ক্লাসের ফাঁকে, ক্যান্টিনে বসে পেট ভরে পিজ্জা, বার্গারে নিষেধাজ্ঞা। আর এইসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারবেন না পড়ুয়ারা। খেতে হবে সুষম খাদ্য। সমস্ত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ জারি করেছে। নির্দেশের আওতায় ইউজিসি তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্যান্টিনে জাঙ্ক ফুড তৈরি করতে বারণ বলেছে। আইসিএমআর রিপোর্টের বরাত দিয়ে, কলেজ পড়ুয়াদের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াই নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
কী বলা হয়েছে আইসিএমআর রিপোর্টে
প্রকৃতপক্ষে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এর একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে স্থূলতা এবং ডায়াবেটিস ভারতে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি চারজনের একজন স্থূলতা বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি ইন পাবলিক ইন্টারেস্ট, সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিষিদ্ধ করে স্বাস্থ্যকর খাবার প্রচারের জন্য অনুরোধ করেছে।
প্রসঙ্গত, এটিই প্রথম নয়, ইউজিসি এই বিষয়ে নির্দেশিকা আগেও জারি করেছে। এর আগে ২০১৬ ও ২০১৮ সালেও কমিশন একই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছিল। কমিশনের পুরনো পরামর্শগুলিতে, ইউজিসি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে, তাঁদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ানোর বিষয়টি প্রচার করতে বলেছিল। তখন সেভাবে কাজ হয়নি। তাই এবার ফের একবার ফাস্ট ফুড নিষিদ্ধ করার নোটিশ জারি করেছে ইউজিসি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রির নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে এবং ক্যান্টিনে স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্পগুলি প্রচার করার জন্য এইচইএলএস আবারও অনুরোধ করা হয়েছে।
জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অপকারিতা
আমাদের স্বাস্থ্যের উপর জাঙ্ক ফুডের প্রভাবকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। জাঙ্ক ফুড আমাদের শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এমন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে রয়েছে।
- স্থূলতা: জাঙ্ক ফুডের উচ্চ ক্যালরি, চর্বি এবং চিনির উপাদান ওজন বাড়ায়, হার্টের উপর চাপ দেয় এবং হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। স্থূলতা ছাড়াও, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার কারণে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি ফ্যাটি লিভার রোগের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- কম পুষ্টিতে ভোগা: জাঙ্ক ফুডে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব রয়েছে, যা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, পুষ্টির ঘাটতি এবং স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে পরিচালিত করে।
- হজম সংক্রান্ত সমস্যা: জাঙ্ক ফুডে প্রায়ই ফাইবার কম থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য , ফোলাভাব এবং বদহজমের মতো হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- ত্বকের সমস্যা: প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাবের কারণে প্রচুর পরিমাণে জাঙ্ক ফুডযুক্ত খাবার ব্রণ, প্রদাহ এবং অকাল বার্ধক্যের মতো ত্বকের সমস্যাগুলি দেখা যায়।
- দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়ে: জাঙ্ক ফুডে উপস্থিত স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং চিনি উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডে অবদান রাখে , হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি: অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, হতাশা, উদ্বেগ এবং দুর্বল স্মৃতিশক্তির জন্ম দেয়।
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: জাঙ্ক ফুড সেবন হরমোনের ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে ইনসুলিন প্রতিরোধ, হরমোনজনিত ব্রণ এবং অনিয়মিত মাসিক চক্রের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
- শিশুদের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব: শৈশবকালে নিয়মিত জাঙ্ক ফুড খাওয়া শারীরিক এবং জ্ঞানীয় বিকাশকে ব্যাহত করতে পারে, যা বৃদ্ধি, শেখার এবং আচরণকে প্রভাবিত করে।
- দাঁতের হাল বেহাল: চিনিযুক্ত, চর্বিযুক্ত জাঙ্ক ফুড দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির সমস্যা, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ-র কারণ হতে পারে।