড়ির কেউ বলেন, হার্টবিট চলছে। যখন অক্সিমিটার প্রয়োগ করা হয়েছিল, তখন অক্সিজেনের মাত্রাও ঠিক ছিল। এটা দেখে আমরা বিমলেশকে বাড়িতে রাখি।
দীনেশের কথায়, ‘এলাকার এক চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, বিমলেশ বেঁচে আছে। কোমায় চলে গিয়েছে। তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। তারপর থেকে আমরা একটানা ওর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার আনতে থাকি। বিমলেশকে বাড়িতে রাখার কোনও ইচ্ছে ছিল না।আমরা চিকিৎসার জন্য অনেক জায়গায় গিয়েছিলাম। কিন্তু সবাই RTPCR রিপোর্ট চাইত। কেউ হাসপাতালে ভর্তি নিতে প্রস্তুত ছিল না।’
এর পরে বাড়িতে রেখেই নানাভাবে বিমলেশের ‘মৃতদেহ’র চিকিৎসা চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তাঁর শরীর কালো হয়ে যেতে থাকে। ত্বকও নষ্ট হয়ে যায়। তখন বাড়ির লোকও বুঝতে পারেন, বিমলেশ হয়তো আর বেঁচে নেই।
স্থানীয়রা এখন বলছেন, একই জীবনে দু’বার মৃত্যু হল বিমলেশের। গত বছরের ২২ এপ্রিল একবার। গত শুক্রবার আর একবার। কারণ দু’বার মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া হল তাঁর জন্য।