রণবীর ভট্টাচার্য
কলকাতার চিনা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য বেশ প্রাচীন। দাঁতের ডাক্তার থেকে সুস্বাদু খাওয়া বা বহু জনপ্রিয় চায়নাটাউন, কলকাতার চিনা সম্পর্ক অনেক ইতিহাসের সঙ্গী। গত রবিবার সায়েন্স সিটির নিকটবর্তী কলকাতা বোটিং এবং হোটেল রিসোর্টে জমকালো, ঝাঁ চকচকে পরিবেশে আয়োজিত হল ড্রাগন বোট উৎসব। কলকাতার পুরনো চিনাপাড়ার সমস্ত মানুষ একত্রিত হয়েছিলেন এই আনন্দ সমাগমে।
অনুষ্ঠানের সম্বর্ধনা ও বৃত্তি দেওয়া হয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শীর্ষ ভারতীয় চিনাদের। এরপর চিনা সংস্কৃতির অপরিহার্য সিংহ নাচ ও মার্শাল আর্টের প্রদর্শনী স্থানীয়দের মন জিতে নেয় অচিরেই। ড্রাগন বোট রেস হওয়ার কথা থাকলেও সুরক্ষার কারণে শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়। এই নিয়ে চিনা যুবক যুবতীদের মন খারাপ হলেও খাঁটি চাইনিজ খাবার মন ভালো করে দেয় সবার। বাংলা, চিনা, হিন্দি, ইংরেজি - সব ভাষার মেলবন্ধনে ছোট্ট কলকাতা যেন উঠে আসে রবিবারের সুন্দর বিকেলে। রবীন্দ্রসংগীত আর চিনা গান যেন এক সূত্রে বেঁধে দেয় সবাইকে।

এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও যুক্ত ছিলেন কলকাতার চিনা দূতাবাসের কর্মীরা। তারাও এই আনন্দযজ্ঞে সামিল হয়েছিলেন। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গের মাঝে তাঁদের ঝলমলে উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে এক আলাদা মাত্রা এনে দেয়। এই প্রসঙ্গে চিনা কনসাল জেনারেল তথা অভিজ্ঞ রাষ্ট্রদূত ঝা লিউ দুই দেশের সৌহার্দের দিক তুলে ধরে শান্তি ও সহাবস্থানের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা যখন সবাই মিলিত হয়ে কথা বলছি তখন বিশ্বে অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে যা আগের চেয়ে আরও কঠিন। আমাদের বিশ্ব সম্প্রদায় আরও গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সব দেশ জাতিকেই এখন এগিয়ে আসতে হবে একসাথে, অভিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে এবং যৌথভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার এটাই সময়। এর জন্য আমাদের কেবল অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত শক্তি একত্রিত করলেই চলবে না বরং সস্কৃতি এবং সভ্যতার মেলবন্ধনের যে শক্তি তাকেও কাজে লাগাতে হবে। চিন ও ভারত,দুটি সর্বাধিক জনবহুল প্রাচীন সভ্যতা হিসাবে, আমাদেরই একাজে নেতৃত্ব দিতে হবে।’

বলাই বাহুল্য, ভারত ও চিনের সীমান্ত নিয়ে বাক বিতন্ডা শেষ কয়েক বছরে ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করেছে, স্বল্প স্তরে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই দেশের সেনা। কিন্তু দুই দেশেরই যথেষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রেক্ষাপটে। তাই সামনের দিনে, দুই ক্ষমতাধর দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ধরনের অনুষ্ঠান অনেক অক্সিজেন জোগাবে। আর কলকাতার মানুষ, সে বাঙালি হন বা চিনা, শান্তি ও সৌহার্দের জন্য সবসময়েই এগিয়ে আসবে।