পৃথিবীর সবচেয়ে একা মানুষ। কোনও দিন অন্য কোনও মানুষের সান্নিধ্যে আশার চেষ্টাও করেননি তিনি। গত ২৬ বছর ধরে সম্পূর্ণ একাই থেকেছেন জঙ্গলে। সভ্যতা কোনও দিন জানতে পারেনি তাঁর নাম। এহেন ‘একা’ মানুষের মৃত্য হল ২৪ অগস্ট।
কে এই ‘সবচেয়ে একা’ মানুষ?
এই মানুষটি ছিলেন ব্রাজিলের রনডোনিয়া প্রদেশের বাসিন্দা। ২৬ বছর আগে সন্ধান পাওয়া যায় তাঁর। যত দূর জানা যায়, যে জনজাতির সদস্য ছিলেন তিনি, সেই জনজাতির কোনও সদস্যই আর জীবিত ছিলেন না। এই ব্যক্তিকে তার পরে তথাকথিত সভ্য জগতের সংস্পর্শে আনা বা অন্য মানুষের সান্নিধ্যে আনার চেষ্টা করা হয় সরকারের তরফে। কিন্তু সেই উদ্যোগ কোনও দিনই সফল হয়নি। বরং সম্পূর্ণ একাই থাকতে চেয়েছিলেন তিনি।
কীভাবে বেঁচেছিলেন তিনি?
ব্রাজিলের গভীর অরণ্যে সুরঙ্গ খনন করেছিলেন তিনি। সেখানেই থাকতেন। সেই সুরঙ্গরই নানা অংশ ফাঁদ হিসাবে ব্যবহার করতেন। শিকার করেই মূলত খাবার সংগ্রহ করতেন তিনি। সুরঙ্গের মধ্যেই ছিল তাঁর ঘুমোনোর জায়গা, রান্নার জায়গা, এবং বাসনপত্র। সেখানেই এতগুলো বছর কাটিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
কীভাবে একা হয়ে গিয়েছিলেন পৃথিবীর ‘সবচেয়ে একা’ মানুষ?
যত দূর জানা যায়, সত্তর এবং আশির দশকে ব্রাজিলের এই অরণ্য অঞ্চলের কাছ দিয়ে বহু রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেই সময়ে শুরু হয় বিভিন্ন জনজাতির নিধনও। ব্রাজিলের অরণ্যে শতাধিক জনজাতির বাস। সেই জনজাতির অনেকগুলির সঙ্গেই তথাকথিত সভ্য জগতের কোনও সম্পর্ক নেই। বিশেষজ্ঞদের আন্দাজ এমনই কোনও জনজাতির সদস্য ছিলেন এই ব্যক্তি। সেই সময়ে তাঁর জনজাতির অন্য সদস্যরা মারা পড়েন। ফলে এই ব্যক্তি সম্পূর্ণ একা হয়ে যান। পরবর্তী সময়ে এই ব্যক্তিকে হত্যার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগে তা আটকানো যায়।
কীভাবে মৃত্য হল পৃথিবীর ‘সবচেয়ে একা’ মানুষের?
যত দূর জানা গিয়েছে, বয়সজনিত কারণেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তাঁকে তাঁর বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। সুরঙ্গের ভিতরেও কোনও ধস্তাধস্তি বা ভাঙচুরের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ফলে আন্দাজ করাই যায়, প্রাকৃতিক নিয়মেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এমনটাই জানা গিয়েছে সংবাদসংস্থা সূত্রে।
এই ব্যক্তির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই ব্রাজিল গভীর অরণ্যে বসবাসকারী আরও একটি জনজাতির শেষ হল। যে জনজাতির ইতিহাস বা সংস্কৃতির কথা আর কখনও জানা যাবে কি না, সন্দেহ রয়ে গেল।