সদ্য উদযাপিত হয়ে গেল বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে - সরস্বতী পুজো। শীত প্রায় শেষের দিকে, বাতাসে এখন বসন্তের আমেজ। এদিকে গোটা ফেব্রুয়ারিটাই প্রেমের মাস। খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি উদযাপন করা দিবসগুলির একটি।
এইদিন সাধারণত প্রেমিক-প্রেমিকারা পরস্পরকে চকলেট বা ফুল ইত্যাদি উপহার দিয়ে থাকে এবং একসঙ্গে বিশেষ সময় কাটায়। কিন্তু জানেন কি ১৪ ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে কেন বলা হয়? আসুন জেনে নিই।
ভ্যালেনটাইন্স ডে নামটি শুনতে মধুর হলেও এই নামের পিছনে লুকিয়ে আছে এক ভয়াবহ ইতিহাস।
পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকে পোপ গেলাসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন'স ডে হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
বেশ কিছু ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন যে এর মূলে রয়েছে, প্রাচীন রোমান উৎসব লুপারকালিয়া। প্রতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে বসন্তের আগমন এবং উর্বরতা উদযাপন করা হত। এতে পশু বলিদান হত এছাড়াও একটি অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত ছিল যেখানে পুরুষ ও মহিলাদের একটি পাত্র থেকে নাম বেছে নিয়ে জোড়া লাগানো হত। সব মিলিয়ে চুটিয়ে আনন্দ করতেন মানুষ।
খ্রিস্টধর্ম ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে পৌত্তলিক রীতিনীতিগুলি জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দীর শেষের দিকে, পোপ গেলাসিয়াস প্রথম এই উদযাপনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তখন এর পরিবর্তে এর নাম দেওয়া হয় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে, যদিও এর কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
অন্য একটি গল্পে ছিল, রোমান পুরোহিত ও চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন পৌত্তলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তার শাস্তি স্বরূপ সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস কর্তৃক তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল যদিও তিনি অলৌকিকভাবে তার কারারক্ষকের কন্যাকে সুস্থ করেছিলেন কিন্তু কিংবদন্তি অনুসারে, তিনি তখন সম্রাটের কন্যার প্রেমে পড়েন এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লেখেন। চিঠির শেষে লেখা ছিল 'লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন'।
চিঠির এই অংশটিকে সম্বল করেই লোকমুখে এই দিনটি প্রেমিকের আত্মত্যাগের ট্র্যাজিক প্রেমকাহিনী হিসাবে প্রচলিত হয়। যদিও সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে রোম্যান্টিকতার ধারণাটির প্রথম সংযোজন করেছিলেন ১৪শ শতাব্দীর বিখ্যাত ইংরাজি কবি, জিওফ্রে চসার। চসারের 'দ্য পার্লামেন্ট অফ ফাউলস' কবিতায় বলা হয়েছে, পাখিরা ভালোবাসা দিবসে তাদের সঙ্গী বেছে নেয়। এই কবিতাটিকেই ভ্যালেন্টাইন্স ডে'র সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথমদিকের কবিতাগুলির মধ্যে একটি ধরা হয়।
প্রেম যে আসলে অচলায়তন ভাঙার বিদ্রোহ সে দৃষ্টি পূর্বেই দিয়ে গেছে রবীন্দ্রনাথের 'রক্তকরবী'। আমাদের রঞ্জনই যেন সেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। বাঙালি তাই স্বাভাবিকভাবেই মন থেকে আগলে নিয়েছে এই দিনটিকে।