অর্থনীতির অবস্থা দুর্বিষহ। শীর্ষ মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেও শান্তির চিহ্নমাত্র নেই। বর্তমান অর্থনীতির কারণে নতুন এমবিএ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এমনকি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল (HBS) এর মতো সুপরিচিত স্কুল থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েটরাও এই কঠিন চাকরির বাজারের মুখোমুখি হচ্ছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী হার্ভার্ডের ডেটা দেখলে রীতিমত চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। সে ডেটা দেখায় যে ২০২৪ সালের বসন্ত কাল থেকে অন্তত ২৩ শতাংশ এমবিএ গ্র্যাজুয়েট চাকরির আশায় বসেছিলেন।
কিন্তু ২০২৩ সালে এই বেকারত্বের হার ছিল ২০ শতাংশ। ২০২২ সালে ছিল ১০ শতাংশ। অর্থাৎ ধীরে ধীরে বেকারত্ব লাফিয়ে বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে ক্রিস্টেন ফিটজপ্যাট্রিক, যিনি এইচবিএস-এ ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট পরিচালনা করেন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেছেন, 'আমরা চাকরির বাজারের সংগ্রাম থেকে মুক্ত নই। হার্ভার্ডে গেলে আপনার জন্য এমন কিছু ভালো হয়ে যাবে না। চাকরির বাজারে নিজেকে ধরে রাখতে আপনার সঠিক দক্ষতা প্রয়োজন। যদিও হার্ভার্ড একাই এই সমস্যার মুখোমুখি, এমনটা নয়। স্ট্যানফোর্ড (Stanford), এবং নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি (NYU)-এর Stern School of Business-এর মতো অনেক শীর্ষ বিজনেস স্কুলও তাদের নতুন গ্র্যাজুয়েটদের ভালো চাকরি খোঁজার জন্য সংগ্রাম করতে দেখছে।
বিজনেস গ্র্যাজুয়েটদের জন্য এই অনিশ্চয়তার কারণ কী
ধীর অর্থনীতি এবং অফিসের চাকরির অনিশ্চয়তা এটিকে খুব প্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে, এমনকি সেরা স্কুল থেকে পাস করে বেরিয়ে আসা গ্র্যাজুয়েটদের জন্যও। সম্প্রতি এমবিএ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চাকরির বাজার সত্যিই কঠিন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথ স্কুল এবং নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কেলগ স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট তাদের বেকারত্বের হার বাড়তে দেখেছে। স্নাতক হওয়ার তিন মাস পরে, কেলগের এমবিএ গ্র্যাজুয়েটদের ১৩ শতাংশ এখনও চাকরি খুঁজছেন।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিজনেস গ্র্যাজুয়েটদের চাকরি পেতে সমস্যা হওয়ার একটি বড় কারণ হল প্রযুক্তি এবং কন্সালটিংয়ে সে দেশে চাকরির সুযোগ কম। ওদিকে অ্যামাজন, মাইক্রোসফ্ট এবং গুগলের মতো কোম্পানিগুলি চাকরি কমিয়ে দিচ্ছে এবং বিজনেস স্কুল থেকে কম কর্মীই নিয়োগ করছে। ম্যাককিন্সির মতো বড় কন্সালটিং সংস্থাগুলিও কম সংখ্যক এমবিএ গ্র্যাজুয়েট নিয়োগ করছে, যা এই বছরের গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চাকরি খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন করে তুলেছে।
বিজনেস গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির বাজারে ধস
উদাহরণস্বরূপ, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনুসারে, ম্যাককিনসে বুথ থেকে ২০২৪ সালে মাত্র ৩৩ জন এমবিএ গ্র্যাজুয়েট নিয়োগ করেছিল। অথচ আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৭১। এ প্রসঙ্গে, ইউভিএ ডারডেনের ক্যারিয়ার সেন্টারের সিনিয়র ডিরেক্টর জেনি জেনার বলেছেন, প্রযুক্তিগত নিয়োগে পতন বিশেষত স্পষ্ট। কোম্পানিগুলি ক্যাম্পাসে আসতে নারাজ। ওদিকে ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটি অফ ডারডেন স্কুলের ৩০ বছর-বয়সী রনিল ডিওরার মতো অনেক নতুন বিজনেস গ্র্যাজুয়েটদের জন্য, গত কয়েক মাসে চাকরির খোঁজাটা ছিল খুব হতাশাজনক অধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন যে সান ফ্রান্সিসকোতে নেটওয়ার্কিং ইভেন্টগুলিতে যাওয়ার সময় ১০০০টিরও বেশি চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন।
আরও পড়ুন: (প্রকাশিত হল IBPS PO Mains স্কোরকার্ড ২০২৪, কীভাবে দেখবেন?)
প্রসঙ্গত, বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে হার্ভার্ডের ফিটজপ্যাট্রিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে এই পরিস্থিতি সম্ভবত অব্যাহত থাকবে। যদিও আশা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। এই কঠিন সময়ে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য, হার্ভার্ডের মতো স্কুলগুলি সাহায্য করার জন্য নতুন উপায় খুঁজে নিচ্ছে। হার্ভার্ড একটি নতুন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুল পরীক্ষা করা শুরু করেছে যা চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে। চাকরির বাজারে টিকে থাকার জন্য চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে যদি কোনও দক্ষতা অনুপস্থিত থাকে, তাহলে তা উন্নত করার জন্য কোর্সের পরামর্শ দিতে পারে এই টুল। এমনকি, চাকরির ক্ষেত্রে স্কুলের কর্মকর্তারা চাকরিপ্রার্থীদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। ভাগ্যবশত যারা চাকরি পান, শুরুতেই তাঁদের গড় বেতন এখনও অনেকটাই বেশি, প্রায়ই ১৭৫,০০০ মার্কিন ডলারের বেশি।