প্রতি বছর ২ অক্টোবর, দেশে জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকী পালিত হয়। সমগ্র জাতি তাঁর জন্মদিনকে একটি জাতীয় উৎসব হিসাবে উদযাপন করে এবং তাঁর সত্য ও অহিংসার ধারণাকে স্মরণ করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানায়।
এই দিনটি সারা দেশে জাতীয় ছুটির দিন। স্বাধীনতা দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো এই দিনটিকেও জাতীয় উৎসবের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। গান্ধীজির চিন্তাধারার প্রতি সম্মান জানিয়ে জাতিসংঘ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। গান্ধী সত্য ও অহিংসার পথ অনুসরণ করে বহু বার ব্রিটিশদের নতজানু হতে বাধ্য করেছিলেন।
গান্ধীজি ১৯১৫ সাল থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। আর তার আগে বহু দশক ধরে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল। কিন্তু গান্ধীর প্রবেশ ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে অসাধারণ প্রাণশক্তি দেয়।
মাহাত্মা গান্ধী ১৮৬৯ সালে ২ অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর অহিংস নীতি, নৈতিক ভিত্তি, আশ্চর্যজনক নেতৃত্বের ক্ষমতা আরও বেশি মানুষকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল। তিনি সকল ধর্মকে সমানভাবে বিবেচনা করা, সকল ভাষাকে সম্মান করা, নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা প্রদান এবং দলিত ও অ-দলিতদের মধ্যে ব্যবধান দূর করার ওপর জোর দেন।
এবার জেনে নিন গান্ধীজির জীবন সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য, যা অনেকেরই জানা নেই।
১। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান্ধীজিকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দিয়েছিলেন।
২। মহাত্মা গান্ধীকে জাতির পিতা বলে সম্বোধন করা হয় তা সকলেরই জানা, কিন্তু খুব কম লোকই জানেন যে তাঁকে এই উপাধিটি কে দিয়েছেন? মহাত্মা গান্ধীকে সর্বপ্রথম ‘জাতির পিতা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। ৪ জুন ১৯৪৪ সালে, সিঙ্গাপুর রেডিয়ো থেকে একটি বার্তা সম্প্রচার করার সময়, মহাত্মা গান্ধীকে ‘জাতির পিতা’ বলা হয়।
৩। গান্ধীজি স্কুলে ইংরেজিতে ভালো ছাত্র ছিলেন, গণিতে গড়পড়তা এবং ভূগোলে দুর্বল।তাঁর হাতের লেখা খুব সুন্দর ছিল।
৪। বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন গান্ধীজির দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিলেন।আইনস্টাইন বলেছিলেন যে, মানুষ বিশ্বাস করবে না যে, এমন ব্যক্তি কখনও এই পৃথিবীতে এসেছেন।
৫। তিনি তাঁর ছবি তোলা মোটেও পছন্দ করতেন না।
৬। তাঁর ধুতিতে নকল দাঁত বাঁধা থাকত। শুধুমাত্র খাবার খাওয়ার সময় সেগুলি মুখে ভরে নিতেন তিনি।
৭। তিনি ৫ বার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। পুরস্কার পাওয়ার আগে ১৯৪৮ সালে তাঁকে হত্যা করা হয়।
৮। তাঁর শেষযাত্রায় প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ হেঁটেছেন আর পথে দাঁড়িয়ে ছিলেন ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ।
৯। মহাত্মা গান্ধী শ্রবণ কুমারের গল্প এবং হরিশচন্দ্রের নাটক দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।
১০। মৃত্যুর আগের মুহূর্তে তাঁর শেষ কথাটি ছিল ‘রাম’।
১১। ১৯৩০ সালে, তিনি আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিন দ্বারা ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ উপাধিতে ভূষিত হন।
১২। ১৯৩৪ সালে, ভাগলপুরের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য, তিনি তাঁর অটোগ্রাফের জন্য পাঁচ টাকা করে নিয়েছিলেন।
১৩। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত যখন স্বাধীনতা পায় তখন মহাত্মা গান্ধী এই উদযাপনে ছিলেন না। তিনি দিল্লি থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বাংলার নোয়াখালীতে ছিলেন। যেখানে তিনি হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসা বন্ধ করার জন্য অনশন করছিলেন।
১৪। স্বাধীনতার নির্দিষ্ট তারিখের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে গান্ধীজি দিল্লি ত্যাগ করেন। তিনি কাশ্মীরে চার দিন কাটান এবং তারপর ট্রেনে কলকাতা চলে যান, যেখানে বছরব্যাপী সংঘর্ষ তখনও শেষ হয়নি।
১৫। গান্ধীজি ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট ২৪ ঘণ্টা উপবাস করে দিনটি উদযাপন করেছিলেন। সে সময়ে দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু তার সঙ্গে দেশও ভাগ হয়। তার আগে কয়েক মাস ধরে দেশে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। এই অশান্ত পরিবেশে গান্ধীজি গভীরভাবে ব্যথিত হয়েছিলেন।
১৬। গ্রেট ব্রিটেন, যে দেশের বিরুদ্ধে তিনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন, তার মৃত্যুর ২১ বছর পরে তাঁর সম্মানে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল।
১৭। গান্ধীজি এবং বিখ্যাত লেখক লিও তলস্তয়ের মধ্যে চিঠির মাধ্যমে কথোপকথন হয়েছিল।
১৮। গান্ধীজি তাঁর জীবনে ১২টি দেশের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯। গান্ধীজি ফুটবলের বড় ভক্ত ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকার সময় তিনি প্রিটোরিয়া এবং জোহানেসবার্গে দু’টি ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন।
২০। গান্ধীজি মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন।