ঠিক দুই বছর আগের কথা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ২২ মার্চ সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যনন্ত 'জনতা কার্ফু' বলবৎ হবে। কোনও ভারতীয় তাঁর বাড়ি থেকে বেরোবেন না। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে এই রকম দিন কেউ কখনও দেখবেন ভাবেননি। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সেটি প্রথম পদক্ষেপ ছিল ভারত সরকারের। জনতা কার্ফুর ঠিক দু’দিন পর ঘোষণা হয়েছিল লকডাউনের কথা। তার আগে লকডাউন হয়নি, বরং লকআউট কিছুটা পরিচিত যা ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবহার হয়েছে বিভিন্ন প্রতিবেদনে— জুট মিল বা কারখানার সঙ্গে। আর লকডাউনের বাকি পর্ব সকলেরই কম বেশি জানা…
করোনাভাইরাসের প্রকোপ রয়েছে এখনও। বলা হচ্ছে হয়তো সামনের দিনে চতুর্থ ঢেউ আসতে পারে ভারতের মতো অনেক দেশেই। কিন্তু গড়পড়তা মানুষ এখন অনিশ্চয়তাকে চিনে নিয়েছেন। সেই ‘জনতা কার্ফু’ ছিল প্রথম চিহ্ন, যা নতুন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়েছিল মানুষকে। তবে লকডাউন শুধু ভারতে নয়, সব দেশেই বলবৎ হয়েছে। ভারত এই দীর্ঘ লকডাউনের মধ্যে দেখেছে অনেক মৃত্যু, পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রাণ হাতে করে ফিরে আসার অসহ্য পরিস্থিতি, মানুষের কাজ হারানো, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অক্সিজেন সংকট আর অবশ্যই দেশ জুড়ে নৈরাশ্য। দু’টি বছর সবার জীবনেই বন্ধ হওয়া ঘড়ির মতো কেটেছে। যাঁরা সামনে থেকে কাজ করেছেন— যেমন ডাক্তার, নার্স, পুলিশ এবং বিভিন্ন সমাজকর্মীরা, প্রত্যেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন এবং অনেকেই এই লড়াইয়ে হার মেনেছেন।
কার্ফু শব্দটির মধ্যে যুদ্ধের গন্ধ আছে, কিছুটা বারুদেরও বটে! তবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইটা অনেকটাই অন্য রকম। অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই নেহাৎ সহজ নয়। এই ভাইরাস কোনও ল্যাবরেটরিতে বানানো কি না, সেটা অন্যরকম সত্যি বা মিথ্যে। কিন্তু জনতা কার্ফু থেকে নতুন সময় শুরু হয়েছে, বদলে গিয়েছে জীবনের অনেকটাই। দিনের পর দিন প্রধানমন্ত্রী টিভিতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছেন আর রোববার করে রেডিয়োতে, অনেক কিছুর প্রথম লকডাউন পর্বে দেখেছে ভারত।
জনতা কার্ফুর দিন সন্ধ্যা ৫টা নাগাদ সমস্ত নাগরিকদের অতিমারির সময়ে সেবা সরবরাহ কারীদের প্রশংসা বা অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য নিজের দরজা, জানলা বা বারান্দা থেকে হাততালি বা ঘণ্টা বাজানোর কথা বলা হয়েছিল সবাইকে। অনেকেই প্রতিবাদ করেছিলেন, অনেকেই উপহাস। পক্ষে বা বিপক্ষে আলোচনা বা সমালোচনা শেষ হওয়ার নয়।
ভবিষ্যতে যদি করোনা বা অন্য কোনও কারণে আবার জনতা কার্ফু ঘোষণা করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে ভারতীয়রা মানিয়ে নিতে পারবেন তো?
অতীতের অভিজ্ঞতা অবশ্যই দুর্মূল্য হয়ে থাকবে প্রতিটি ভারতীয়র কাছে।