পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্রাণী হওয়ায়, নীল তিমি অর্থাৎ (ব্লু ওয়েল) এর প্রাত্যহিক কয়েক টন খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে। জানা যাচ্ছে, শেষ কয়েক দিনে তারা বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিক জাত জিনিস খাওয়া শুরু করেছে। দূষণের ফলেই এই বিপুল পরিমাণ প্লাসটিক দেখা যাচ্ছে মহাসমুদ্রে।
এই মঙ্গলবার বিজ্ঞানীরা একটি হিসেব পেশ করেছেন যে ঠিক কত পরিমাণ প্লাসটিক এই তিমি মাছগুলি শেষ কয়েক বছরে খেয়েছেন। তিন ধরণের তিমি, ইংরেজিতে যাদের ব্লু, ফিন এবং হাম্পব্যাক বলে, ইউএসের প্যাসিফিক কোস্টে যাদের বাসা তারাই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে বলে বিজ্ঞানীদের আশংকা। এই প্লাস্টিক খাওয়ার ফলে বিবিধরকম শারীরিক সমস্যা দেখা যেতে প্রায় এই জলজ প্রাণীগুলির।
এই ধরণের তিমিকে মূলত ব্যালেন ওয়েল বলে। এরা সমুদ্রের ছোটো ছোটো প্রাণীকে ধরে খায়। যেমন ছোটো মাছ বা পোকার মতো প্রাণী। এদের মুখে একরকমের প্লেট দেখা যায়, যাকে বলে ব্যালেন প্লেট। এগুলো কেরাটিন দিয়ে তৈরি হয়। কেরাটিন হলো সেই দ্রব্য যা দিয়ে মানুষের নখ তৈরি।
সমীক্ষা বলছে, এই নীল তিমি দিনে কম করে হলেও ১০ মিলিয়ানের কাছাকাছি মাইক্রো প্লাস্টিক জাত দ্রব্য খায়। কখনো ৯৫ পাউন্ড অর্থাৎ ৪৩.৫ কেজি প্লাস্টিক-ও তারা খেয়ে ফেলে। ফিন তিমিরা দিনে ছয় মিলিয়ানের কাছাকাছি মাইক্রো প্লাস্টিক অথবা ৫৭ পাউন্ড প্লাস্টিক গ্রহণ করেন। হ্যাম্পব্যাক তিমি সেই তুলনায় চার মিলিয়ান মাইক্রো প্লাস্টিক প্রাত্যহিক গ্রহণ করেন।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যারিন বায়োলজিস্ট ম্যাথিউ সাভোকা মনে করেন, 'আমেরিকার সমুদ্রের পশ্চিমী অংশগুলিতে দেখা যাবে ব্যালেন তিমি, মিলিয়ানের কাছাকাছি মাইক্রো প্লাস্টিক এবং মাইক্রো ফাইবার গ্রহণ করে।'
সাভোকা আরো বলেন, '৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় এই তিমি মাছগুলির অধিকাংশের শরীরে প্লাস্টিক যায় তাদের শিকারের মধ্য দিয়ে। যারা হয়ত আগে কোনো সময় প্লাস্টিক খেয়েছিল।'
গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, যে এই ব্যালেন তিমি আরো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে কারণ তাদের বসতি এবং এই দূষিত ক্ষেত্রগুলি ক্রমশ একে অপরের পিঠোপিঠি জায়গায় চলে আসছে। যার ফলে এই ধরণের তিমি মাছ অবলুপ্তির পথেও চলে যেতে পারে।
১২৬টি নীল তিমি, ৬৫টি হাম্পব্যাক তিমি এবং ২৯টি ফিন তিমিকে ধরে গবেষণা করেন বিজ্ঞানীরা। এদের পিঠে সাকশন কাপ লাগিয়ে তাতে ক্যামেরা, জিপিএস লোকেটার এবং মাইক্রোফোন যুক্ত করে করা হয় এই গবেষণা।
গতবছরে প্রকাশিত এই তিমি মাছ নিয়ে একটি গবেষণামূলক কাজ থেকে জানা যায় নীল তিমি প্রতিদিন ১০-২০ টনের ক্রিল খায়, ফিন অন্যদিকে ৬-১২ টনের ক্রিল খায় আর হাম্পব্যাক তিমি ৫-১০ টন অবধি ক্রিল খায়।
অতিসম্প্রতি আরেকটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, তিমি মাছ মূলত ১৬৫-৮২০ ফিট গভীর অবধি গিয়ে নিজের খাবার সংগ্রহ করে। এবং জলের এই স্তরেই সবথেকে বেশি মাইক্রো প্লাস্টিক জমা হয় বলে জানা যাচ্ছে।
শিরেল কাহানে জানান, 'এটা আমাদের গবেষণার বিষয় না হলেও, যে তথ্য সামনে আসছে তা আশংকাজনক। এই প্লাস্টিক সোজা ইন্টার্নাল অর্গানে ঢুকলে প্রাণীদের বাঁচানো কঠিন।'